রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকেরা। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার আমতার মুক্তিরচক গ্রামে। তৃণমূলের অভিযোগ, আমতা-১ পঞ্চায়েত সমিতির দুই কর্মাধ্যক্ষ-সহ তাঁদের জনা বেশ কয়েক জন নেতা-কর্মী বিজেপি ও সিপিএম সমর্থকদের হাতে প্রহৃত হয়েছেন। চারটি মোটরবাইক পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এক তৃণমূল সমর্থকের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। থানায় অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল। যদিও সিপিএম এবং বিজেপির দাবি, প্রকল্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত কিছু তৃণমূল কর্মী গ্রামবাসীদের কটূক্তি করেছিলেন। তার জেরেই গোলমাল বাধে। তৃণমূলের লোকজনই গ্রামবাসীদের উপরে চড়াও হয়। পাল্টা প্রতিরোধ করেন গ্রামবাসীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উলুবেড়িয়ার এসডিপিও শ্যামলকুমার সামন্তের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী গ্রামে যায়। নামানো হয় র্যাফ। ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। গ্রামে পুলিশ-পিকেট বসানো হয়েছে। |
গোলমালের পরে পুলিশের ধরপাকড়। মঙ্গলবার সুব্রত জানার তোলা ছবি। |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামটি আমতা পঞ্চায়েতের অধীন। এ বার ভোটে পঞ্চায়েতটি তৃণমূলের দখলে থাকলেও মুক্তিরচক গ্রামের দু’টি বুথে জিতেছেন নির্দল প্রার্থীরা। ওই দুই নির্দল প্রার্থী ছিলেন সিপিএম সমর্থিত। তাঁদের সমর্থন করেছিল বিজেপিও।
মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটে সকাল ৯টা নাগাদ। মুক্তিরচক দক্ষিণপাড়ায় গত পাঁচ দিন ধরে একশো দিনের প্রকল্পে একটি রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। দক্ষিণপাড়া গ্রামে রাস্তার কাজটি শুরু হওয়ার দিন থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-সিপিএম কর্মীদের বিবাদ বাধে। মাঝে মাঝে কাজ বন্ধও হয়ে যায়। সিপিএম এবং বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, তাদের এলাকা থেকে নির্বাচিত দুই পঞ্চায়েত সদস্যকে কিছু না জানিয়েই তৃণমূল নিজেদের দলের কর্মীদের দিয়ে কাজটি করাচ্ছে। এ সবের জেরে মঙ্গলবার সকালেও কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন আমতা-১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু ঘোষ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি কর্মাধ্যক্ষ সুশান্ত সাহা, আমতা পঞ্চায়েতের প্রধান বিমল রুইদাস, পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুখদেব মণ্ডল-সহ জনা কুড়ি তৃণমূল নেতা-কর্মী। গ্রামে ছিলেন সিপিএম এবং বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা।
তাঁদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের বাগবিতণ্ডা লেগে যায়। এরপরেই শুরু হয় মারপিট। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএম এবং বিজেপির লোকজন তাঁদের আটকে রেখে লোহার রড, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারেন। তৃণমূলের ওই নেতা-কর্মীরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আসেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। তারা আরও দুই তৃণমূল কর্মীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠায়।
এই গ্রাম থেকে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য বিবেকানন্দ গাইন বলেন, “আমাদেরকে অন্ধকারে রেখে কাজ করানোর ফলে ক্ষুব্ধ হয়েছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। তবে উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে বলে আমরা কোনও বাধা দিইনি। কিন্তু শুরু থেকেই তৃণমূলের লোকজন গ্রামবাসীদের কটূক্তি করছে, হুমকি দিচ্ছে। আজ নেতারা এসে গ্রামবাসীদের মারধরও করেন। তারই প্রতিবাদে গ্রামবাসীরা রুখে দাঁড়ান।”
নিজেকে সিপিএমের সমর্থক বলে দাবি করেও বিবেকানন্দ বাবুর বক্তব্য, “এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। দলমত নির্বিশেষে গ্রামবাসীরাই এর প্রতিরোধ করেছেন।” একই বক্তব্য স্থানীয় বিজেপি নেতা সুব্রত মণ্ডলেরও। অন্য দিকে, উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি বিশ্বনাথ লাহা বলেন, “কাউকে অন্ধকারে রেখে কাজ করা হচ্ছে না। স্থানীয় দুই পঞ্চায়েত সদস্যকে জানিয়েই কাজ হচ্ছে।” তাঁর দাবি, ওই গ্রামে বিজেপির কোনও সমর্থক নেই। সিপিএমের লোকজনই বিজেপির পতাকা কাঁধে নিয়ে কাজ বন্ধ করিয়েছে। আমতা পঞ্চায়েতের প্রধান বিমল রুইদাস বলেন, “উন্নয়নের কাজ করছি। কিন্তু সিপিএম প্রথম থেকে বাধা দিচ্ছে। এ দিন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গেলে আমাদেরও মারধর করেছে।” তৃণমূলের দাবি, দুই কর্মাধ্যক্ষ-সহ মোট ২০ জন আহত তৃণমূল সমর্থককে প্রথমে আমতা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫ জনকে পরে এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, আহতের সংখ্যা ১০-এর বেশি নয়। |