যে কোনও ধরনের অ্যাসিড কিনতে গেলে এ বার থেকে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। দোকানদারকেও খাতায় লিখে রাখতে হবে ক্রেতার নাম, ঠিকানা। অ্যাসিড আক্রমণ রুখতেই এ বার থেকে এমনই নিয়ম চালু করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
এই বিধিনিষেধ ঠিক মতো মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য কলকাতা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর এই নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই তা কলকাতা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা এই নজরদারি কতটা চালাতে পারবেন, তা নিয়েও প্রশাসনের কর্তাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে সংশয়।
শুধু দোকান নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারে অ্যাসিড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সেখানেও দোকানের মতোই একটি খাতা রাখতে হবে। কে কে অ্যাসিড ব্যবহার করছেন তার বিস্তারিত হিসাব ওই খাতায় লিখে রাখতে হবে। বিষয়টি দেখভালের জন্য এক জন ‘অ্যাসিড কিপার’ রাখতে হবে।
রাজ্য সরকার সূত্রের খবর, অ্যাসিড আক্রমণের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। সোমবার সকালেই সিউড়ি শহরের রাস্তায় এক আদিবাসী গৃহবধূর মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করে এক যুবক। পুলিশ জানায়, বরুণ লোহার নামের ওই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলায় মহিলার ডান কানের নীচ থেকে গলা এবং পিঠের বেশ খানিকটা পুড়ে গিয়েছে। সিউড়ি সদর হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই সে ওই বধূর উপরে অ্যাসিড নিয়ে হামলা করেছে বলে জানিয়েছে বরুণ। বীরভূমের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ধৃত যুবক কী ভাবে এবং কোথা থেকে ওই অ্যাসিড জোগাড় করল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
সিউড়ির মতোই বিভিন্ন জায়গায় অ্যাসিড দিয়ে আক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সুপ্রিম কোর্ট প্রতিটি রাজ্যকে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে বলে। এর পরেই রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ও মহকুমা শাসকদের নজরদারির যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা কতটা বাস্তসম্মত ?
এ ব্যাপারে বর্ধমান জেলার এক মহকুমাশাসক বলেন, “এই কাজ পুলিশের পক্ষে করা বেশি সুবিধার। তা না করে বিষয়টি মহকুমাশাসকদের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন এমনই যে দিনভর কাজ করেও প্রশাসনিক কাজকর্ম সেরে ওঠা যায় না। তাই এই বাড়তি দায়িত্ব সব মহকুমাশাসককে সমস্যায় ফেলবে।” কলকাতার এক পুলিশকর্তা বলেন,“দোকানে গিয়ে খাতা পরীক্ষা করতে গেলে যে বাড়তি কর্মী দরকার, তা কলকাতা পুলিশের নেই। কী করে কাজ হবে কে জানে?”
সমালোচনার পাশাপাশি এই নয়া নির্দেশকে স্বাগতও জানান অনেকে। জলপাইগুড়ি সদরের মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “এই নির্দেশ অ্যাসিড বিক্রির উপর একটা নিয়ন্ত্রণ আনবে। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কথাও ভাবছি। যেমন নির্দেশ পাব, তেমনিই পদক্ষেপ করা হবে।”
খড়্গপুরের মহকুমাশাসক আর বিমলা বলেন, “নির্দেশিকা এখনও হাতে পাইনি। তবে, এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত। এর ফলে, অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা আটকানো যাবে।”
মেদিনীপুর সদরের মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তও বলেন, “নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ হবে।” কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনারদের একাংশও মনে করেন, ১০০ শতাংশ কাজ না হলেও এই নির্দেশে কিছুটা কাজ হবে। কয়েকটি দোকানে তল্লাশি চালালেই দোকানদারদের মধ্যে ভয় তৈরি হবে বলে তাঁদের ধারণা।
|
অ্যাসিডে কড়াকড়ি |
• ক্রেতার নাম-ঠিকানা ও বিক্রি হওয়া অ্যাসিডের পরিমাণ লিখে রাখতে হবে।
• সচিত্র সরকারি পরিচয়পত্র না থাকলে অ্যাসিড কেনা যাবে না।
• কেন অ্যাসিড কিনছেন, তাও দোকানদারকে লিখে রাখতে হবে।
• ১৮ বছরের কম বয়সী কোনও ক্রেতাকে অ্যাসিড বিক্রি করা যাবে না।
• কলকাতা পুলিশ ও জেলায় মহকুমাশাসক ১৫ দিন অন্তর অ্যাসিড বিক্রির হিসাব দেখবেন।
• কোনও দোকানদার এই নিয়ম না মানলে, ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা। |
|