দলেরই পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিডিও-র দ্বারস্থ হল তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠী। বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ব্লকের হামিরপুর পঞ্চায়েতের ঘটনা। সোমবার পাত্রসায়রের বিডিও-র কাছে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ আসগর আলির বিরুদ্ধে সামাজিক বনসৃজন এবং ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ নয়ছয় করার লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ ও এলাকার কিছু বাসিন্দা। প্রধান অবশ্য অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
বস্তুত, এই ঘটনায় পাত্রসায়রে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এসেছে। তারই মধ্যে এ দিন মারপিটে জড়াল তৃণমূলের ওই দুই গোষ্ঠী। পাত্রসায়রে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক দীপালি সাহার গোষ্ঠীর বিবাদ দীর্ঘদিনের। হামিরপুর পঞ্চায়েতটি বর্তমানে বিধায়ক-গোষ্ঠীর দখলে। পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন স্নেহেশবাবুর অনুগামীরাই। অভিযোগকারীদের অন্যতম, হামিরপুর অঞ্চল তৃণমূল নেতা ঝন্টু ওরফে জহরলাল মিদ্যার অভিযোগ, বনসৃজন প্রকল্পে ধগড়িয়া থেকে পড়াশিয়া এবং বাজিতপুর ক্যানাল পর্যন্ত গাছ লাগানোর জন্য কথা ছিল। কিন্তু, সামান্য কিছু গাছ লাগিয়ে পুরো টাকাটাই আত্মসাৎ করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান। ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে কাজ না করিয়ে প্রধান নিজের আত্মীয়স্বজনদের নামে ভুয়ো জবকার্ডে টাকা পাইয়ে দিচ্ছেন বলেও বিডিও-র কাছে জমা পড়া অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে।
পঞ্চায়েত প্রধান শেখ আসগর আলি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, “১০০ দিন কাজের প্রকল্পে কাজ না করিয়ে কাউকে টাকা পাইয়ে দিইনি। বনসৃজন প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ ছিল, তার পুরোটাই কাজ হয়েছে। তার পরেও স্রেফ বিরোধিতা করার জন্য দলের একাংশ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে।” প্রধানের পাল্টা অভিযোগ, “এ দিন বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানানোর পরে স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের আশ্রিত কিছু দুষ্কৃতী পাত্রসায়র বাসস্ট্যান্ডে আমাদের দলের পার্টি অফিসে হামলা চালিয়েছে। কয়েক জন কর্মীকে মারধরের পাশাপাশি দলের ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে দিয়েছে। আমরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি।”
স্নেহেশবাবুর অবশ্য দাবি, রবিবার ধগড়িয়ায় তৃণমূলের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন পাত্রসায়র গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শুভ কর্মকার এবং পাত্রসায়র কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক জিয়ারুল ইসলাম। সেখানে তাঁদের পথ আটকে হেনস্থা করা হয়। এ দিন ব্লক অফিসে যাওয়ার পথে বাসস্ট্যান্ডের একটি দোকান থেকে কটূক্তি করা হলে দলের কিছু কর্মী রুখে দাঁড়ান। মারধরের অভিযোগ ঠিক নয় বলেও তাঁর দাবি। পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্বকুমার বিশ্বাস বলেন, “হামিরপুর পঞ্চায়েতের দু’টি প্রকল্পের কাজ নিয়ে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ জানিয়েছে, তৃণমূলের একাংশের তরফে হামলা ও মারধরের অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। |