|
|
|
|
নেপালে নির্বাচনে নিশ্চিহ্ন মাওবাদীরা চিন্তা ভারতের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৭ ডিসেম্বর |
জঙ্গল থেকে এক বার বেরিয়ে এলে, আবার অস্ত্র হাতে ফিরে যাওয়া জঙ্গি সংগঠনের পক্ষে সহজ নয়। আবার নির্বাচনে কোণঠাসা হয়ে যাওয়া প্রাক্তন জঙ্গি সংগঠনও কিন্তু কম বিপজ্জনক নয় কোনও রাষ্ট্র বা তার প্রতিবেশীদের পক্ষে। নেপালে বিধান পরিষদের ভোটে প্রায় মুছে যাওয়া মাওবাদীদের সম্পর্কে এই দু’টি দিক ভাবনায় রেখেছে ভারতকে।
নতুন সংবিধান রচনা ও অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য প্রশাসন চালানোর দায়িত্ব কাদের হাতে যাবে, সেই প্রশ্নে নেওয়া ভোটে এ পর্যন্ত যে ফল বেরিয়ে এসেছে তাতে তিনটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এক, নেপালি কংগ্রেস এবং সিপিএন (ইউএমএল) একযোগে অন্তর্বর্তী সরকার গড়তে পারে। দুই, সবক’টি বড় রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যে গড়া হতে পারে সরকার, যা দ্রুত সংবিধান রচনার কাজটি শেষ করতে পারে। তিন, সরকার গড়া নিয়ে মতবিরোধের জেরে সংবিধান রচনার প্রক্রিয়া আরও পিছিয়ে যেতে পারে। বাড়তে পারে রাজনৈতিক অস্থিরতা।
মাওবাদীরা ইতিমধ্যেই পথে নেমে বিক্ষোভ শুরু করেছে রিগিংয়ের অভিযোগ তুলে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে সেটা অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয়। তবে নির্বাচনে মানুষের সমর্থন না পেয়ে কোণঠাসা মাওবাদীদের কট্টর অংশ ফের জঙ্গলে ফিরে না গেলেও মরিয়া হয়ে নাশকতার পথ নিতে পারে। মাওবাদীরা যে তাদের সব অস্ত্র সমর্পণ করেনি, এ ব্যাপারেও সুনিশ্চিত তথ্য রয়েছে ভারতের কাছে।
এই তৃতীয় সম্ভাবনাটিই বেশি ভাবাচ্ছে নয়াদিল্লিকে। বিদেশ মন্ত্রক বরাবরই বলে আসছে, ভারতের নিজের স্বার্থেই নেপালে সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত একটি স্থিতিশীল সরকার থাকা খুবই জরুরি। সাউথ ব্লকের এক কর্তার কথায়, “নেপালে অস্থিরতা তৈরি হলে, সে দেশের ভঙ্গুর পরিস্থিতি সামলাতে পারবে না দুর্বল সরকার। পাকিস্তান ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনও এর সুযোগ নিতে চাইবে। ভারত-বিরোধী কাজকর্মে আখড়া হয়ে উঠতে পারে নেপাল। ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ খোলা সীমান্ত রয়েছে যে দেশের, সেখানে এই পরিস্থিতি আদৌ কাম্য নয়।”
এই পরিস্থিতিতে মাওবাদীদের পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের উপরে তাই বাড়তি নজর রাখছে নয়াদিল্লি। ১৯৯৬ থেকে এক দশক ধরে নেপালে মাওবাদী এবং সরকারের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত পনেরো হাজার মানুষ। সশস্ত্র আন্দোলনের পথ ছেড়ে যখন শান্তিপূর্ণ বোঝাপড়ার মাধ্যমে মাওবাদীরা নির্বাচনে যোগ দিলেন, নেপালের মানুষের মধ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের আশা জেগেছিল। ভোটে মানুষের সমর্থন না পাওয়ায় সেই আশা এখন প্রশ্নের মুখে।
ভারত মনে করছে, এই অধোগতির কারণ, মাওবাদীদের গত কয়েক বছরের রাজনৈতিক আচরণ। দীর্ঘদিন নেপালে সংসদীয় গণতন্ত্রের ময়দানে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের থেকে মাওবাদীরা আলাদা কিছু করতে তো পারেই-নি, বরং বিভিন্ন জেলায় লুঠতরাজ চালিয়েছে। তাদের ক্যাডারদের পুনর্বাসনের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়নি।
মূল সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে মতপার্থক্য হয়েছে জঙ্গল থেকে আসা, শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করা মাওবাদী ক্যাডারদের। গত পাঁচ বছরে অন্তত পাঁচ জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বেড়েছে অস্থিরতা। সর্বাধিনায়ক পুষ্পকুমার দহল ওরফে প্রচণ্ডর নেতৃত্ব ও জীবনযাপন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের ভিতরে-বাইরে। দলের কমরেডরাই প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁর বিলাসবহুল জীবন নিয়ে।
মানুষের বিশ্বাস খোয়ানোর ছবিটা ভোটে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে মাওবাদীদের অবস্থা নিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বলেন, “জঙ্গল থেকে এক বার বেরিয়ে এসে নাগরিক স্বচ্ছন্দ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার পর, আবার সেই কঠোর জীবনে ফিরে যাওয়া খুবই সমস্যার। জীবনযাপন পুরোটাই পাল্টে গিয়েছে মাওবাদী নেতা ও ক্যাডারদের। কিন্তু এটাও সত্য যে মাওবাদী ক্যাডাররা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিতরে এলেও, পুরোপুরি অস্ত্র সমর্পণ করেনি। মাওবাদীদের সেই কট্টর ও কোণঠাসা অংশটিই দিল্লির মাথাব্যথার কারণ।” |
|
|
|
|
|