সচিন নাকি আমার গান গুনগুন করেন

এই যে সচিন তেন্ডুলকরকে নিয়ে অ্যান্থেম-য়ে সুর দিলেন, তা তো বেশ জনপ্রিয় হয়েছে...

হ্যাঁ। আমি ভাবতেও পারিনি এই রকম একটা রেসপন্স হবে। এক বছর লেগেছিল ‘তেরে দিওয়ানি’-র ১ লক্ষ কপি বিক্রি হতে। মাত্র দু’সপ্তাহে এই সচিন অ্যান্থেম এক লক্ষেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে। আর সব থেকে ভাল ব্যাপার হল, সচিন নিজে আমার গান শুনতে ভালবাসেন।

তাই নাকি?
হ্যাঁ। মুম্বইয়ের এক হোটেলে সচিন আর ওঁর স্ত্রী-র সঙ্গে দেখা হয়েছিল। অঞ্জলি বলেন শুধু গান শুনতে নয়, সচিন নাকি আমার ‘সঁইয়া’ গানটা মাঝেসাঝে গেয়েও দেন।

মানে অঞ্জলিকে গেয়ে শোনান?
না, ওই সব আমি জিজ্ঞেস করিনি। এটুকু শুনেই আমি অভিভূত। অঞ্জলি এটা বলাতে সচিন বেশ লজ্জা পেয়ে যান। বলেন, উনি গানটা গুনগুন করতে ভালবাসেন। শুনেও বেশ ভাল লাগে। সচিন আমাদের শো-তে এসেছেন। ইচ্ছে আছে ওঁকে রেকর্ডিং স্টুডিয়োতে আমন্ত্রণ করার। আমাদের সঙ্গে উনি রেকর্ড করলে আমার দারুণ লাগবে।

শোনা যাচ্ছে নাকি হিন্দি সিনেমার আইটেম নাম্বারে সুর দিচ্ছেন!
হ্যাঁ, খবরটা ঠিক। ‘দেশি কাট্টে’ বলে একটা সিনেমার জন্য সুর দিচ্ছি আমি। তাতে রেখা ভরদ্বাজ আর হার্ড কউরকে দিয়ে আমি একটা আইটেম নাম্বার গাওয়াব বলে ঠিক করেছি।
ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে কৈলাস খের
কৈলাস খের মানে তো বেশ সুফি স্টাইলের গান। হঠাৎ আইটেম নাম্বারের দিকে ঢললেন কেন?
দেখুন, আইটেম নাম্বার সম্পর্কে আমাদের যা ধারণা, সেটা আমি পাল্টে দিতে চাই। লোকে ভাবে একটা সুন্দর মহিলার ছবি দিয়ে কিছু ‘চিজি’ শব্দ লিখে গান তৈরি করলেই আইটেম নাম্বার হয়ে যায়। আমি এই কনসেপ্টটাকেই উল্টে দিতে চাই। এমন কথা লিখেছি, যা বাবা-মা-বাচ্চারা একসঙ্গে বসে শুনতে পারেন। মেয়েদের আরও বেশি ‘এমপাওয়ার’ করার কথা ভেবেই এটা লেখা। আইডিয়াটা হল আমি তোমার মনোরঞ্জন করতে রাজি আছি। কিন্তু আমার আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে নয়। প্রয়োজন হলে আমি দুর্গা মূর্তি ধারণ করতে পারি। গানের কথাগুলো এ রকম: ‘দিল লায়ি হুঁ ধারি দো ধারি কা/ সারা খেল হ্যায় ঘড়ি দো ঘড়ি কা/ ঘুর ঘুর কিঁউ দেখে চৌধুরী/ ঘুঙ্ঘট উতার দুঙ্গি চৌধুরী।’ রেখা ভরদ্বাজ আর হার্ড কউর একদম ভিন্ন ঘরানার গায়িকা। তাঁদের দিয়েই এই ডুয়েটটা গাওয়াব ঠিক করেছি। শুধু এটা নয়, আরও একটা চমক আছে। রাহত ফতে আলি খান আর আমি একসঙ্গে একটা গান গাইব।

এর আগে তো ওঁর সঙ্গে কখনও ডুয়েট গাননি, তাই না?
না, এই প্রথম। বন্ধুত্বের গান। আমার প্রচুর ফ্যান আছেন পাকিস্তানে। রাহত আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয়। প্রথমে বলা হয়েছিল আমাকেই গানটা গাইতে। আমি ভাবলাম রাহতকে বলে দেখি। ও রাজি হয়ে গেল। দু’দেশের শিল্পীকে নিয়ে এই রকম বন্ধুত্বের গান রেকর্ড করতে পারলে আমার দারুণ লাগবে।

এক দশক ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। অনেক কিছুই তো পাল্টে গিয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। তবু টিকে রয়েছেন কী করে?
যত কিছুই পাল্টাক না কেন, আমাদের গানের চাহিদা কিন্তু কমেনি। কৈলাসা বা কৈলাস খের কিন্তু শুধুমাত্র ফিল্মের গানের ওপর নির্ভর করে থাকেনি। সব সময় চেয়েছি এমন কিছু করতে, যার লংজিভিটি থাকে। এটা কি জানেন যে ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে আজও আমাদের ‘সঁইয়া’ আর ‘তেরি দিওয়ানি’ গান দু’টো সব থেকে বেশি ডাউনলোড করা হয়? ওগুলো তো সিনেমার গান নয়। তবু কী দারুণ ইয়ুথ কানেক্ট। এই তো সে দিন একটা অল্পবয়সি ছেলেমেয়ের গ্রুপের সঙ্গে দেখা হল বেঙ্গালুরুতে। ওরা পড়াশুনো শেষ করে ‘আর্ট অব লিভিং’য়ের কোর্স করায়। ওরা বলল: ‘উই ক্রাই ইন হ্যাপিনেস, অ্যান্ড মেডিটেট হোয়েন উই লিসন টু ইয়োর সঙস্।’ এই সব কমেন্টগুলোই আমার পাওনা।

তবু কত তো গায়ক আছেন, যাঁরা আজকালকার মিউজিক সিনারিও নিয়ে বীতশ্রদ্ধ...
হ্যাঁ, আছেন। অনেকেই রেকর্ড লেবেলগুলোর নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন। কিন্তু আমি তা করি না। কারণ কী জানেন? আমি সব সময় সব কিছুর মধ্যে পজিটিভিটি খুঁজি। সারাক্ষণ যদি বলি এটা খারাপ, সেটা খারাপ, তা হলে কী উদাহরণ সেট করব আমি? লোকে বলবে আমি ফ্রাসট্রেটেড হয়ে এই সব বলছি। ইমোশনাল আউটবার্স্ট করছি। কিন্তু তা দিয়ে কি দুনিয়া পাল্টাবে? রেকর্ড লেবেল-এর যে নীতি তৈরি হবে, সেটা তো শিল্পীর আবেগ মাথায় রেখে তৈরি হবে না। তারা শুধুমাত্র বিক্রি দেখবে।

সেখানে এগোনোর উপায়টা কী?
আমি যখন সচিনকে নিয়ে অ্যান্থেমটা বানালাম, তখন একটা স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করেছিলাম। অস্ট্রেলিয়া থেকে একটা খুব ভাল টেকনিক্যাল টিম হায়ার করেছিলাম। ওরা এমন একটা সিস্টেম তৈরি করেছিল যে বস্তাপচা কোনও মোবাইল দিয়েও যদি কেউ আমার ওয়েবসাইটে যেত, তা হলে খুব সহজেই গানটা ডাউনলোড হয়ে যেত। দু’সপ্তাহ আমি গানটা ডাউনলোড করতে দিয়েছিলাম একদম বিনামূল্যে। তাতে মানুষ আমার গানটা শুনল। তাঁদের ভাল লাগল। এতেই তো গানটা ছড়িয়ে গেল। চিৎকার, চেঁচামেচি, সবাইকে অ্যাবিউজ না করে, এ ভাবেও তো কাজ করা যায়। আর তাতে লোকের কাছে পৌঁছনো যায়। শান্তিও থাকে।

তবু অনেক শিল্পীর জেনুইনলি বেশ দুঃখ হয় যে, ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল গায়কের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসছে বলে...
দশ বছর হল ইন্ডাস্ট্রিতে আছি। অনেক কিছু পাল্টেছে। আজকালকার ট্যালেন্ট হান্ট শো-তে গিয়ে বাচ্চাদের যখন জিজ্ঞেস করি কী চাও জীবনে, তখন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ওরা বলে ‘ফেমাস’ হতে চায়। কোনও কুণ্ঠা ছাড়াই স্বীকার করে যে, তারা জনপ্রিয়তা চায়। হয়তো কুড়ি জনের মধ্যে একজন বলে সে শিল্পী হতে চায়। এখন এস্টাব্লিশড্ আর নন-এস্টাব্লিশড্ সব গায়কের মধ্যে একটা কম্পিটিটিভ স্পিরিট দেখতে পাই। সাফল্যের কোনও ফর্মুলা হয় না। তবে এ কথা ঠিক যে এখন অনেক ক্ষেত্রে কনসেপ্টস কাজ করে। এনএইচ সেভেন উইকএন্ডার হল কলকাতায়। কী দারুণ লাগল শো করে। কোক স্টুডিয়োর মতো প্রোগ্রামও হচ্ছে টিভিতে। এক লিরিক রাইটারও এমন একটা হুক লাইন তৈরি করে দিতে পারে, যা দিয়ে গানটা বিশাল হিট হয়ে যাবে। হয়তো ওই হুক লাইনের সুরটা তাঁর মাথা থেকে বেরোল। বা ইউনিটের অন্য কারওর। এগুলো তো অ্যাকসেপ্ট করতেই হবে। এটাও আজকাল মেনে নিতে হবে যে অনেক এমন গায়ক আছেন, যাঁরা অত ট্যালেন্টেড না হলেও শুধুমাত্র মার্কেটিংয়ের জোরে জনপ্রিয় হচ্ছেন।

কিছু গায়ক এমনও আছেন যাঁরা আপনার সাফল্যকে কটাক্ষ করে বলেন যে আপনার গলাটা ট্রেন/বাসে ভিক্ষা করে রোজগার করার মতো...
(চুপ) এটা কোনও দিন শুনিনি।
তাঁরা আবার আপনার গলাকে ভেঙিয়েও দেখান এই বলে যে এই রকম গলাও ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয় হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের মতো সুরেলা গলার জায়গা হচ্ছে না ইন্ডাস্ট্রিতে...
ট্রেন/বাসে যাঁরা গান করেন, তাঁরাও তো শিল্পী। তাই ওই অপবাদটা আমার গায়ে লাগছে না। তবে এটুকু বলব যে শিল্পীদের জগৎটা বেশ ইনসিকিওর্ড। আমি বুঝতে পারি যে এই সব কমেন্ট হয়তো ইমোশনাল জায়গা থেকেই তাঁরা করেন। তাঁদের এটুকু বলতে চাই যে যদি তাঁদের যুক্তি মেনে আমি শুধু ট্রেন/বাসের যাত্রীদের মনোরঞ্জন করার উপযোগী হই, তা হলে তাঁদের এটাও জানা দরকার যে আমি কিন্তু প্রায় প্রতি সপ্তাহে টাইকুনদের জন্য কর্পোরেট শো-ও করে থাকি। লোকে অনেক কিছু ইনসিকিওরিটি থেকে বলতে পারে বা অন্য কোনও কারণে। আমাকে বুঝে নিতে হবে যে আমি কোনটা শুনব। কোন কমেন্টে বিচলিত হব না, সেটা আমাকেই বুঝে নিতে হবে। আমি এ সব না ভেবে বরং মনে রাখব সেই সব মানুষের কথা, যাঁরা বলেন আমার গলায় স্বর্গীয় সুর খুঁজে পান।

সাম্প্রতিক কালে সোনু নিগম আর সুনিধি চৌহান, শেখর সুমনের ‘হার্টলেস’ ছবির কনট্র্যাক্ট সই না করার জন্য বেশ বিতর্কে জড়িয়েছেন। আপনার এ বিষয়ে কী মত?
ওরা যে এই বেআইনি কনট্র্যাক্টের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, সেটাতে আমি খুব খুশি। এটা করার জন্য ওদের গলাটা প্রযোজক রিপ্লেস করে দিতে পিছপা হচ্ছে না। তবু ওরা এই কনট্র্যাক্টে সই করেনি। এই সাহস দেখানোর জন্য আমি ওদের কুর্নিশ জানাই।
যদি ৩০ বছর আগেই শিল্পীরা করতেন, তা হলে আমাদের এই নির্যাতন সহ্য করতে হত না।

এ কথা কেন বলছেন?
২০১২-তে আইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু মানছে কে? মিডিয়ার লোকেরা তো সে ভাবে সব কিছু জানে না। আমাদের দেশে আইনের নামে অনেক বেআইনি জিনিস চলে আসছে। এর ভিকটিম হচ্ছে শিল্পীরা। সত্যি কথা হল, আমাদের আজকাল লাইভ শো করে দিন চালাতে হয়। প্রাইভেট শো করতে হয়। বিয়েবাড়িতে গান গাইতে হয়। যদি কেউ ভুল করেও এটা না করে, তা হলে মারা যেতে হবে। অদ্ভুত ব্যাপার হল বিদেশে কিন্তু এ রকম নয়! ওখানে আর্টিস্টদের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস দেওয়া হয়। তাই একটা গান গেয়ে ওরা একটা দ্বীপ কিনে নিতে পারেন। জাহাজ কিনতে পারেন। আমাদের এখানে মান্না দে-র মতো গায়ককেও কত বয়সে শো করতে হয়!

এক সময় অণ্ণা হজারের জন্য গান গেয়েছিলেন। ইয়ুথ আইকন হিসেবে আপনার ৩ মিলিয়ন ফলোয়ার। রাজনীতিতে জয়েন করার কোনও অফার আছে?
(হাসি) আমি ইলেকশনে দাঁড়ানোর অফার পেয়েছি। এই তো সে দিন একটা পার্টি থেকে অফার এসেছিল। আমি হেসে বলি, “যে দিন আমার গান ভাল লাগবে না, জানাবেন। আপাতত এ সবে আমি নেই।”

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.