আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিরোধী বিএনপি-জামাত জোটের সঙ্গে আর কোনও সমঝোতায় যেতে রাজি নয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগ। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের আজ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতার আর কোনও সুযোগ নেই। এ দিকে, কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরোধিতা করে পাকিস্তানের সংসদে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করানোয় পাক হাইকমিশনারকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন টানাপোড়েন শুরু হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে রাষ্ট্রপুঞ্জের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্ডেজ তারানকোর দৌত্যের পরে এ পর্যন্ত তিন দফা বৈঠকে বসেছে শাসক ও বিরোধী দল। শেষ বৈঠকে বিএনপি যে প্রস্তাব আওয়ামি লিগ নেতৃত্বের হাতে তুলে দেয়, তাতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্ত হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার ইস্তফার কথা বলা হয়েছিল। নির্বাচনী সরকারের বিকল্প প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি, সংসদের স্পিকার ও এক বর্ষীয়ান আওয়ামি লিগ নেতার কোনও এক জনকে বসানোর প্রস্তাবও দিয়েছে বিএনপি। কিন্তু রবিবারই সরকারের এক মন্ত্রী আনন্দবাজারকে জানিয়েছিলেন, বিএনপি-র এই শর্ত তাঁদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরিও ফোনে ইস্তফা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনাকে। কাদের মোল্লার ফাঁসি রদের পক্ষেও সওয়াল করেন কেরি। কিন্তু ওই মন্ত্রীর কথায় হাসিনা কেরিকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, দুটি প্রস্তাবের কোনওটিই মানা হবে না। শাসক দলের অনড় অবস্থানের পরে আলোচনা প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। |
কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি। |
এর পরে যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের আজ এক অনুষ্ঠানে বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতার আর কোনও সুযোগ নেই। সমঝোতা হলে হবে পরের নির্বাচনের জন্য। আরও ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, “ইতিমধ্যেই ১৫৪ আসনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। সরকার জনাদেশ পেয়ে গিয়েছে। এখন আর কীসের সমঝোতা? বিরোধীদের অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আসুক বা না-আসুক, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হচ্ছে।” তা হলে আলোচনা প্রক্রিয়া? মন্ত্রী বলেন, “এর পরে আলোচনা চালালে চলবে। তবে সমঝোতা হলে তা হবে পরের নির্বাচনের জন্য।” বর্ষীয়ান আওয়ামি লিগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও আজ বলেন, “কীসের জন্য হরতাল-অবরোধ করছেন বিরোধীরা? সরকার তো আওয়ামি লিগের হাতেই চলে এসেছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগেই তো আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে গিয়েছি!”
এর মধ্যেই সোমবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে নিন্দাপ্রস্তাব নিয়ে একাত্তরের এই ঘাতককে নিরপরাধ ও দেশপ্রেমিক বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ৪২ বছর আগের ক্ষতকে জাগিয়ে না-তুলে ফাঁসির আসামি সব জামাত নেতাকে ‘সমঝোতার মাধ্যমে’ মুক্তি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ঢাকাকে। একমাত্র পাকিস্তান পিপল্স পার্টি (পিপিপি) এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ছাড়া শাসক পিএমএল, বিরোধী তেহরিক-ই-ইনসাফ, জমিয়তে উলেমা ইসলাম-সহ সব দল নিন্দা প্রস্তাবটি সমর্থন করেন।
তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতা ইমরান খানের দাবি, “কাদের মোল্লা নিরপরাধ ও দেশপ্রেমিক ছিলেন।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি খান বলেন, “বাংলাদেশ হওয়ার আগে কাদের মোল্লা ছিলেন পাকিস্তানের অকুণ্ঠ সমর্থক। তাঁর ফাঁসিতে প্রতিটি পাকিস্তানি শোকার্ত।”
বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এ দিন সকালেই সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে পাকিস্তানের এই আচরণকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বিরোধী বলে বর্ণনা করে। তিনি বলেন, এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট পাকিস্তান এখনও একাত্তরের নীতি থেকে সরেনি। তথ্যমন্ত্রী বলেন, “দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চালিয়ে যাওয়া হবে। শাস্তিও কার্যকর করা হবে।” এর পরেই বিকেলে পাক হাই কমিশনারকে ডেকে পাঠিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানান বিদেশমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলি। বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে নিরপেক্ষ বিচার করে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে গণহত্যা ও ধর্ষণের এক আসামিকে। এ নিয়ে পাকিস্তানের কিছু বলার থাকে না।
|