বরফের হাত ধরে পাহাড়ে ফিরেছে শীত। গত কয়েক দিনে ক্রমান্বয়ে নেমে চলেছে পারদ, আর শিলিগুড়ি থেকে পাকদণ্ডী বেয়ে পর্যটক বোঝাই গাড়ি উঠে আসছে দার্জিলিঙে।
কালিম্পং, কার্শিয়াং, মিরিক কিংবা আশপাশের হালের ছোট পর্যটন কেন্দ্র লামহাট্টা, সেলারিও ভরে উঠছে সমতলের ভিড়ে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের চওড়া হাসিতেই বোঝা যাচ্ছে, পর্যটকদের ফিরে পেয়ে শীতের পাহাড় গত মরসুমের স্মৃতি ভুলতে চাইছে।
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সান্দাকফু আর ফালুটে আচমকা বৃষ্টির মতো ঝরেছে বরফ। দিন কয়েক আগে পাহাড়ের আনাচে কানাচে আরও দু-একটি বসতে তুষারপাতের খবর মিলেছে। তারই খোঁজে গত কয়েক দিনে দার্জিলিঙে উঠে আসা পর্যটকদের ভিড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ হোটেলের ঘর বুকড্ হয়ে গিয়েছে। এমনই জানাচ্ছেন শিলিগুড়ির ট্যুর অপারেটর সম্রাট সান্যাল। তিনি বলছেন, “তুষারপাতের হাত ধরেই পর্যটকেরা ফিরছেন পাহাড়ে। পুজো এবং দীপাবলির মরসুমে সুনসান ছিল পাহাড়। ছবিটা বদলাবে।” পর্যটন সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, পুজোর সময়ে পাহাড়ের ২৫ শতাংশ হোটেলও ঘর বুকড্ হয়নি। ডিসেম্বরের গোড়ায় পর পর তুষারপাত আর ঠান্ডা উপেক্ষা করে সেই ঘরই ভরিয়ে তুলছেন পর্যটকেরা। দার্জিলিঙের হোটেল মালিক সংস্থার এক কর্তা বলেন, “২০ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শহরের হোটেলে ‘বুকিং’ পাওয়াই সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চেহারাটা প্রায় একই রকম সিকিমেও। সিকিমে টানা তুষারপাতের খবরে আপাতত গ্যাংটক সরগরম।”
দার্জিলিং শেষ তুষারপাত দেখে ৫ বছর আগে। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর শহরের ম্যাল আর বরফে সাদা হয়ে ওঠেনি। তবে দার্জিলিঙের আশপাশে বরফ পড়েছে গত বছরও জানুয়ারি মাসেও। সে বার টাইগার হিলের কাছে তুষারপাত হয়েছিল।
তুষারপাতের হাতছানির সঙ্গে পাহাড় ফিরে পেতে চলেছে তার সাধের টয়-ট্রন। তিন বছর আগে ধস নামায় থমকে যায় সমতলের সঙ্গে পাহাড়ের একমাত্র এই ট্রেন-যোগাযোগ। শিলিগুড়ি থেকে সুকনা হয়ে চার কামরার ট্রেন ফের চালু হচ্ছে। তবে তিনধারিয়া পর্যন্ত। এ বারও সেই কাজটাই শুরু করতে চাইছে রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের ডিআরএম (কাটিহার) অরুণ শর্মা বলেন, “সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তিনধারিয়া পর্যন্ত ট্রেন চালানো যাবে। ২৫ ডিসেম্বর উদ্বোধনের দিনও ঠিক করা হয়েছে।” রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “ইচ্ছে থাকলেও এই শীতে দার্জিলিং পর্যন্ত ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। রাজ্য রাস্তা না সারালে লাইন পাতব কোথায়!”
৩ বছর আগে, ২০১০ সালে ধস নেমে ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শিলিগুড়ি থেকে গয়াবাড়ি পর্যন্ত টয় ট্রেন তবুও চলেছিল কিছু দিন। ২০১১-এর সেপ্টেম্বরে তিনধারিয়ায় ফের ধস নামায় শিলিগুড়ি-দার্জিলিং যোগাযোগই প্রায় ছিন্ন হয়ে পড়ে। বছর খানেক পরে রেলমন্ত্রক লাইন মেরামতির জন্য ৮৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করে। তাতে মেরামত হয়েছে অনেকটাই। এ বার পর্যটকেরা দার্জিলিঙের ‘বরফ’ দেখতে কিছুটা পথ অন্তত পাহাড়ি ট্রেনের মজা পাবেন। |