এই প্রথম ভারতকে পাশে পাওয়ার বার্তা দিল বাংলাদেশে কোণঠাসা জামাতে ইসলামি ।
ধানমণ্ডির একটি বাড়িতে বসে জামাতে ইসলামির অ্যাসিস্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুর রজ্জাক জানালেন, “ভারতে আমাদের নেতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে। সেখানকার সরকার বা সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোনও সুযোগই পাওয়া যায় না। আমেরিকা-ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও, নয়াদিল্লি আমাদের জন্য দরজা বন্ধ করে রেখেছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের খাতিরে সমস্ত বিষয় নিয়ে আমরা ভারতের সঙ্গে কথা বলতে চাই।” রজ্জাকের কথায়, “ভারতে যাওয়ার জন্য গত পাঁচ বছর ধরে এখানকার হাই কমিশনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। কিন্তু কোনও সাড়া পাইনি।”
দলের প্রধান (আমির) মতিউর রহমান নিজামি, সেক্রেটারি জেনারেল আলি আহ্সান মুজাহিদ-সহ চার-চার জন শীর্ষ নেতা একাত্তরে মানবতা-বিরোধী আপরাধের আসামি। এখন তাঁরা জেলবন্দি। বিচার এড়াতে বাকিরা অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। জামাতের মুখপাত্র হিসেবে এখন যিনি কাজ করছেন, সেই আব্দুর রজ্জাক (যিনি কাদের মোল্লার আইনজীবীও ছিলেন) তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এমন একটি সময়ে এই বার্তা দিচ্ছেন, যখন বাংলাদেশ জুড়ে চলা সন্ত্রাস ও নাশকতার পুরোভাগে রয়েছে জামাতেরই কর্মীরা! বিএনপি-জামাত জোটের পিছনে পশ্চিম বিশ্বের অনেক দেশের মদত থাকলেও নয়াদিল্লি তাদের জন্য দরজা বন্ধ রেখেছে। ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে জামাত একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ নয়াদিল্লির দাবি, জামাত নেতৃত্বের জঙ্গি-সংস্রবের হাজার-একটা প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। তবে ভারতে সন্ত্রাস পাচারের অভিযোগ মানতে নারাজ রজ্জাক। তাঁর কথায়, “এ সব অপপ্রচার।”
ঘটনা হল, ধারাবাহিক হিংসার মধ্যেও বিরোধী-শূন্য ভাবে পরবর্তী সরকার গঠন আওয়ামি লিগের কাছে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। নতুন সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ হবে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা ও রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ আন্তর্জাতিক মহলকে পাশে পাওয়া। জামাত-বিএনপি জোটও মরিয়া হয়ে দেশ অচলের পথে নেমেছে। আমেরিকা বা ইউরোপকে পাশে পেলেও আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত যে এখনও তাদের দূরের দেশ সে কথা স্পষ্ট। তবে আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতের ভূমিকা অস্বীকার করা জামাতের পক্ষেও এখন আর সম্ভব নয়। বিশেষত, সরকার যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দ্রুত যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসি দেওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীকে জামাত-বিরোধী অভিযানেও নামানোর। সাতক্ষীরায় ইতিমধ্যেই এই অভিযান শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে বগুড়া, জয়পুরহাট, নীলফামারি, চট্টগ্রাম, রাজশাহিতেও এই অভিযান হবে।
আদালতের নির্দেশে রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়েছে জামাতের। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা যে খুবই অসুবিধায় পড়েছেন, রজ্জাকের কথাতেই তা স্পষ্ট। তাঁর অভিযোগ, “কোথাও ১৫ জন মিলে বৈঠক করলেই পুলিশ গ্রেফতার করছে। ইসলামি বইপত্রও সঙ্গে রাখা যাচ্ছে না। কোথাও অনুষ্ঠান করতে পারছি না।” কিন্তু নাশকতার অভিযোগ অস্বীকার করতে পারছেন না এই জামাত নেতা। রজ্জাকের কথায়, “দলের যুবশক্তিকে কখনও কখনও আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। কিন্তু বাংলাদেশের পুলিশ ঠিকমতো আচরণ করলেই হিংসা কমবে। আর নির্বাচনের নামে প্রহসন চললে, আন্দোলনও চলবে।”
তবে ভারতের কাছাকাছি আসার জন্য যতই বার্তা দিন রজ্জাক, হাসিনা সরকারের কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁর দল এখনও ভারতকেই দোষারোপ করে চলেছে। নিজেদের মুখপত্রে জামাত এমন অভিযোগও তুলছে এই সরকারকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে উপনিবেশ বানানো ভারতের লক্ষ্য। ভারত-বিরোধী জিগিরের এ বিষয়টি অস্বীকার করেননি রজ্জাক। তবে তাঁর যুক্তি, ভারতের কাছে প্রত্যাশা না-মেটারই ফলশ্রুতি এই সব অভিযোগ। বড় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের কাছে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক।
|