অবৈধ কয়লা খাদানে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তা পরিদর্শনে গিয়ে হেনস্থা হতে হল বিষ্ণুপুরের সিপিএম সাংসদ সুস্মিতা বাউরিকে। অবৈধ কয়লা কারবারের সঙ্গে জড়িত এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ সাংসদকে গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখায়। সাংসদকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয় বলেও অভিযোগ।
ঘটনাস্থল বাঁকুড়ার মেজিয়া থানার কালিকাপুর। রবিবার কালিকাপুরের অবৈধ খোলামুখ কয়লাখনিতে দুর্ঘটনা ঘটে। কয়েক জন শ্রমিক কয়লা তোলার সময় চাপা পড়েন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। সেই খবর পেয়ে সোমবার ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যান সুস্মিতাদেবী এবং বাঁকুড়ার সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া। সুস্মিতাদেবীর সঙ্গে ছিলেন তালড্যাংরার দলীয় বিধায়ক মনোরঞ্জন পাত্র। বাসুদেববাবুর গাড়িটি ঘটনাস্থল পর্যন্ত পৌঁছতে পারলেও অনেকটা পিছনে থাকা সুস্মিতাদেবীর গাড়িটি কালিকাপুর মোড়ে ঘিরে ধরে জনতা। সুস্মিতাদেবীর অভিযোগ, “ওরা আমার গাড়ি আটকে ফিরে যেতে চাপ দেয়। আমি আপত্তি করায় ওরা আমার হাত ধরে গাড়ি থেকে টেনে নামানোর চেষ্টা পর্যন্ত করে। পরিস্থিতি বুঝে বাধ্য হয়ে আমি গাড়ি ঘুরিয়ে নিই।” এই সবই কয়লা মাফিয়াদের কাণ্ড বলে দাবি করেছেন দুই সাংসদ।
বাঁকুড়ায় ফিরে পুলিশ সুপারের অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন দুই সাংসদ। পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার তখন অফিসে ছিলেন না। পরে বাসুদেববাবু দাবি করেন, “ওই ধসে বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। আমি নিজে খাদানের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত মাখা জামাকাপড় পড়ে থাকতে দেখেছি। গোটা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে শাসকদল আর জেলার পুলিশ-প্রশাসন।” পুলিশ সুপারের অবশ্য বক্তব্য, মেজিয়া থানার পুলিশ ওই এলাকায় গিয়েও দুর্ঘটনার কোনও প্রমাণ পায়নি। ওই মর্মে কোনও অভিযোগও হয়নি।
বাসুদেববাবুর আরও অভিযোগ, শাসকদলের প্রত্যক্ষ মদতেই এই অবৈধ কয়লা খাদান চলছে। এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে তিনি লোকসভায় সরব হবেন বলেও জানান এই বর্ষীয়ান সাংসদ। ঘটনা হল, কালিকাপুরের এই অবৈধ কয়লাখনিটি চলছে বাম জমানা থেকেই। বাসুদেববাবু তা মেনে নিয়েও তাঁর কটাক্ষ, “আমাদের আমলে ওখান থেকে কয়লা চুরি হত। কিন্তু, এখন প্রকাশ্য দিবালোকে ওখানে ডাকাতি হচ্ছে!” বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূলের জেলা কো-চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, “পুরো ঘটনাটি সিপিএমের বানানো গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। সাংসদ হওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামের মানুষের একবারও খবর নিতে আসেননি বাসুদেববাবু। এখন কয়লাখনিতে শ্রমিক মৃত্যুর মিথ্যা খবর রটিয়ে ফের এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করছেন তিনি।” এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, “মানুষ সিপিএমকে মন থেকে চায় না বলেই সাংসদের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু, সাংসদকে ঘটনাস্থলে যেতে কেউ বাধা দেননি বলেই শুনেছি।”
কালিকাপুরের কয়লাখনিতে দুর্ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেনি পুলিশ-প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মৌমিতা বসু বলেন, “মেজিয়ার বিডিওকে রিপোর্ট দিতে বলেছি। এখনও কোনও রিপোর্ট আমার কাছে আসেনি।” বিডিও সোমনাথ বিশ্বাস আবার বলেন, “আমি পুলিশকে চিঠি দিয়ে ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছি। পুলিশের তরফে এখনও রিপোর্ট আমাকে পাঠানো হয়নি।” |