পুরসভার লক্ষ্য সৌন্দর্য্যায়ন। কিন্তু পুরবাসীর আশঙ্কা তাতে দুর্ঘটনা বাড়বে। রাস্তার বুলেভার্ড লোহার রেলিং দিয়ে ঘিরতে গিয়ে এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কল্যাণীতে।
সৌন্দর্যায়নের জন্য পুর এলাকায় রাস্তার মাঝের চওড়া ঘাসজমি ঘিরে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে কয়েক মাস আগে। পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘেরা জায়গায় বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে সবুজায়ন হবে। গাছ বাঁচাতে ইটের পাঁচিলের ফাঁকে বসানো হচ্ছে লোহার গ্রিল। তার উপরে থাকছে বর্শার ফলার মতো লোহার পাত। আর এই লোহার পাত নিয়েই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। ইতিমধ্যেই পুর কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে মৌখিক ভাবে আপত্তি জানিয়েছেন বাসিন্দাদের অনেকেই। বর্শার ফলায় জখম হওয়ার মতো ছোটখাটো কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে গত কয়েকদিনে। রাস্তার মাঝে ঘাষজমি এভাবে ঘিরে দেওয়ায় ব্যস্ত রাস্তায় পথচারী বা সাইকেল আরোহীরাই মূলত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা অসীম সরকারের কথায়, “এতদিন ফুটপাথ না থাকলেও ফাঁকা রাস্তায় তীব্র গতিতে যাওয়া গাড়ি বা মোটরবাইকের ধাক্কা থেকে বাঁচাতে রাস্তার মাঝের এই ফাঁকা ঘাসজমিই ছিল একমাত্র উপায়। ফুটপাথহীন রাস্তার গা ঘেঁষে উঁচু লোহার গ্রিল সেই উপায়টুকুও কেড়ে নিয়েছে।” |
চেয়ারে বসার পর থেকেই সাজানো শহর কল্যাণীকে সবুজে ভরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে বর্তমান পুরপ্রধান। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ও পুরপ্রধান নীলিমেষ ঘোষ শহরের বিভিন্ন জায়গায় কয়েক হাজার গাছ লাগানো, আইল্যান্ডের উদ্যানগুলিকে ঢেলে সাজানোর পাশপাশি লাইটপোস্টেও বাহারি গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যায়নের যে চেষ্টা করছেন, কল্যাণীবাসী বা শহরে আসা অতিথিদের কাছে তা প্রশংসিত হয়েছে। এমনকী বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই কাজে পুরসভার আয়ও হয়েছে। কিন্তু লোহার ফলা লাগানো পাঁচিল বিতর্ক সৌন্দয্যায়নের উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। নীলিমেষবাবুও বলেছেন, ‘‘বিষয়টা ঠিক হয়নি।” তবে একইসঙ্গে তিনি জানান, লোহার ফলা লাগানোর পরিকল্পনা পুরসভার ছিল না। যাঁরা কাজের বরাত নিয়েছিলেন এটা তাঁদের ভুল। বিষয়টি নজরে আসার পরেই ওই ফলার উপর দিয়ে লোহার পাত লাগিয়ে দিতে বলেছি।’’ তবে শহরের রাস্তা থেকে এভাবে ফুটপাথ চুরির প্রসঙ্গে পুরপ্রধানের সাফাই, ‘‘সব রাস্তায় ফুটপাথ থাকতে হবে, এমন কোনও আইন নেই। ফুটপাথের প্রয়োজন হলে পথচারীদের স্বার্থে পরে বুলেভার্ড সরু করে লোহার পাঁচিল সরিয়ে দেওয়া যাবে।’’
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বুলেভার্ডে উদ্যান তৈরির জন্যই যদি ঘেরা হয়ে থাকে তবে পরবর্তীতে ফুটপাথ করতে গেলে হয় রাস্তা সরু করতে হবে, যা বাস্তবে অসম্ভব। নয় তো, বুলেভার্ড সরু করতে হবে। যাতে এখন লাগানো গাছও কাটা পড়বে। এই পরিস্থিতিতে কল্যাণীর ক্রমবর্দ্ধমান জনবসতি ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই নগরায়ণের পরিকল্পনা করা উচিত বলে মনে করছেন অধিকাংশ বাসিন্দা। |