জিটিএ চিফ পদ ছাড়াটা ভুল হয়েছে বলে বিমল গুরুঙ্গ স্বীকার করতেই তাঁকে ফের ক্ষমতার বৃত্তে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সোমবার দার্জিলিঙে জিটিএ সভার বৈঠকে ২৮ জন সদস্য সর্বসম্মত ভাবে গুরুঙ্গকে ফের জিটিএ-র প্রধান করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জিটিএ সভার চেয়ারম্যান প্রদীপ প্রধান এ কথা জানিয়ে বলেছেন, “প্রধান সচিবের মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে জানিয়ে প্রধান নির্বাচনের জন্য দ্রুত সভা ডাকার অনুরোধ করা হয়েছে।” সরকারি সূত্রের খবর, বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনের কর্তারাও জেনেছেন। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, জিটিএ-সভার প্রস্তাব সরকারি ভাবে পৌঁছলে বিধি মেনেই প্রধান নির্বাচনের দিন ঠিক করা হবে।
তবে ঘরে-বাইরে নানা চাপে পড়ে কোণঠাসা মোর্চা সভাপতি ক্রমাগত সুর নরম করলেও শাসক দল তৃণমূল কিন্তু পাহাড়ে রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে। এ দিনই কলকাতায় গিয়ে মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে পাহাড়ের প্রাক্তন জিএনএলএফ বিধায়ক প্রণয় রাই, জিএলপির প্রথম সারির কম্যান্ডার অনুপ রাই-সহ এক ঝাঁক মোর্চা নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। জিএলপি-র অন্যতম প্রশিক্ষক অনুপ ঝটিকা আক্রমণে নেতৃত্ব দিতে সিদ্ধহস্ত, তাই মোর্চার অন্দরে তিনি ‘ঈগল’ নামে পরিচিত। তিনিই ছিলেন বিমল গুরুঙ্গের নিরাপত্তায় থাকা জিএলপি-র প্রধান। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু বলেছেন, “পাহাড়ের মানুষ উন্নয়ন চান। মুখ্যমন্ত্রী সেই কাজটা দক্ষ ভাবে করে চলেছেন বলে পাহাড়ের নানা দলের মানুষ আমাদের কাছে আসছেন। তাঁদের স্বাগত জানাচ্ছি। সকলকে নিয়ে আমরা পাহাড়ের উন্নয়নে আরও বেশি করে সামিল হব।” |
মুখ্যমন্ত্রী ‘কঠিন ও কঠোর’ মনোভাব দেখানোয় জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়া আন্দোলন থেকে সরতে আগেই বাধ্য হয়েছেন গুরুঙ্গ। উপরন্তু, জিএনএলএফ-এর সভায় ভিড় বাড়ছে। চাপে পড়ে সুবাস ঘিসিঙ্গকে পাহাড়ে স্বাগত জানিয়েছেন গুরুঙ্গ। তার উপরে যে ভাবে মোর্চা থেকে নেতা-কর্মীদের দলে টানছে তৃণমূল, তাতে তাঁর ‘রাজনৈতিক অস্তিত্ব’ সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে বলে দলের আশঙ্কা। মোর্চার এক প্রথম সারির নেতা জানান, গুরুঙ্গ তো বটেই, মোর্চার সদর দফতরেও লোকজনের যাওয়া আসা কমছে। প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা না-থাকাই যে এর কারণ, সেটা মোর্চা নেতারা বারেবারেই গুরুঙ্গকে বুঝিয়েছেন।
জিটিএ-এর অস্থায়ী চিফ তথা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল রমেশ আলে বলেন, “পাহাড়ের মানুষ বিমল গুরুঙ্গকে চিফ পদে চাইছেন। এতে জিটিএ আরও ভাল ভাবে কাজ করতে পারবে।”
জিটিএ প্রধানের পদ ছাড়ায় তাঁর জনপ্রিয়তা যে ক্রমশ কমছে, তা গত রবিবার দলের বৈঠকে কবুল করেন খোদ গুরুঙ্গ। পরে নিজেই মেনে নেন, পদ ছাড়াটা ভুল হয়েছে। সেই সঙ্গে সুবাস ঘিসিঙ্গকে পাহাড়ে স্বাগত জানানোর কথা ঘোষণা করতেও কার্যত বাধ্য হন। তা সত্ত্বেও গুরুঙ্গ জিটিএ চালাতে সত্যিই আগ্রহী কি না, তা নিয়ে দলের অন্দরে ও বাইরেও নানা প্রশ্ন ওঠে।
মোর্চার অন্দরের খবর, তাই গুরুঙ্গের ভুল স্বীকারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জিটিএ-এর সদস্যরা একজোট হয়ে গুরুঙ্গকে চিফ পদে বসানোর কথা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেন দলের নেতারা। এতে বার্তা যাবে, গুরুঙ্গ রাজ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে পাহাড়ের উন্নয়নে আগ্রহী। রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক ফের ‘গভীর’ করা গেলে গুরুঙ্গ কিছুটা স্বস্তিও পাবেন। ফলে, আগামী ২০ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাড়তি গুরুত্ব পাবেন বলেও আশা মোর্চা নেতাদের।
মোর্চা এখন সুর নরম করলেও অতীতে দ্রুত অবস্থান বদলানোর নজির রয়েছে গুরুঙ্গের। গত অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রাজ্যের বিস্তর অনুরোধ উপেক্ষা করে গুরুঙ্গ পাহাড়ের জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়া আন্দোলন চালিয়ে যান। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাই গুরুঙ্গের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাক্ষাৎ করতে রাজি হলেও, প্রশাসনিক ভাবে কড়া মনোভাবই জারি রাখতে চায় রাজ্য। মোর্চার নেতাদের অনেকেও এমন মনে করছেন। কারণ, এ দিন জিটিএ সদস্যদের মধ্যে কল্যাণ দেওয়ান জামিন পেলেও আর এক সদস্য নিমা তামাঙ্গকে ফের নতুন মামলায় জড়ানো হয়েছে।
তাই রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক আগের মতো হবে কি না, তা নিয়ে মোর্চার অন্দরেই সংশয় রয়েছে। সে জন্য তাঁরা দিল্লি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। এ দিনও দিল্লিতে রোশন গিরি দেখা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে এবং বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের সঙ্গে। পরে রোশন বলেছেন, “আলাদা রাজ্যের দাবি কিংবা পাহাড়ের উন্নয়ন, যাই-ই হোক না কেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, রাজ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই পদক্ষেপ করতে হবে।” |