ইতালির ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম নায়ক ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগে পুলিশি তদন্তের সামনে পড়লেন! ইনি প্রাক্তন এ সি মিলান এবং ইতালি দলের সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার গাটুসো।
গাটুসো ছাড়া আরও চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিন বছর আগে ইতালীয় লিগ অর্থাৎ সেরি এ-র ম্যাচ গড়াপেটার সঙ্গে জড়িত তাঁরা। ইতালীয় ফুটবল অনেক দিন যাবতই ম্যাচ গড়াপেটা, বেআইনি বেটিং এবং অপরাধমূলক কাণ্ডে জর্জরিত। কিন্তু কখনও এত বিশাল মাপের কোনও ফুটবলারের বিরুদ্ধে গড়াপেটার অভিযোগ ওঠেনি। তিনটি বিশ্বকাপ খেলা এবং দু’বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী গাটুসো সেই চরম লজ্জাও দিলেন ইতালীয় ফুটবলকে।
সামনের মাসেই ছত্রিশ বছরে পা দিতে চলা গাটুসো ইতালীয় ফুটবল থেকে গত বছর অবসর নেওয়ার পর ফরাসি লিগে সিয়ন-এর ম্যানেজার-কাম-প্লেয়ার হিসাবে যোগ দেন। কিন্তু রেফারির সঙ্গে ঝামেলায় জড়ানোয় ক্লাব তাঁকে সাসপেন্ড করে। ইতালিতে ফিরে সেরি বি-র দল পালেরমো-র ম্যানেজার হলেও ছ’টা ম্যাচে দু’টো জেতায় সেখানেও চাকরি হারান। এ বার তাঁর বিরুদ্ধে ২০১০-১১ মরসুমে সেরি এ-তে গড়াপেটার অভিযোগ। |
গত দু’বছর ধরে চলা ইতালীয় ঘরোয়া ফুটবলে গড়াপেটার তদন্তে এখন অবধি ৫০ জন গ্রেফতার হয়েছেন। মঙ্গলবার অন্যতম তদন্তকারী অফিসার রবার্তো দি মার্টিনো বলেছেন, “গাটুসোর সঙ্গে প্রাক্তন লাজিও প্লেয়ার ক্রিস্টিয়ান ব্রোচি-ও তিন মরসুম আগে সেরি এ এবং নীচের ডিভিসন লিগের কয়েকটা ম্যাচ গড়াপেটার দায়ে অভিযুক্ত। গাটুসো বাদে বাকি চারজনকেই পুলিশি জেরার জন্য আটক করা হয়েছে।” স্থানীয় ইতালীয় সংবাদ সংস্থা আবার জানাচ্ছে, গাটুসো এবং ব্রোচির বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং খেলার মাঠে জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ।
যদিও গাটুসো এই অভিযোগে নাকি সম্পূর্ণ অবাক! তাঁর এজেন্ট আন্দ্রেয়া জি’অ্যামিকো বলেছেন, “গাটুসোর এই খবরে আকাশ থেকে পড়ার উপক্রম ঘটেছে। আমাদের মধ্যে এই প্রসঙ্গে কথা হয়েছে। ও মিলানে বাড়িতে ফিরে আসছে। আমরা গোটা ব্যাপারটা নিয়ে শান্ত থাকব এবং ধৈর্য ধরে দেখব তদন্তের জল কোথায়, কত দূর গড়ায়। তার পর গাটুসে যা পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে। যদিও কারও বিরুদ্ধে শুধুমাত্র তদন্ত চলা মানেই সে দোষী এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। আমরা জানি গাটুসোর বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যে। মানুষ বিখ্যাত হলে খুব সহজ তাকে টার্গেট বানিয়ে তার নাম মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া। এবং গাটুসো গত দশকের ইতালীয় তথা বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা প্লেয়ার।”
|
‘কীর্তিমান’ নায়ক |
• বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসাবে স্বীকৃত গাটুসো-র ট্যাকলকে বিশ্ব ফুটবলে সবচেয়ে জোরালো এবং তীক্ষ্ম মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
• ২০০০-’১০ এগারো বছরে ইতালির হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ, দু’টি ইউরো কাপ, একবার করে কনফেড কাপ ও অলিম্পিক খেলেছেন। ৭৩ ম্যাচে ১ গোল। দু’হাজার ছয় বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইতালির মাঝমাঠে পির্লোর সঙ্গে গাটুসোর অসাধারণ কম্বিনেশন আজুরিদের কাপ জয়ের বড় কারণ।
• ১৯৯৯-২০১২ তেরো বছরে এ সি মিলানের হয়ে দু’টো করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও সেরি এ জেতেন।
• ২০০৩ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আয়াখস ম্যাচে ইব্রাহিমোভিচের মুখে ঘুসি মেরে সাসপেন্ড।
• ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে জেতার পর মাঠের সেন্টার লাইনে প্যান্ট খুলে আন্ডারওয়্যার পরে দৌড়ে ফিফার রোষে পড়েন।
• ২০১১ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টটেনহ্যাম কোচ জর্ডানকে ম্যাচের পর সাইডলাইনে থুতনি দিয়ে ঢুঁসো মেরে নির্বাসিত।
• ২০১২ সুইস লিগে সিয়ন-এর ম্যাচে রেফারির থেকে হলুদ কার্ড কেড়ে নিয়ে পরে অঙ্গভঙ্গি করে ফেরত দেন।
• চলতি মাসেই ফুটবল প্রশাসনে মেয়েদের আসা নিয়ে যৌন উস্কানি মূলক মন্তব্য করেন। এ সি মিলান ক্লাবের প্রশাসনে প্রেসিডেন্ট সিলভিও বারলুসকোনির মেয়ে বারবারা-র যোগদানই মন্তব্যের উদ্দেশ্য। |
|