বাম জমানায় শুরু হয়েছিল নির্মাণকাজ। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার জন্য উঠেছি দীর্ঘসুত্রীতার অভিযোগ। এর পরে রাজ্যে সরকার বদল হয়েছে। ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। রাজ্যে কোনও প্রকল্পের কাজ ফেলে না রেখে দ্রুত শেষ করার জন্য মন্ত্রীদের বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু নতুন সরকারের আড়াই বছরেও বসিরহাটে কাটাখালি উপর সেতুর কাজ যেখানে ছিল সেখানেই থমকে রয়েছে। ফের কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে শুধু এটুকুই জানা গিয়েছে যে, খড়্গপুর আইআইটি থেকে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমত সেতুর পিলারের ভার বহনের ক্ষমতা পরীক্ষা করার পরে কাজ শুরু হতে পারে।
একদিকে টাকি পুরসভা অন্যদিকে হাসনাবাদ পঞ্চায়েত। মাঝে বইছে কাটাখালি। তিন বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে নদীর উপরে সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়। খরচ ধরা হয়েছিল ২৫ কোটি টাকা। |
তদানীন্তন আবাসন ও কারিগরি ধফতরের মন্ত্রী গৌতম দেব এবং পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীকে পাশে নিয়ে সেতুর শিলান্যাস করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ২০১১-র বিধানসবা নির্বাচনে বামফ্রন্টকে হারিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ইতিমধ্যে কেটে গিয়ছে সাতটা বছর। বলাবাহুল্য সেতুর কয়েকটি স্তম্ভ ছাড়া আর কিছুই দেখেননি বসিরহাটের মানুষ। নতুন সরকার আসার পরে সেতুর কাজে গতি আনতে ২০১২ সালের মাঝামাঝি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পূর্ত ও সড়ক মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার হাসনাবাদে এসে ঘোষণা করেন এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করে সেতু দিয়ে যানচলাচল শুরু হবে। বলাবাহুল্য সেই প্রতিশ্রুতিও পালন করা হয়নি। উত্তর ২৪ পরগনায় দলের পর্যবেক্ষক রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সম্প্রতি বসিরহাটের রবীন্দ্রভবনে এসে ঘোষণা করেন ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সেতুর নির্মাণকাজ ফের শুরু হবে। কিন্তু এখনও তা ছিটোফোঁটাও নজরে পড়েনি খোনকার মানুষের। এই অবস্থায় সেতুর কাজ আর শুরু হবে কি না, বা সেতু আদৌ হবে কি না তা নিয়েই স্থানীয় মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। অথচ সুন্দরবন এলাকায় বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে সেতুটি তৈরি হয়ে গেলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। এলাকার মানুষ ছাড়াও সুন্দরবনে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা সরাসরি গাড়িতে নেবুখালি চলে আসতে পারতেন।
নির্দিষ্ট সময়ে সেতুর কাজ শেষ করতে না পারার জন্য বার বারই অভিযোগের আঙুল উঠেছে ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে। শুরু থেকেই মন্ত্রী কাছের লোককে বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ উঠেছিল নির্মাণকাজে নিম্নমানের জিনিসের ব্যবহার নিয়েও। এরই মধ্যে গত বছর অগস্ট মাসে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে এক মত্স্যজীবী নির্মীয়মাণ দু’টি পিলারের মাঝে বড়সড় ফাটল দেখতে পান। ‘নড়বড়ে’ পিলারের উপরে সেতু তৈরি হলে তা ভেঙে পড়তে পারে এই আশঙ্কায় চারপাশে হইচই শুরু হয়ে যায়। ফাটল পরিদর্শনে আসেন বিশেষজ্ঞরা, ওই পিলারের উপরে সেতু তৈরি করা যাবে কি না তা খতিয়ে দেখতে হাসনাবাদে আসেন মুম্বই ও খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা। পিলার তৈরির সময় গাফিলতির কারণেই এই অবস্থা বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৪০ মিটার লম্বা দুই লেনের সেতুর একপাশে ৩০০ এবং অন্যপাশে ৩২৪ মিটার করে রাস্তার পরিকল্পনা রয়েছে। রাস্তা-সহ সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৬৪ মিটার। যার বেশিরভাগ কাজই বাকি। সেতু না হওয়ার জন্য নৌকা করেই সাধারণ মানুষ থেকে রোগীদের নিয়ে পারাপার করতে হয়। সময়ে হাসপাতালে পৌঁছতে না পারার কারণে রাস্তায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুরোপাধ্যায় বলেন, “বাম সরকারের আমলে বরাত পাওয়া ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে সেতুর কাজ সুষ্ঠুভাবে না হওয়ায় দুই পারের মানুষেরই প্রচণ্ড অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী নজরে আনার পরে সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করতে তিনি আরও ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। তা সত্ত্বেও ঠিকাদারের কাজের গাফিলতিতে পিলারে চিড় ধরায় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন নতুন পিলার ঘিরে ‘জ্যাকেটিং’ করতে হবে। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।” বসিরহাট মহকুমা পূর্ত ও সড়ক দফতরের সহকারী বাস্তুকার রানা তারাং বলেন, “হাসনাবাদ সেতুর কাজ যাতে দ্রুত শুরু করা যায় সে জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।”
|
