তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ হত্যা মামলার প্রধান তিন অভিযুক্ত, হানিফ মণ্ডল, সোহরাবউদ্দিন ও সর্ফউদ্দিনের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগনেই, আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে এমনটাই জানালেন ওই মামলার প্রধান সাক্ষী ও খুনের প্রত্যক্ষদর্শী পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়।
কয়েক সপ্তাহ স্থগিত থাকার পরে সোমবার নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা জজ এবং সেশন জজের আদালতে সজল ঘোষ হত্যা মামলার শুনানি ফের শুরু হয়। এ দিন জেরা করা হয় মামলার প্রধান সাক্ষী তথা পূর্বস্থলীর পঞ্চায়েত প্রধান পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়কে। অভিযুক্তদের চার আইনজীবী তাঁকে জেরা করেন। জেরার শেষ পর্বে আইনজীবী নারায়ণ সাধুর প্রশ্নের উত্তরে পঙ্কজবাবু জানান, সজল ঘোষ খুনের সময় তিনি ওই তিন জনকে দেখেননি। এরপরেই এ দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে যায়। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হতেই হাজির হন মামলার একমাত্র হাজতবন্দি অভিযুক্ত প্রদীপ সাহা। অন্য চার অভিযুক্ত আগেই জামিনে ছাড়া পেয়েছে। এখনও পুলিশ ধরতে পারেনি মূল অভিযুক্ত লোকনাথ দেবনাথকে।
রুদ্ধদ্বার কক্ষে পঙ্কজবাবুকে জেরা শুরু করেন অভিযুক্তদের আইনজীবী প্রতীম সিংহ রায়। আদালতে বেশ কিছু রক্তমাখা তুলো নমুনা হিসেবে পেশ করা হয়। ওই তুলো দেখিয়ে জানতে চাওয়া হয় যে সিজার লিস্টে পঙ্কজবাবু সই করেছেন, সেখানে লাল রঙের তুলো বলে উল্লেখ নেই। পঙ্কজবাবু বলেন, হ্যাঁ নেই। এরপরে প্রশ্ন শুরু হয় ওই রাত নিয়ে। প্রতীমবাবু বলেন, সাক্ষী আদালতে এজাহার দেওয়ার সময় বলেছেন যে ঘটনার রাতে তিনি, কাজল শেখ প্রমুখেরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটের সামনে গল্প করেছিলেন। অথচ এফআইআর-এ লিখেছেন হাসপাতালের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। কেন? পঙ্কজবাবু মেনে নেন এফআইআর-এ হাসপাতালের গেটের সামনেই লেখা আছে। জানতে চাওয়া হয় ঘটনার পরে পঙ্কজবাবু হাসপাতালের মেন গেট বন্ধ করার জন্য কাউকে বলেছিলেন কিনা। সাক্ষী জানান, না। প্রতীমবাবু জিজ্ঞেস করেন, রাত ১টা ৪৫-এ সুরতহাল রিপোর্টটি তৈরি হয়েছে। তাতে কোনও নির্দিষ্ট কেস বা ইউডি কেস কোনটাই করেনি পুলিশ। অথচ রাত ১টা ৪১-এ সিজার লিস্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। কীভাবে সম্ভব? আপত্তি তোলেন সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর সাক্ষী নন, তদন্তকারী অফিসার দিতে পারবেন। প্রতীমবাবু সাক্ষীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ওই দিন রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালে কিছু ঘটেনি। পঙ্কজবাবুর জবাব, চোখের সামনে সব ঘটেছে।
এরপর জেরা করেন আইনজীবী সামসুল ইসলাম মোল্লা। ২০০৩ সাল থেকে পরপর তিন বার পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের প্রধান ও তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য পঙ্কজবাবু সেই মতো জবাবও দেন। শেষে আইনজীবী বলেন ডানপন্থী রাজনীতির লোক হিসেবে পঙ্কজবাবু বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত প্রদীপ সাহাকে রাজনৈতিক ভাবে চক্রান্ত করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছেন। এ দিন তৃতীয় আইনজীবী হিসেবে জেরা করেন বিষ্ণু শীল। জানতে চান, পঙ্কজবাবু, সজল ঘোষ কিংবা প্রদীপ সাহা কেউ পূর্বস্থলী কলেজে পড়তেন কিনা। পরে সেই রাতে কীভাবে, কার পরিকল্পনায় নবদ্বীপ হাসপাতালে আহতদের দেখতে আসেন তা জানতে চান। আরও জানতে চান, ওই রাতে হাসপাতালে পঙ্কজবাবু ভাত খেয়েছিলেন কিনা। পঙ্কজবাবু বলেন, ঘটনার পরে ভাত খাওয়ার পরিস্থিতি ছিল না। বিষ্ণুবাবু জিজ্ঞেস করেন, রাজনীতির সুবাদে পঙ্কজবাবুর বিরুদ্ধে অনেক মামলা হয়েছে। তিনি কী জেল খেটেছেন? পঙ্কজবাবু জানান, হ্যা। আইনজীবী প্রশ্ন করেন, আপনার কী মনে হয়েছিল প্রদীপবাবুকে শিক্ষা দেওয়া দরকার? পঙ্কজবাবুর জবাব, অপরাধী শাস্তি পাক, এটাই চেয়েছি। বিষ্ণবাবুও বলেন, রাজনৈতির কারণে প্রদীপ সাহার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। পঙ্কজবাবু বলেন, যা বলেছি সব সত্যি।
মঙ্গলবার ফের শুনানি হবে।
|