নিজস্ব সংবাদদাতা • সিউড়ি ও খয়রাশোল |
অ্যাসিড-কাণ্ডের জের মিটতে না মিটতেই দুই নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল জেলায়।
সোমবার সন্ধ্যায় সিউড়ি থানা এলাকায় নাবালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্ত গ্রামেরই এক যুবক। ঘটনার পর থেকেই সে পালিয়েছে। মঙ্গলবার মেয়েটির পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মদন মুর্মু নামে ওই অভিযুক্তের খোঁজ শুরু করেছে। সোমবারই নাবালিকাকে সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দিকে মঙ্গলবারও তার ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ায় পুলিশের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী স্থানীয় একটি গির্জা থেকে একাই বাড়ি ফিরছিল। অভিযোগ, পথেই ওই যুবক চাদর দিয়ে মেয়েটির হাতমুখ বেঁধে পাশের একটি মাঠে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। মেয়েটির সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে সুইচ অফ করে দেওয়া হয়। তারপর অভিযুক্ত তাকে ধর্ষণ করে খোলা আকাশের নীচে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। মেয়েটির দাদা বলেন, “আসন্ন বড়দিনের জন্য কয়েক জনের সঙ্গে আমার বোনও গির্জা পরিষ্কার করার কাজ করছে। ঘটনার দিন ও সেখানেই গিয়েছিল। রাত ৮টা নাগাদ গির্জা থেকে এক জন এসে বোনের খোঁজ করে। তাঁর কাছ থেকে জানতে পাই, পরিষ্কার করার জন্য বাড়ি থেকে একটা জিনিস আনতে সে ঘণ্টা খানেক আগে গির্জা থেকে বেরিয়েছিল। অনেক ক্ষণ পার হওয়ার পরেও সে গির্জায় না পৌঁছনয়, তিনি বোনের খোঁজে বাড়িতে আসেন।” এর পরেই ওই পরিবার দুশ্চিন্তায় পড়েন। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে তাঁরা বোনের খোঁজ শুরু করেন। রাত ৯টা নাগাদ বাড়ির খানিকটা দূরে ওই মাঠে অচৈতন্য অবস্থায় ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়। রাতেই তাকে সিউড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বোনের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরেই তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হন। মেয়েটির দাদা জানায়, পুলিশে লিখিত অভিযোগ করা হলেও ঘটনার পরেই মদন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ছিল। ফলে এ দিনও তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। এ দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে নির্যাতিতা বলে, “গির্জার খুব কাছেই আমাদের বাড়ি। জরুরি কাজে বাড়ি ফেরার পথেই মদন মুর্মু পিছন দিক থেকে আমার মুখ চেপে ধরে। মোবাইল কেড়ে নিয়ে বন্ধ করে দেয়। আমারই চাদর দিয়ে আমার হাতপা বেঁধে দেয়। তারপর মাঠে নিয়ে গিয়ে আমার উপরে অত্যাচার চালায়। ওর কঠিন শাস্তি চাই।” নাবালিকার দাবি, এর আগেও গ্রামের ছেলে মদন তাকে নানা ভাবে উত্যক্ত করত। বিয়েরও প্রস্তাব দিয়েছিল। তাতে রাজি না হওয়ায় সে দেখে নেওয়ার হুমকি দিত বলে মেয়েটি জানিয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, আক্রোশ থেকেই মদন এই কাজ করেছে। এ দিকে, নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়ার প্রসঙ্গে হাসপাতাল সুপার অসিত বিশ্বাস বলেন, “থানা থেকে রিকুইজেশন আসতে দেরি হওয়ায় ডাক্তারি পরীক্ষা করা যায়নি।” আজ, বুধবার তা হবে।
অন্য দিকে, জল খাওয়ার নাম করে ঘরে ঢুকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি খয়রাশেলের পাঁচড়া-ময়ূরাক্ষী এলাকার। গত ১০ ডিসেম্বরের ঘটনা হলেও রবিবার বিকেলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার দুবরাজপুর আদালতে ওই ছাত্রীর গোপন জবানবন্দি নেওয়ার কথা ছিল। বিচারক আগামী ২৬ ডিসেম্বর ফের দিন দিয়েছেন। কিশোরীটির বাবার অভিযোগ, “স্ত্রী গরু বাঁধতে বাইরে গিয়েছিল। সুযোগ বুঝে পাড়ার ওই যুবক ঘরে ঢুকে আমার মেয়ের সর্বনাশ করে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তের পরিবারের লোকেরা ক্ষমা চেয়ে ওই ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। তাই মেয়ের মান-সম্মানের কথা ভেবে প্রথম দিকে চুপ করেছিলাম। কিন্তু পরে বুঝতে পারি, এটা ওই পরিবারের সময় কাটানোর ছল। তা ছাড়া, আমার মেয়েও এতে রাজি না হওয়ায় আইনের রাস্তায় গিয়েছি।” পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগ হওয়ার পরেই ওই ছাত্র পালিয়েছে। তার খোঁজ চলছে। অভিযুক্ত ওই যুবকের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যায়নি।
|