সোমবার জেলা বামফ্রন্টে ভাঙন ধরিয়ে সমাজবাদী পার্টি ও সিপিআইয়ের দুই সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে মালদহ জেলা পরিষদের বাজেট পাশ করল কংগ্রেস। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বাজেট পাশ করাতে জেলা পরিষদের ৬৪ জন স্থায়ী সদস্যের মধ্যে ৫০ শতাংশ সদস্য বা ৩২ জন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। এ দিন তৃণমূলের পাশাপাশি সিপিএম, আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্যরা বাজেট বৈঠক বয়কট করেন। তার পরেও কংগ্রেস ৩৩-০ ভোটে বাজেট পাশ করিয়েছে। মালদহ জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক অমলকান্তি রায় বলেন, “বাজেট পাশ হয়েছে। এ বার থেকে জেলার নানা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’
পরিষদ সূত্রের খবর, গত ৪ ডিসেম্বর দলের দুই বিধায়ক অসুস্থ থাকার কারণে বাজেট সভায় আসতে পারেননি কংগ্রেসের দুই সদস্য। তাতে বাজেট পাশ হয়নি। তার পরে এ দিন ফের বাজেট বৈঠক ডাকা হয়। নিজেদের ৩১ জন সদস্যকে দুপুর ১২টার মধ্যে জেলা পরিষদের হাজির করান জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। সমাজবাদী পার্টির জেলা পরিষদের সদস্য মিলন দাস ও সিপিআইয়ের জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চন সিংহ মণ্ডল বাজেটকে সমর্থন জানান। তৃণমূলের ৬ জন সদস্য জেলা পরিষদে গেলেও তাঁরা অন্যঘরে বসে ছিলেন। বাজেট পাশ হতেই তাঁরা চলে যান। সিপিএম, আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লকের অবশ্য কেউ জেলা পরিষদে আসেননি।
বাজেট পাশের পর কংগ্রেস এবং বামেদের কড়া নিন্দা করেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভানেত্রী তথা রাজ্যের নারী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তিনি বলেন, “মালদহে কংগ্রেসের ‘বি-টিম’ বামফ্রন্ট। সেটা আবার প্রমাণিত হল।” তবে জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী বলেন, “জেলার উন্নয়নের স্বার্থে সমস্ত দলের সদস্যকে বাজেট পাশ করানোর জন্য আবেদন করা হয়েছিল। যাঁরা জেলার উন্নয়ন চান না, তাঁরা বাজেট বয়কট করেছেন। যাঁরা উন্নয়ন চান, তাঁরা রাজনীতির উপরে উঠে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে বাজেট পাশ করান।”
এ দিকে দলের নির্দেশ অমান্য করে কংগ্রেসকে বাজেট পাশ করাতে সাহায্য করানোর অভিযোগে সিপিআই দলের জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চন সিংহ মণ্ডলকে সাসপেন্ড করেছে। দলের জেলা সম্পাদক তরুণ দাস বলেন, “কাঞ্চন সিংহ মণ্ডলকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ওঁকে খুব শীঘ্রই দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।” কাঞ্চনবাবু বলেন, “যা করেছি এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে করেছি। দল বহিষ্কার করলে করবে।” সিপিআই সদস্য কাঞ্চনবাবুর মত এ দিন কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ান সমাজবাদী পার্টির জেলা সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সদস্য মিলন দাস। তাঁর বক্তব্য, “উন্নয়নের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে আগেই আমি খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ হয়েছি। বাজেট পাশে কংগ্রেসের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। এ জন্য যদি বামফ্রন্ট আমাকে প্রত্যাখ্যান করে, তবে জেলায় বামফ্রন্টের শক্তি কমবে। জেলার বহু পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখলের নানা নজির রয়েছে। সিপিএম এখন নীতি দেখালে চলবে না।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র জানান, জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা ও কাউন্সিলের অধ্যক্ষ নিয়োগ না করেই বাজেট পেশ করা হয়েছে। এ জন্য আমরা বাজেট বৈঠক বয়কট করেছি। যতদিন না পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ জেলা পরিষদ গঠন করা হচ্ছে ততদিন কোনও বৈঠকে যোগ দেব না। |