যত্রতত্র পড়ে আবর্জনা। গড়াগড়ি খাচ্ছে প্লাস্টিক। জমে রয়েছে আগাছা। ভগ্নদশা আশপাশের পার্কেরও।
শীতে রাজ্যের ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম গন্তব্যস্থল মাইথনে এখন চোখে পড়ে এমনই নানা দৃশ্য। এ সবের ফলে পর্যটকদের আনাগোনা তুলনায় কিছুটা হলেও কমছে, মনে করছেন খোদ ডিভিসি-র আধিকারিকেরাই। তাই চলতি মরসুমে মাইথন জলাধারকে আকর্ষণীয় করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। ভ্রমণকেন্দ্রটির পরিচর্যায় হাত লাগিয়েছে বন দফতর ও সালানপুর ব্লক প্রশাসনও।
প্রতি বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত মাইথনে ভিড় করেন ভ্রমণার্থীরা। দেশের নানা প্রান্ত থেকেই লোকজন আসেন। সেই উপলক্ষে এই কয়েক মাস সেখানে বেশ কিছু অস্থায়ী দোকানপাট বসে। নৌকাবিহার করানোর জন্য নৌকা নিয়ে হাজির হন এলাকারই কিছু লোকজন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয়ের সংস্থান হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মাইথনে ভ্রমণার্থীদের আসা-যাওয়া অনেকটা কমে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাতে তাঁদের আয়ে ভাটা পড়েছে। এর কারণ জানতে চাওয়া হলে স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দাবি, কয়েক বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে মাইথন। যেখানে সেখানে আবর্জনার স্তূপ। জঙ্গল পরিষ্কার হয় না। নিরাপত্তারও অভাব রয়েছে। ভ্রমণকেন্দ্র হিসেবে পরিচর্যাই হচ্ছে না মাইথনের। ফলে, পর্যটকেরা মাইথন থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন বলে তাঁদের দাবি। |
মাইথন যে আগের জৌলুস খানিকটা হারিয়েছে, স্বীকার করছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষও। সংস্থার মাইথনের জনসংযোগ আধিকারিক বিজয় কুমার জানান, হাল ফেরাতে এ বছরই সেখানে একটি পর্যটন দফতর গড়া হয়েছে। নদী লাগোয়া অংশের সৌন্দর্যায়নের জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ঠিক মতো কাজ না করায় লিজের দায়িত্ব তাদের হাত থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিজয় কুমার বলেন, “আমরাই সেখানে সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু করেছি।” তিনি আরও জানান, সিদাবাড়ি এলাকায় জুবিলি পার্ক ও জলাধার লাগোয়া মিলেনিয়াম পার্কটিরও সংস্কার হবে।
ডিভিসি কর্তৃপক্ষ অবশ্য আবর্জনা ও দূষণ ছড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের একাংশকেই দায়ী করেছেন। তাঁদের দাবি, কিছু ব্যবসায়ী পলিথিন ব্যবহার করছেন। তাতে সৌন্দর্যায়ন ব্যাহত হচ্ছে। সংস্থার এক আধিকারিক জানান, তাঁরা ওই সব পলিথিন সরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা আর বিষয়টি নিয়ে এগোননি। তবে এ বার সব সমস্যা মিটিয়ে ফেলা হবে বলে বিজয় কুমারের আশ্বাস।
ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারাও মাইথনের সৌন্দর্যায়নে হাত দিয়েছে বলে জানিয়েছে বন দফতর ও সালানপুর ব্লক প্রশাসন। বন দফতরের তরফে আগাছা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাইথনে ডিভিসি-র এলাকার বাইরে যেটুকু অংশ রয়েছে তা সালানপুর ব্লকের মধ্যে পড়ে। ব্লক প্রশাসন জানায়, পর্যটক যাতায়াত বাড়লে এলাকাবাসী লাভবান হবেন, এ কথা ভেবেই তাঁরা কাজে হাত দিয়েছেন। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, ইতিমধ্যে ব্লকের আধিকারিকদের এলাকা সাফ রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পর্যটকের ঢল ফেরাতে কোমর বেঁধেছেন কর্তৃপক্ষ। আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। |