ওরা যেন মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে। বোমা ছুঁড়ে বাসে আগুন লাগিয়ে আবার হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। ওরা, জামাতে ইসলামির দলবল।
ভারত-বাংলাদেশ বণিক সভার একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এসে দেখছি, এটাই যেন আতঙ্কের প্রধান রিং টোন। শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাস ছুটছে বনানীর দিকে। যদিও দীর্ঘদিন বাদে হিংসা আর আতঙ্ককে কিছুটা পকেটে পুরে আজ রাস্তায় নেমেছে ঢাকা। ৪৩তম বিজয় দিবস উদ্যাপন শুধু মাত্র সোহরাওয়ার্দি উদ্যানেই আটকে নেই। রাস্তা, শপিং মল, ফুড কোর্ট সর্বত্রই সুসজ্জিত মানুষ। অনেক দিন পর মন ভাল করার একটা উপলক্ষ পেয়ে তাকেই যেন আঁকড়ে ধরেছেন ঢাকাবাসী। শহরের পরিচিত যানজটও ফিরেছে কয়েক সপ্তাহ পর। কিন্তু আতঙ্কের মেঘ কাটছে কই?
আজকের এই উৎসবের আবহাওয়ার আয়ু যে মাত্রই কয়েক ঘণ্টা, তা খোলাখুলিই মেনে নিচ্ছেন এখানকার মানুষ। নিজেরাই বলছেন, কাল থেকে ফের আতঙ্কের চাদরে মুড়ে যাবে ঢাকা। আজ কি বিজয় দিবস বলে ছাড় দিয়েছে জামাতে? “মোটেই না। সবাই ভয় নিয়েই বেড়িয়েছেন,”বলছিলেন গাড়ির চালক শামসুল হুদা। তা ছাড়া আজকের দিনকে সফল করতে ব্যবস্থা হয়েছে অভূতপূর্ব নিরাপত্তার। আগেও বেশ কয়েক বার বাংলাদেশে আসার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে এমন দুর্গ-শহর হয়ে উঠতে কখনও দেখিনি ঢাকাকে! শামসুলের কথায়, “কুড়ি দিন পর গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামলাম। প্রতি ১০০টা গাড়ির মধ্যে গড়ে অন্তত ২০টা গাড়ি ওরা জ্বালিয়ে দিচ্ছে!” |
মানুষের হাতে হাতেই তৈরি হল জাতীয় পতাকা। ঢাকায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে। ছবি: এএফপি। |
সরকারি তরফে বিজয় দিবস সফল করতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি অবশ্য নেই। আঁটোসাঁটো নিরাপত্তার মধ্যেই হাজার হাজার মানুষের সম্মেলন সোহরাওয়ার্দিতে। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’চলছে উদ্যত মেশিনগানের প্রহরায়! আসলে এই বিজয় দিবসটির জন্যই বোধহয় অপেক্ষা করছিল হাসিনা সরকার। এখানকার বাতাসে বাড়তি যে গুনগুন কানে এল, তা হল, আগামীকাল থেকে শুরু হবে পাল্টা আক্রমণ। অর্থাৎ, জামাতের এক তরফা মারের বদলে র্যাব এবং পুলিশকে কাল থেকে বেশি সংখ্যায় মাঠে নামানো হবে। সোজা কথায়, এ বার যা শুরু হবে, তা হল যেন তেন প্রকারে ৫ তারিখ নির্বাচন করার জন্য এক রকম গৃহযুদ্ধ। এর মধ্যেই অবশ্য বিনপি সোমবার জানিয়েছে, নির্দল তদারকি সরকারের দাবি মানা না হলে কাল থেকে ফের ৭২ ঘণ্টা হরতাল শুরু করবে তারা। রাজনীতিবিদদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় যে ‘কঠোর অবস্থান’ নেওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন, তারই প্রতিফলন এ বার দেখতে চলেছে বাংলাদেশে। কাল থেকেই হেলিকপ্টারে টহলদারি শুরু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া সাতক্ষীরায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে কাল গ্রেফতার করেছে ১৬ জনকে। ঢাকার বাইরে সন্ত্রাস আজও অব্যাহত। সাতক্ষীরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন পাঁচ জন।
বাংলাদেশের ঘটনায় যে পশ্চিমি দুনিয়া যে অসন্তুষ্ট, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গেল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেওয়া অবস্থানে। এই পরিবেশে বিজয় উৎসব অযৌক্তিক এই যুক্তিতে আজ সকালের উৎসবে যোগ দেননি ইইউ-র প্রতিনিধিরা। আমেরিকাও যে হাসিনার পদক্ষেপ ভাল চোখে দেখছে না, সে ইঙ্গিত ভারতকে কূটনৈতিক স্তরে দিয়েছে তারা। কিন্তু তাণ্ডবের সামনে মাথা নোয়াতে নারাজ হাসিনা। ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪টি আসনে জিতে বসে রয়েছেন আওয়ামি লিগের প্রার্থীরা। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, হাসিনার পদত্যাগ করে ভোটে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।
|