পরের ছবি! সিনেমাই করব কি না জানি না

কেমন আছেন? ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ কেমন জ্বলল?

ভালই তো শুনছি। এখনও তো চলছে ছবিটা। ফোর্থ উইক রানিং। আমার প্রযোজকরা খুশি।

শুনলাম চার সপ্তাহে ২ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে ছবিটা, কিন্তু এই ইন্টারভিউটা কিন্তু ‘আশ্চর্য প্রদীপ’-য়ের পোস্ট মর্টেম। বলুন তা হলে, হোয়াট ওয়েন্ট রং?
কিছু না তো। নাথিং ওয়েন্ট রং।

কী বলছেন! ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-য়ের সাকসেস তো রিপিট করতে পারলেন না?
দেখুন, সাকসেস শব্দটা কিন্তু ভীষণ আপেক্ষিক। আর আজ এত বছর পরে সাফল্য, সাকসেস এই শব্দগুলোর সেই রকম মানে নেই আমার কাছে। আর এটা তো আপনাদের মত যে ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ চলেনি। আপনারা একটা জাজমেন্ট পাস করছেন। ইউ আর পাসিং আ জাজমেন্ট।

আমরা কেন জাজমেন্ট পাস করতে যাব? দর্শকই তো বলছে ছবিটা ভাল হয়নি।
ছবিটা কিন্তু ফোর্থ উইক রানিং এবং আমার প্রযোজকরা খুব খুশি। আপনি তো বললেন প্রায় ২ কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে ছবিটা। সেটা ভাল না খারাপ, তা অবশ্য আমি বলতে পারব না। তবে প্রযোজকদের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হয়েছে বোধহয় সংখ্যাটা ভালই।

এটার তো একটা উল্টো দিকও রয়েছে। করোলারি। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছবিটা অনীক দত্ত যে এত ভাল বানিয়েছিলেন, তাঁর পরের ছবিটা কেমন হয়েছে সেটা একবার দেখতে তো লোক আসবেই। সেই থেকেই এই ২ কোটির ব্যবসা।
আই এগ্রি। কিন্তু ফোর্থ উইক অবধি কি এই একবার দেখতে লোকে আসে! নিশ্চয়ই ছবিতে কিছু আছে, যার জন্য ফোর্থ উইকেও লোকে ভিড় করছে হলে। শুধু নেগেটিভ রিপোর্ট থাকলে তো ফোর্থ উইক অবধি ভিড় হয় না।

আপনি পরিচালক হিসেবে আপনার ছবিকে ডিফেন্ড করতেই পারেন। দর্শকের তো সেই দায় নেই।
আমি পৃথিবীর শেষ মানুষ যে নিজের ছবিকে ডিফেন্ড করব। দর্শকের একটা অংশের ছবিটা ভাল লাগেনি। কিন্তু একটা অংশ রয়েছে, যারা ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ দেখে উচ্ছ্বসিত। তাদের মনে হয়েছে এই ছবিটা অনেক ম্যাচিওর্ড ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-য়ের থেকে। ছবিটা তাঁদের কত ভাল লেগেছে জানিয়ে তাঁরা আমাকে প্রচুর এসএমএস-ও পাঠিয়েছেন।

আপনাকে তো সবাই ভাল ভাল এসএমএস পাঠাবেই।
হ্যাঁ, অব্ভিয়াসলি আমার কাছে যে রিঅ্যাকশন এসেছে, সেগুলো বেশির ভাগই প্রশংসাসূচক। সেটাই ন্যাচারাল। তবে একটা কথা আপনাকে জানিয়ে রাখি, বহু বাঘা বাঘা লোকের কিন্তু ছবিটা দারুণ লেগেছে। আমি নেম ড্রপ করতে চাই না তবে তাঁরা লম্বা লম্বা এসএমএস-ও করেছেন আমাকে।

আমরাও নেম ড্রপ করতে চাই না কিন্তু বহু বাঘা বাঘা লোক আমাদেরও জানিয়েছেন, ছবিটা তাঁদের জঘন্য লেগেছে।
হ্যাঁ, জানি। এটার পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষ এসএমএস ছাড়াও হাতে লেখা চিঠিতে আমাকে জানিয়েছেন ছবিটা তাঁদের কত ভাল লেগেছে। কিন্তু একটা পোলারাইজেশন, একটা স্পষ্ট মেরুকরণ যে হয়েছে, সেটা পরিষ্কার।
তবে এ রকম রিঅ্যাকশন যে হবে, সেটা আমি জানতাম।
আপনি জানতেন?
হ্যাঁ জানতাম। এ রকম রিঅ্যাকশন না হলেই আমি অবাক হতাম। আর একটা কথা আপনাকে জানাই, গত দশ দিনের মধ্যে বহু নামী প্রযোজক আমাকে বলেছেন ছবিটা ভাল চলছে। এবং এই মানুষগুলো কিন্তু অথরিটি অন দ্য সাবজেক্ট। তাঁরা আমাকে বলেছেন ইফ ইউ ওয়ান্ট টু স্টার্ট, উই আর রেডি টু প্রোডিউস ইওর নেক্সট প্রজেক্ট। সুতরাং আপনি যা বলছেন, সেটা কিন্তু বক্স অফিসের কালেকশনের সঙ্গে মিলছে না। বাট আই এগ্রি, ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-য়ের সময় যে পাগলামি হয়েছিল, সেটা হয়নি এ বার।

একটা প্রশ্ন আপনাকে না করলেই নয়। এই ছবিতেও আপনি এক্সেসিভ ওয়ার্ড প্লে করেছেন, সেই অনবরত ‘পান’ রেখেছেন। অনীক দত্ত কি তা হলে নিজের পাতা ট্র্যাপেই পড়ে গেলেন এ বার?
আমি কিন্তু ‘আশ্চর্য প্রদীপ’-য়ে ‘পান’ অনেক কম করেছি। বহু জায়গায় হাই রাইমিংটাও টোন ডাউন করে দিয়েছিলাম। তবে এটা জানতাম, আমি যদি মিথোলজিক্যাল কী সায়েন্স ফিকশনও করি, ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-য়ের সঙ্গে এই জায়গায় তুলনাটা হবেই। সেটা ভেবেই কমিয়েছিলাম, কারণ আমার মনে হয়েছিল না কমালে সিনেমা ছেড়ে আমার জোকস বুক লেখা উচিত।

দর্শকের তাও এক্সেসিভ লেগেছে কিন্তু।
হ্যাঁ, বুঝতেই পারছি সেটা। কী বলুন তো, এই ছবিতে আমি দর্শককে প্রথম একটা ফিল গুড ওয়ার্কে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আর ঠিক যখন তারা সেই ওয়ার্ল্ডে কমফর্টেবল, তখন তাঁদের শক দিতে চেয়েছি। তবে ছবির শেষটা লেখার সময় আমার যে অস্বস্তি হয়নি, তা নয়। তবে এক শ্রেণির দর্শক কিন্তু এই অস্বস্তিটাকে আত্মস্থ করে ছবিটা ভালবেসে ফেলেছেন।

আপনাকে যদি আনন্দ প্লাস-এর জন্য ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ রিভিউ করতে বলা হত, তা হলে কত নম্বর দিতেন?
রিভিউতে নম্বর দেওয়ার পক্ষপাতী নই।

এটা তো হাইপোথেটিক্যাল সিচুয়েশন। বলুন না, কত দিতেন?
‘আশ্চর্য প্রদীপ’ কিন্তু সমালোচকদের রেটিংয়ে ৫ থেকে ৯-এর মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে। একটা কথা আছে না, দ্য ট্রুথ লাইজ সামহোয়ার ইন বিটুইন। এ ক্ষেত্রেও আমার তাই মনে হচ্ছে এবং আমি দু’টোর কোনওটাই সিরিয়াসলি নিই না। এই ছবিটার সময় মিডিয়ার একটা অংশের ব্যাপারে আমি কিছু কথা শুনে চমকে গিয়েছি। আমার পক্ষে সেই কথাগুলো বলা শোভা পায় না। কিন্তু এটুকু বুঝেছি রিভিউ নিয়ে সন্দিহান হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। আমি স্কেপটিক্যাল, রিভিউয়ের ব্যাপারে।

ছবি বানালেন আপনি, মিডিয়া খারাপ লিখলেই দোষ?
আমি ব্লেম করছি না তো মিডিয়াকে। মিডিয়া যে রেটিং দিয়েছে, তা আমি মাথা পেতে নিয়েছি। তবে কিছু ব্যাপার আমি জানতে পেরেছি। তাতে আবার বলছি রিভিউয়ের রেটিং নিয়ে আমি সন্দিহান। সোশাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলোয় দেখলে বোঝা যাবে, অনেক দর্শক এই মত পোষণ করেন। তাঁরাও ইকুয়ালি স্কেপটিক্যাল এই রিভিউগুলোর ব্যাপারে।

আপনারা ফিল্মমেকাররা যখন আপনাদের ছবি চলে, তখন কিন্তু এ সব কথা বলেন না। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-য়ের সময় কিন্তু বলেননি...
কে বলেছে আমি বলিনি?

শুনিনি সেই সময়। এটা একটা এজ ওল্ড ফর্মুলা, ছবির খারাপ রিভিউ বেরোলেই ডাল মে কুছ কালা...
আপনি না এই কথাটা পলিটিকাল পার্টির মতো বলছেন। মিডিয়া ভাল, না মিডিয়া খারাপ, কোনওটাই আমি বলছি না। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে খুব ইনসুলারও হয়ে গিয়েছি। কোনও দিনই ডিপ্লোম্যাটিক ছিলাম না, আজও নই। ডিপ্লোম্যাটিক হলে ছবি বানানোর জন্য এত দিন ওয়েট করতে হত না আমায়।

অনেকের ধারণা, ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-য়ের পর আপনি উড়ছিলেন। ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ আপনাকে আবার মাটিতে ফিরিয়ে আনল।
আমার মনে হয় না সেটা একেবারেই ঠিক। দেখুন, ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-য়ের সাকসেসের পর আমি একটু ঘাবড়েই গিয়েছিলাম। ওই ইউফোরিয়াটা আনরিয়েল ছিল। আমার জীবদ্দশায় বোধহয় আর সেটা হবে না। তবে তখনও আমি খুব একটা অ্যাফেক্টেড হইনি। আজও হই না। আর দেখুন, আমি বহু আপস অ্যান্ড ডাউনস দেখেছি। সেটা শুধু প্রফেশনাল নয়, পার্সোনাল লাইফেও দেখেছি। বহু আত্মীয়কে টার্মিনাল ডিজিজে আক্রান্ত হতে দেখেছি। আর এই বয়সে একটা সিনিসিজমও চলে আসে। তাই কোনও কিছুই আপনাকে সে রকম অ্যাফেক্ট করে না। তবে আমি খুশি এটা জেনে যে ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ বানানোর সময় আমি ফ্রিলি ব্যাট করেছি। আমি সেই রকমই খেলেছি, যেমন ভাবে আমি খেলতে চেয়েছি। আমি চান্স নিয়েছি এবং সেটা এনজয়ও করেছি। রিস্কও নিয়েছি বিস্তর। কিন্তু আজ আমি অ্যাডমিট করছি যদি এমন একটা সিচুয়েশন হয় যে দু’টো ছবি, ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ও ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ দেখার পর কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে আর একবার কোন ছবিটা দেখতে চাইবেন, তা হলে আমি ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-ই বলব।

আচ্ছা, পরের ছবি কী বানাচ্ছেন?
পরের ছবি! সিনেমা করব কি না আর জানি না। সত্যিই জানি না। একটাই জিনিস জানি, এটা বলে আপনি আমাকে থামতে দেবেন না।

ঠিক।
এখনও কিছু ঠিক করিনি। ‘আশ্চর্য প্রদীপ’-য়ের ধাঁচাটা শুনে মুম্বইয়ের একজন স্টার, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের পার্টনার এই ছবিটা হিন্দিতে বানাতে চেয়েছেন। এ ছাড়াও মুম্বইয়ের বেশ কিছু গণ্যমান্য লোক হিন্দিতে আমার সঙ্গে ছবি করতে চেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অ্যাক্টর টার্নড প্রোডিউসর রয়েছেন, ডিরেক্টর টার্নড প্রোডিউসর রয়েছেন। একটা ইন্দো-ইতালিয়ান প্রজেক্টের জন্যও আমাকে অ্যাপ্রোচ করা হয়েছে। কিন্তু কোনওটাই এখনও ঠিক নেই। আর আমি শুধু ছবি বানানোর জন্য ছবি বানাতে চাই না। বছরশেষের মধ্যে একটা ছবি নামাতে হবে এ রকম কোনও চাপ আমার নেই।

তা হলে কোনও ছবির প্ল্যানিং নেই?
একটা ছবি মাথায় ঘুরছে। সেটা একটা ‘হুডানইট’। এ ছাড়া আর কিছু বলা সম্ভব নয়। এই ছবিটার জন্য দু’বার রেকি করা হয়ে গিয়েছে আমার।

কোথায় রেকি করলেন?
বোলপুর। তবে এখনও কিছু ঠিক নেই। আর তার আগে বিজ্ঞাপনের অনেক কাজ আমার জমে আছে। এক এক করে শেষ করতে চাই। তার পর কবে ফিল্ম হয়, দেখা যাবে।

শেষ পর্যন্ত তা হলে কী বুঝলেন? ভুত ভাল ছিল, দৈত্য ততটা নয়? নাকি দু’টোই ভাল?
এটা বুঝলাম, ভুত এবং দৈত্য দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা বস্তু।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.