মুখ্যমন্ত্রী যাবেন হেলিকপ্টারে। প্রশাসনিক মিটিং করার জন্য সচিবেরা যাবেন সড়কপথে।
কিন্তু যে পথে কলকাতা থেকে সবচেয়ে সহজে মুর্শিদাবাদের রেজিনগর পৌঁছনো যেত, সংস্কারের অভাবে সেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থা সঙ্গীন। এক সময়ে যে রাস্তা ধরে আট-ন’ঘণ্টায় কলকাতা-শিলিগুড়ি যাতায়াত করা যেত, এখন প্রায়ই ২০-২২ ঘণ্টা লেগে যায়। তাই রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের সচিব ও আধিকারিকেরা ঘুরপথেই যাবেন বলে স্থির হয়েছে। জাতীয় সড়কের আশু সংস্কার যে কতটা জরুরি, এই ঘটনায় তা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল।
সোমবার নবান্নে সচিবদের যে পথে যাওয়ার নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের কথা নেই। বরং ভলভো বাসে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বর্ধমানের মঙ্গলকোট, সেখান থেকে মুর্শিদাবাদে ঢুকে পড়া। সালার হয়ে কান্দি, সেখান থেকে বহরমপুর হয়ে রেজিনগর। সচিবদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিকের কথায়, “৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের যা দশা, তাতে অন্তত সাত ঘণ্টা লাগবে রেজিনগরে পৌঁছতে। অথচ মঙ্গলকোটের রাস্তায় কান্দি-বহরমপুর পৌঁছাতে পাঁচ ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়। সেই কারণেই এই পথ নেওয়া হয়েছে।”
দক্ষিণ-উত্তর যোগাযোগের মূল ধমনী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থা কিন্তু বহু দিনের। বিকল্প না থাকায় ওই রাস্তায় প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করছেন সাধারণ মানুষ। বাম আমলে রাস্তা সম্প্রসারণের চেষ্টা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের নেতৃত্বে জমি আন্দোলনের ধাক্কায় তা লাটে ওঠে। ২০১১ সালে পালাবদলের পরেও রাস্তার হাল ফেরেনি। কিছু জায়গায় জমি অধিগ্রহণ করা গেলেও বেশির ভাগ এলাকাতেই সমস্যা রয়ে গিয়েছে। জাতীয় সড়কের চেয়ে তাই শ্রেয় হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সড়ক। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “সচিবদের যে রাস্তায় যাওয়ার কথা, তার অনেকটাই রাজ্য সড়ক। সেগুলির অবস্থা অনেকটাই ভাল। তাই ওই রাস্তা বাছা হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার জাতীয় সড়ক সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু সড়ক মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, জমি অধিগ্রহণ করে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের (এনএইচএআই) হাতে তুলে না দিলে কোনও ভাবেই সংস্কার সম্ভব নয়। সম্প্রতি নদিয়া জেলাশাসকের অফিসে জমিমালিক এবং এনএইচ কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। সেখানে অস্বাভাবিক ভাবে জমির দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ এনএইচএআই-এর। তার জেরে সড়ক সম্প্রসারণ এখনও বিশ বাঁও জলে।
অগত্যা বর্ধমান হয়ে যে পথে সচিব ও আধিকারিকদের যাওয়ার কথা, সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারদের বলা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে থাকবে পুলিশের কনভয়ও। নবান্নর একটি সূত্রের দাবি, প্রায় পাঁচ ঘণ্টা সড়কপথে যাওয়ার ব্যাপারে বেশ কয়েক জন সচিবের দোনামোনা রয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী যে তাঁদের হাজির থাকতে বলেছেন, সেই নির্দেশ অমান্য করার সাধ্য তাঁদের নেই।
শাস্ত্রে বলে, ‘মহাজন’ যে পথে যান, সেটাই রাস্তা। রাজ্যের মহা-জনদের অসুবিধার জেরে যদি পথের বাধা সরানোর কাজ গতি পায়, রাজ্যবাসীর লাভ সেটুকুই। |