অসম থেকে মালদহে সক্রিয় কেএলও
লফার ধাঁচে চারটি পৃথক ‘স্কোয়াড’ গড়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ব্যবসায়ী, ঠিকাদারকে অপহরণ, খুনের হুমকি দিয়ে তোলা আদায় করতে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। অসম থেকে মালদহ অবধি সক্রিয় হয়েছে তারা। এখনও পর্যন্ত পুলিশের হাতে ছ’টি স্পষ্ট অভিযোগ এসেছে। সব মিলিয়ে ৬ জনের কাছ থেকে অন্তত ১ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রের খবর। পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের অনুমান, এর বাইরেও আরও ১০ জন ব্যবসায়ীকে কেএলও জঙ্গিরা টেলিফোন করে টাকা দাবি করেছে। তবে ভয়ে, আতঙ্কে অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ এখনও জমা পড়েনি বলে মনে করছে পুলিশ।
গত দু’ মাসে প্রায় ১ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য মরিয়া কেএলও। মূলত মায়ানমারে প্রশিক্ষণ শিবির চালানো এবং উত্তর পূর্বাঞ্চল থেকে অস্ত্র কেনার জন্যই ওই টাকা সংগ্রহের চেষ্টা হচ্ছে। চারটি স্কোয়াডকে সামনে রেখে টাকা সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংগঠন ভাইস চেয়ারম্যান টম অধিকারী এবং অন্যতম কম্যান্ডার হিরণ্য রায়কে। টম নেপালে আশ্রয় নিয়ে থাকলেও হিরণ্য নিম্ন অসমে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন। এই দুই জন সরাসরি ব্যবসায়ী, ঠিকাদারদের টেলিফোন করে টাকা দাবি করেছেন।
গত দু’মাসে আচমকা কেএলও-র তত্‌পরতায় উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর। কলকাতার নির্দেশে গোটা বিষয়টি নিজে দেখভাল করছেন রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি শশীকান্ত পূজারি। তাঁর নির্দেশে পুলিশ, গোয়েন্দা দফতর এবং সিআইডিকে নিয়ে দুটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে। শিলিগুড়িকে কেন্দ্র করেই দল দুটি দল কাজ শুরু করেছে। আইজি বলেন, “কেএলও টাকা আদায়ে সক্রিয় বলে স্পষ্ট খবর রয়েছে। উত্তরবঙ্গ এবং লাগোয়া এলাকা থেকে কেএলও জঙ্গিরা ওই টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে। কেএলও রুখতে দুটি বিশেষ দল তৈরি হয়েছে।” গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলা থেকেই প্রথম কেএলও টাকা আদায়ের চেষ্টা শুরু করেছে। সম্প্রতি দিনহাটা চৌপথির এক ব্যবসায়ী ছাড়াও এক পূর্ত দফতরের ঠিকাদারের কাছে টাকা দাবি করা হয়। তুফানগঞ্জের এক কলেজ শিক্ষক এবং এক রেশন তথা ইটভাটার মালিকের কাছে টেলিফোনে টাকা চাওয়া হয়। এই চারটি ঘটনার পর ছাগলিয়া এলাকার ধর্মকাটার মালিক এবং আলিপুরদুয়ারের এক বড় মাপের রেলের ঠিকাদারের কাছে টাকা দাবি করা হয়েছে। টেলিফোনে বলা হয়েছে, টাকা দেওয়া না হলে অপহরণ, খুন করা হতে পারে। জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং মালদহ জেলার কয়েক জন ব্যবসায়ী এবং ঠিকাদারদের ফোন করা হয়েছে বলে পুলিশ জেনেছে।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, প্রতিটি স্কোয়াডে অন্তত ৬-৭ জন করে প্রশিক্ষিত জঙ্গি রয়েছে। হিরণ্য এবং টমকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁরা জানান, কোকরাঝাড়, ধুবুরি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারকে নিয়ে একটি জোন তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এখনও অবধি যে কটি টেলিফোন করা হয়েছে প্রতিটিই করা হয়েছে মোবাইল থেকেই। কিন্তু টেলিফোন করার পর হয় সিমকার্ড নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। না হলে টেলিফোনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ এবং গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকার নানা লোকের নামে ওই সিমকার্ডগুলি কেনা হয়েছে।

কেএলও-র কাণ্ড
• ১৯৯৯ নভেম্বরে শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকায় রেলের টাকা লুঠ। জুলাইয়ে চা বাগান মালিক অপহরণ
• ২০০১-এর অক্টোবরে ডুয়ার্সের আর এক চা বাগান মালিক অপহরণ
• ২০০৩ ডিসেম্বরে জলপাইগুড়ির ব্যবসায়ী অপহরণ ও খুন
• ২০০৪ মার্চ জলপাইগুড়ির বাংলারঝাড়ে দুই ব্যবসায়ী খুন
• ২০০৭ ফেব্রুয়ারি ধুবুরির পাট ব্যবসায়ীর অপহরণ
• ২০১০ জানুয়ারি মালদহের ব্যবসায়ী অপহরণ
• জুন মাসে জলপাইগুড়ি জেলার পেট্রাল পাম্প থেকে টাকা লুঠ


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.