দুর্ঘটনার পরে কেন নেই অ্যাম্বুল্যান্স, প্রশ্ন বুদবুদে
নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। তবু সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বড় লরি, ডাম্পার। ধরপাকড় হয় না বললেই চলে।
দুর্ঘটনার খবর পেলেই পৌঁছনোর কথা অ্যাম্বুল্যান্সের। বড় দুর্ঘটনা ছাড়া তাদের দেখা মেলে না বললেই চলে।
নিয়ম ভাঙা রুখতে টহল দেওয়ার জন্য রয়েছে গাড়ি। তবু দ্রুত গতিতে সামনের গাড়িকে টপকে যাওয়া বা লেন ভাঙার সমস্যা চলছেই। ফলে, ঘটছে দুর্ঘটনাও।
জাতীয় সড়কে বারবার দুর্ঘটনা ঘটলেও এ রকম নানা অনিয়ম চলছেই বলে অভিযোগ গাড়ি চালক ও যাত্রীদের। দুর্ঘটনার পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের যে পরিষেবা ব্যবস্থা রয়েছে, তা-ও সব সময় ঠিক মতো কাজ করে না বলে অভিযোগ শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের।
সোমবার বিকেলে বুদবুদের কোটা মোড়ে জাতীয় সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে গাড়ি ধাক্কা মারায় মৃত্যু হয় কাঁকসার গোপালপুরের একই পরিবারের চার জনের। এক যাত্রীকে বের হাসপাতালে পাঠালেও গাড়িটি এমন ভাবে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল যে স্থানীয় বাসিন্দারা তো বটেই, পুলিশ গিয়েও বাকি চার যাত্রীকে উদ্ধার করতে পারেনি। শেষে থানায় নিয়ে গিয়ে যন্ত্র দিয়ে গাড়িটি কাটার পরে দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার গোপালপুরে চার জনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। জড়ো হয়েছিলেন হাজারখানেক মানুষ। জাতীয় সড়কের ধারে বেআইনি ভাবে লরি বা ডাম্পার দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে সরব হন অনেকেই। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে তা তাঁদের ‘ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর আওতায় পড়ে না।
সার দিয়ে দাঁড়িয়ে লরি। জাতীয় সড়কে আসানসোলের জুবিলি মোড়ে। —নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু কেন বড় দুর্ঘটনা সত্ত্বেও জাতীয় সড়কের অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছবে না, কেনই বা ক্রেন আনা হবে না তাড়াতাড়ি, প্রশ্ন তুলেছেন বুদবুদের বাসিন্দারা। সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় পড়া যাত্রীদের প্রাণে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে দাবি তাঁদের। রাস্তার পাশে লরি দাঁড় করিয়ে রাখা যে মাথাব্যথার কারণ, স্বীকার করেছে পুলিশ। কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল মহকুমায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে গত তিন মাসে ২১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের দাবি, তার বেশির ভাগই নিয়ম না মেনে যান চলাচলের জন্য। এসিপি (ট্রাফিক) তন্ময় মুখোপাধ্যায় জানান, বরাকরের ডুবুরডিহি, কুলটির চৌরঙ্গি, রানিগঞ্জ, রানিসায়র এলাকায় রাস্তার পাশে যানবাহন দাঁড় রাখার প্রবণতা সব চেয়ে বেশি। তবে পুলিশের বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রানিগঞ্জ এলাকা। এখানেই রাস্তা জুড়ে বেশির ভাগ বড় লরি দাঁড়িয়ে থাকে। দুর্ঘটনাও ঘটে বেশি। ট্রাফিক পুলিশের তরফে সমীক্ষার পরে জাতীয় সড়কের পাশে ট্রাক বে করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এসিপি তন্ময়বাবুর অভিযোগ, “জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে কিছু সুবিধার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব পড়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের উপর। কিন্তু তাঁরা তা করছেন না। উদ্ধারকারী গাড়ি থাকছে না। ফলে পুলিশকে সে কাজ করতে হচ্ছে।” তাঁর দাবি, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে একাধিক বার চিঠি দিয়েও ফল হয়নি। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ‘ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণ মন্ত্রকের হিসেবে, দেশের অন্যতম বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ২ নম্বর জাতীয় সড়কের পানাগড় থেকে বরাকর সেতু পর্যন্ত অংশটি। বছরে গড়ে ২০০টি দুর্ঘটনা ঘটে সেখানে। এ জন্য এই অংশে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স, দু’টি হাইওয়ে পেট্রোলিং গাড়ি ও দু’টি ক্রেন রয়েছে। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্সে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি সরানোর কাজে লাগে ক্রেন ও পেট্রোলিং গাড়ি। গাড়ি চালানোর সময়ে কোনও চালক নিয়ম ভাঙছেন কি না, তা-ও নজর রাখার কথা ওই গাড়ির। তবু দুর্ঘটনায় খামতি নেই জাতীয় সড়কে।
বছর তিনেক আগে প্রশাসনের তরফে দুর্ঘটনা এড়াতে দুর্গাপুর থেকে বরাকর পর্যন্ত জাতীয় সড়কে মোট ১৭টি আন্ডারপাস তৈরির প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। আসানসোলের সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, “কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণ মন্ত্রকের সঙ্গে আন্ডারপাস তৈরির ব্যাপারে কথা হয়েছিল। কিন্তু তা আজও হয়নি।” কেন হয়নি তা জানতে চেয়ে তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান।
তবে এখনই এ সব সমস্যার আশু সমাধানের ব্যাপারে কোনও আশ্বাস মেলেনি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে। সংস্থার এক আধিকারিক জানান, ইতিমধ্যে চার লেনের জায়গায় ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ছয় লেন করার প্রাথমিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে। এই ধরনের সমস্ত অসুবিধাগুলির কথা মাথায় রেখেই নতুন সড়কের প্রকল্প তৈরি হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.