সারদা মামলার অন্যতম মূল অভিযোগকারী ও গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী অর্পিতা ঘোষ আদালতে হাজির না হওয়ায় মঙ্গলবার তাঁর সাক্ষ্য নেওয়া গেল না। তাঁর অসুস্থতার কারণে বিধাননগর এসিজেএম আদালতে এই মামলার শুনানি ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে গেল। এ দিনই কলকাতা হাইকোর্টে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের আর্জি সংক্রান্ত মামলায় গরহাজির ছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়। তিনি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি বলে আদালত সূত্রের খবর। বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানি হবে।
সরকার পক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি শেখর চক্রবর্তী এ দিন বিধাননগরের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট স্বাতী মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে সাক্ষীর গরহাজিরা নিয়ে একটি আবেদন জমা দেন। অর্পিতাদেবীর তরফেও একটি আবেদন পেশ করেন তিনি। তাতে নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে আদালতের কাছে কয়েক মাস সময় চেয়েছেন অর্পিতাদেবী। আবেদনের সঙ্গে একটি প্রেসক্রিপশনও ছিল। এর পাশাপাশি শেখরবাবু আদালতকে জানান, সাক্ষী পেটের গোলমালে ভুগছেন। চিকিৎসক তাঁকে দু’সপ্তাহ বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মানবিক কারণে তাঁকে ওই সময় দেওয়া হোক। সেই আর্জি মেনে প্রায় দেড় মাস পরে সাক্ষ্যের দিন স্থির করেছেন স্বাতী মুখোপাধ্যায়।
সারদা মামলায় এর আগে বিধাননগরের এই আদালতে দু’জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। কিন্তু সেই দুই সাক্ষী, বিমল গিরি ও উজ্জ্বল পালের সাক্ষ্যে কার্যত সরকার পক্ষই বিড়ম্বনায় পড়ে। কারণ এই দু’জনের বক্তব্যের যে লিখিত বয়ান সরকার পক্ষ জমা দিয়েছিল, তার সঙ্গে এজলাসে দেওয়া সাক্ষ্যের একাধিক অমিল।
এই মামলার তৃতীয় এবং মূল সাক্ষী সারদার একটি সংবাদমাধ্যমের কর্মী অর্পিতাদেবী। গত এপ্রিল মাসে তিনি সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে বেতন না দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর থানায়। তার ভিত্তিতেই কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে গ্রেফতার করা হয় সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে। অর্পিতাদেবীই গরহাজির থাকায় মামলাটির অগ্রগতি অনেকটাই ধাক্কা খেল বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।
অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা এবং সৌম্যজিৎ রাহা সাক্ষ্যগ্রহণ পিছোনোর বিরোধিতা করে আদালতে প্রশ্ন রাখেন, অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন কিংবা দেবযানী মুখোপাধ্যায় অসুস্থ থাকলেও তাঁদের হাজিরা স্থগিত হয়নি। এ ক্ষেত্রে আলাদা ব্যবস্থা হবে কেন?
অভিযুক্ত দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণবাবু আদালতে বলেন, “সাক্ষীর অসুস্থতা ও তাঁর চিকিৎসকের জ্ঞানের প্রতি আস্থা জানিয়েই বলছি, আমার মক্কেল দেবযানীও একই ভাবে অসুস্থ হয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও বাধ্যতামূলক ভাবে তাঁকে হাতে স্যালাইনের চ্যানেল লাগানো অবস্থায় পুলিশ আদালতে হাজির করিয়েছিল। এই ঘটনা এক বার নয়, একাধিক বার ঘটেছে।” ওই আইনজীবীর অভিযোগ, “মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী কি শুধু সাক্ষীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? অর্পিতাদেবীকেও আদালতে আসতে বাধ্য করা হোক। প্রয়োজনে আদালত সমন জারি করুক।” সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন, সাক্ষী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় সমন জারি করা যায় না। আদালতের বাইরে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, সারদা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারে সরকার পক্ষই বাধা দিচ্ছে। এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে সরকার পক্ষ।
সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিতে দিল্লির যন্তরমন্তরে এ দিন ধর্না শুরু করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। সরাসরি কংগ্রেসের পতাকায় নয়, রাজীব গাঁধী যুব কেন্দ্র-র ছাতায় এ দিন ধর্নায় বসেন প্রদেশ কংগ্রেসের সচিব সম্রাট তপাদার। পরে সেখানে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ যাদব। তৃণমূলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে কটাক্ষ করে বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে এঁদের কোনও কাজ নেই। তাই দিল্লিতে এসে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এঁরা যত বেশি এ সব করবেন, ততই মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। আগামী লোকভা ভোটে তার প্রতিফলন দেখা যাবে।” ধর্না মঞ্চে প্রদীপবাবু ও অন্য নেতারা অভিযোগ করেন, সারদা কাণ্ডে লোক দেখানো তদন্ত হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় লোপাট হল তার কোনও জবাব দিতে পারছে না রাজ্য সরকার। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের যে কোনও সদিচ্ছা নেই তা-ও পরিষ্কার। আর সেই কারণেই সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছে কংগ্রেস। তাঁদের প্রশ্ন, অসম এবং ত্রিপুরা সরকার যখন সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্ত চাইছে, তখন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার কেন উল্টো হাঁটছে?
|