সারদা সংস্থায় টাকা রেখে খোয়াতে হয়েছে। তাই আর ডাকঘর ছাড়া অন্য কোনও সংস্থায় সঞ্চয় করবেন না বলে ঠিক করেছেন খড়্গপুরের নিবারণ দাস। কিন্তু গত তিন মাসে একাধিক বার ডাকঘরে গিয়েও এনএসসি বা ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (জাতীয় সঞ্চয়পত্র) কিনতে পারেননি তিনি। ডাকঘর-কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন, এনএসসি শেষ। এখন ওই সার্টিফিকেট পাওয়া যাচ্ছে না।
শুধু খড়্গপুরে নয়, এই নেই-নেই অবস্থা রাজ্যের অধিকাংশ ডাকঘরেই। কয়েকটি ডাকঘরে মিলছে কম মূল্যের অর্থাৎ ১০০ এবং ২০০ টাকার কিছু এনএসসি। সেগুলো নিতে রাজি নন অনেকেই। হাওড়ার ব্যাঁটরা থানার ঘোষপাড়ার বাসিন্দা কল্যাণ পণ্ডিত তিন মাস ধরে ডাকঘরে ঘোরাঘুরির পরে সম্প্রতি সার্টিফিকেট কিনতে পেরেছেন। তিনি বলেন, “তা-ও পছন্দমতো সার্টিফিকেট পাইনি। কম মূল্যের সার্টিফিকেট কিনতে হয়েছে।”
বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির রমরমা আটকাতে ডাকঘরের ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের উপরে জোর দিচ্ছে সরকার। সুদ কম হলেও ডাকঘরের পাঁচ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্র কিনলে আয়করে ছাড় মেলে। অনেকেই সেই ছাড়ের সুযোগ নিতে চান। কিন্তু বারবার ডাকঘরে এই সঞ্চয়পত্র কিনতে গিয়ে পছন্দের বা বেশি মূল্যের সার্টিফিকেট না-পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাঁদের।
প্রতি বছর এ রাজ্যে প্রায় ৫০ লক্ষ বিনিয়োগকারী বিভিন্ন মূল্যের এনএসসি কিনে থাকেন বলে ডাকঘর সূত্রের খবর। কিন্তু এনএসসি-র পর্যাপ্ত জোগান না-থাকায় তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন। বিপাকে পড়েছেন ডাকঘরের এজেন্টরাও। ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের কেউ কেউ বিভাগীয় ডাককর্তাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগ জমা পড়েছে সিপিএমজি অফিসেও।
কেন এই অবস্থা?
ডাকঘর সূত্রের খবর, কত সংখ্যক এবং কত মূল্যের এনএসসি প্রয়োজন, রাজ্যের কয়েকশো উপ-ডাকঘর থেকে তার হিসেব হেড পোস্ট অফিসে পাঠানো হয়। রাজ্যে হেড পোস্ট অফিস রয়েছে ৫৭টি। তারা এই চাহিদা খতিয়ে দেখে পাঠিয়ে দেয় ডাকঘরের সেন্ট্রাল স্টোর্স বিভাগে। ওই বিভাগ থেকে বরাত যায় নাসিকে কেন্দ্রীয় সরকারের ছাপাখানায়। বরাত পাঠানোর পরে বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হয়। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। তাই এনএসসি-র অভাব দেখা দিয়েছে।
কিন্তু এমন অবস্থা আগে তো কখনও হয়নি! এ বার হল কেন?
ডাকঘরের পুরনো কর্মীরা জানাচ্ছেন, রাজ্যে মোটামুটি কত সার্টিফিকেট লাগবে, তার আগাম হিসেব কষে ঠিক সময়ে বরাত দিলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হত না। এ ব্যাপারে চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল ম্যানেজার (সিপিএমজি, বেঙ্গল সার্কেল) যশোবন্ত পণ্ডা বলেন, “আগের তিন বছর কোনও ডাকঘরে কত সার্টিফিকেট বিক্রি হয়েছে, তার গড় তৈরি করে এ-সব কাজ করতে হয়। তাতে অনেকটা সময় লাগে।” সিপিএমজি জানান, সব চেয়ে বেশি চাহিদা পাঁচ বছর মেয়াদি এনএসসি-র। সম্প্রতি দু’দফায় পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ সার্টিফিকেট তাঁদের হাতে এসেছে। কয়েক দিনের সেগুলি বিভিন্ন ডাকঘরে পাঠানো হবে। ১০ হাজার টাকা মূল্যের সার্টিফিকেট কিছু দিনের মধ্যেই ডাকঘরে পৌঁছবে। |