দু’টি ডাম্পারের মুখোমুখি সংঘর্ষের জেরে কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল ব্যাহত হল দুর্গাপুর-বাঁকুড়া রাস্তায়। সোমবার দুর্ঘটনাটি ঘটে ডিভিসি ব্যারাজের কয়েকশো মিটার দূরে সুকুমারনগরের পাশে। আটকে পড়ে কয়েকশো গাড়ি।
দুর্গাপুর-বাঁকুড়া এই ৯ নম্বর রাজ্য সড়ক দিয়ে প্রতি দিন কয়েক হাজার যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি যাতায়াত করে। শুধু দুর্গাপুরের সঙ্গে বাঁকুড়া নয়, এই রাস্তাটি দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান যোগসূত্র। কিন্তু ডিভিসি ব্যারাজের কাছে রাস্তাটির হাল এমনই যে প্রায়শয়ই যানজট হয়। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তা সারাই হয় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও নিত্যযাত্রীদের। তাঁদের দাবি, ইদানীং কিছু তাপ্পি মারা হলেও পরিস্থিতির বিশেষ রদবদল হয়নি। সোমবারের দুর্ঘটনায় কার্যত সেই দাবির সত্যতাই সামনে এল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ দু’টি ছাই বোঝাই ডাম্পারের মধ্যে ধাক্কা লাগে। সংঘর্ষের জেরে একটি ডাম্পার রাস্তার উপরে আড়াআড়ি ভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে। ফলে, দু’দিকেই প্রচুর যানবাহন আটকে যায়। খবর পেয়ে দুর্গাপুরের কোকওভেন থানা ও বাঁকুড়ার বড়জোড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কোকওভেন থানা ক্রেনের ব্যবস্থা করলেও যানজটের জেরে তা দুর্ঘটনাস্থলে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়ে পুলিশকে। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ক্রেন দিয়ে রাস্তার পাশে সরিয়ে দেওয়া হয় ডাম্পার দু’টিকে। তবে যানজট কাটতে আরও দু’ঘণ্টা সময় লাগে। |
এই রাস্তায় মাঝে-মধ্যেই দুর্ঘটনার জেরে দীর্ঘক্ষণ যানজটে ফেঁসে থাকতে হয় যাত্রীদের। গত বছর জুলাইয়ে ভোর ৪টে নাগাদ ব্যারাজেরা কাছে তারাসিংহ সেতুর কাছে মুখোমুখি সংঘর্ষে মালবোঝাই দু’টি ট্রাকে আগুন লেগে গিয়ে মৃত্যু হয় এক ট্রাকচালকের। এর ফলে তৈরি যানজট কাটে দুপুর ১টা নাগাদ। মাস দুয়েক আগে বড়জোড়ার দিকে একটি লরি খারাপ হয়ে পড়ায় দিনভর যানজট হয়। এ দিন যানজটে আটকে পড়েছিলেন বড়জোড়ার এক বেসরকারি কারখানার কর্মী বিশ্বনাথ সরকার। তিনি বলেন, “দুর্গাপুর থেকে গিয়ে দুপুর ১টা নাগাদ কারখানায় ঢুকতে হয়। দুর্ঘটনা ঘটলে এই রাস্তায় যানজট নিশ্চিত। আজ আর আমার কাজে যাওয়া হল না।” এ দিন বেশ কিছু বাসের যাত্রী বহুক্ষণ অপেক্ষার পরে নেমে হাঁটতে শুরু করেন। তবে সমস্যায় পড়েন মহিলা ও শিশুরা। বাঁকুড়ার কোতুলপুরের বধূ শ্রেয়া নাগ দুর্গাপুর স্টেশন থেকে স্বামী জয়ন্তর সঙ্গে বাঁকুড়াগামী একটি বাসে উঠেছিলেন। দু’জনেই প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে স্টেশনে ফিরে আসেন। শ্রেয়াদেবী বলেন, “জানি না। কখন বাড়ি ফিরব।”
এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত দুর্গাপুরে যান বড়জোড়ার শুভজিৎ ঘোষ। তিনি বলেন, “দিনের পর দিন যানজটে আমাদের খুব ক্ষতি হচ্ছে। তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়েও খুব কম দিন সময়ে পৌঁছতে পারি। কোনও গাড়ি খারাপ হয়ে পড়ে থাকলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে তো কথাই নেই।” তাঁর অভিযোগ, “ব্যারাজে যাঁরা টোল আদায় করেন, গাড়ি থেকে চালকদের নেমে খানিক দূরে তাঁদের অফিসে টাকা দিয়ে আসতে হয়। ফলে, গাড়ি আটকে থাকে। এই পদ্ধতি একটু বদল করলে সুবিধা হবে বলে মনে করি।” নিত্যযাত্রীদের মতে, রাস্তাটির গুরুত্ব বিচার করে সেটি আরও চওড়া করা জরুরি। দু’লেনের রাস্তা যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া দ্রুত যাওয়ার তাগিদে চালকেরা অহরহ লেন ভাঙেন বলে অভিযোগ। ফলে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।
দুর্গাপুরের ৩ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারম্যান শেফালি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই সড়কে যানজটের সমস্যা নিয়ে অনেকেই অভিযোগ জানিয়েছেন। আমি পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করে সুরাহা চাইব।” |