|
|
|
|
বিজেপির ঐক্যের মঞ্চেও সেই অনৈক্যের চোরাস্রোত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
১৭ ডিসেম্বর |
একই মঞ্চে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত ও বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী। উপলক্ষ আডবাণীর ব্লগগুলিকে সম্মিলিত করে ভাগবতের হাত দিয়ে তিনটি বই প্রকাশ। চরম ব্যস্ততার মধ্যেও আডবাণীর বই প্রকাশের জন্য দিল্লি ছুটে এসেছেন ভাগবত। শুধুমাত্র প্রবীণ নেতার অনুরোধে। মঞ্চে ও দর্শকাসনে হাজির তাবড় বিজেপি নেতাদের সামনে নিজের বক্তৃতায় আডবাণীর ভূয়সী প্রশংসাও করলেন ভাগবত। যা কারও কারও মতে, ঐক্যের নিখুঁত ছবি। কিন্তু সেই ঐক্যের আড়ালে টানাপোড়েনের চোরাস্রোতও দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। কারণ, এই অনুষ্ঠানেই পরোক্ষে ভাগবত বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, ভবিষ্যতে আডবাণীকে সক্রিয় নেতা নয়, দলের অভিভাবকের ভূমিকাতেই তাঁরা দেখতে চান। ক্ষমতায় এলে তাঁর নেতৃত্বে সরকার গড়া নয়, কাজে লাগাতে চান তাঁর অভিজ্ঞতা। কিন্তু আডবাণীর আপত্তি থাকলেও নরেন্দ্র মোদী প্রশ্নে পিছু হটা সম্ভব নয়।
আজ আডবাণীর বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে ভাগবত ছিলেন প্রধান অতিথি। সভাপতিত্ব করেন সুষমা স্বরাজ। সদ্য নির্বাচন জিতে আডবাণীর টানে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও ছুটে আসেন (ঘটনাচক্রে, মোদী নিয়ে আডবাণীর পাশাপাশি মোদী-শিবরাজের আপত্তিও ছিল সুবিদিত)। এ ছাড়া ছিলেন বাবা রামদেব। আর দর্শকাসনে প্রায় গোটা বিজেপি শিবিরই। অরুণ জেটলি, যশোবন্ত সিংহ, নিতিন গডকড়ী, মেনকা গাঁধী, বরুণ গাঁধী থেকে শত্রুঘ্ন সিন্হা, স্মৃতি ইরানি। বিজেপির বাইরে কুলদীপ বিষ্ণোই এমনকী নবীন পট্টনায়কের দলের নেতা জয় পণ্ডাও ছিলেন। আর ভাগবতের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন সঙ্ঘের আরও দুই শীর্ষ নেতা ভাইয়াজি জোশী এবং সুরেশ সোনি।
এ হেন চাঁদের হাটে আডবাণী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, এ যাবৎ যা যা করেছেন, তা অন্তরাত্মার কথা শুনেই করেছেন। তাতে বিরোধীরা তো বটেই, নিজের দলও অনেক সমালোচনা করেছে। আডবাণীর কথায়, “প্রথম যখন যাত্রায় বেরোই, তখন অনেকে উগ্র হিন্দু অ্যাখ্যা দিয়েছেন। আবার পাকিস্তান সফরের সময় (যখন জিন্না-প্রশস্তি করেন) বলা হয়, বিচারধারার বিরুদ্ধে গিয়েছি। কিন্তু আমি সব সময় নিজের অন্তরাত্মার আওয়াজই শুনেছি। ভুল হলেও সেটাই করেছি।” এ কথা বলতে বলতেই আডবাণী বারংবার বুঝিয়ে দেন, তিনি আদৌ বৃদ্ধ হননি। আশি পেরিয়েও তাঁর সুস্থতার রহস্য এখনও লোকে জানতে চায়।
আডবাণীর পরেই বলতে ওঠেন ভাগবত। মোদী নিয়ে আডবাণীর প্রবলতম বিরোধিতাকেও নিরস্ত্র করেছিলেন যিনি। ভাগবত বলেন, “আমি সরসঙ্ঘচালক হতে পারি। কিন্তু আডবাণী আমার থেকেও বয়োজ্যেষ্ঠ। উনি যখন ব্লগে দলের কার্যশৈলী সম্পর্কে শাসন করেন, তখন তার পিছনে রোষ থাকে না। বরং উদ্বেগই থাকে। নিজের স্বার্থের বদলে দেশের স্বার্থকেই তিনি প্রাধান্য দেন তিনি।” আগামী পাঁচ বছর আডবাণীর দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগানোর কথাও বলেন ভাগবত। সরসঙ্ঘচালক সরাসরি সরকার গড়ার কথা না বললেও ‘আগামী পাঁচ বছরের’ প্রসঙ্গ তুলে তিনি মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে সরকার গড়াই বোঝাতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সম্প্রতি চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটে সাফল্যের পরে মোদীর অবদান নিয়ে টুঁ শব্দ করেননি আডবাণী। শুধু শিবরাজ, রমন সিংহ, বসুন্ধরা রাজে-দের কৃতিত্ব দিয়েছেন। আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজেপির নেতাদের মতে, ভাগবতও এ বার তাঁর প্রশস্তির মোড়কে আডবাণীকে বুঝিয়ে দিলেন, দল তাঁকে এখন কোন ভূমিকায় দেখতে চায়। বুঝিয়ে দিলেন, সমর্থকদের দাবিতেই মোদী তাঁদের ঘোষিত প্রার্থী। সেখান থেকে পিছু হটা যাবে না। বরং সরকার গড়তে পারলে আডবাণীর অভিজ্ঞতা ও পারদর্শীতা কাজে লাগবে। কিন্তু আডবাণীও আজ যে ভাবে ‘বৃদ্ধ হইনি’ বলেছেন, তার অন্য তাৎপর্য দেখেছেন কেউ কেউ। বিজেপির অনেকেই মনে করেন, লোকসভা ভোটের পর যদি সরকার গড়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যা না থাকে এবং শরিক নির্ভরতা বাড়ে, সে ক্ষেত্রে মোদীর বদলে আডবাণীও গ্রহণযোগ্য মুখ হতে পারেন। যে কারণে বিভিন্ন দলের সঙ্গে তিনি সমান্তরাল ভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতেই স্পষ্ট বার্তা দিলেন সঙ্ঘপ্রধান। এবং দিলেন আডবাণীর মঞ্চকে ব্যবহার করেই। |
|
|
|
|
|