|
|
|
|
বাল্যবিবাহের শিকড় সমূলে বিনাশের ডাক
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
কিছু দিন আগে ঝাড়গ্রামের এক নাবালিকার বিয়ে রুখে দিয়েছিল প্রশাসন। স্কুল পড়ুয়া চোদ্দো বছরের ওই কিশোরী এখন নিজের পরিবার ও পড়শিদের কাছে কার্যত একঘরে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রশাসন-পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি যতই ব্যবস্থা নিক না কেন, এই কুপ্রথার শিকড় এখনও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে। অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বেড়াজাল ভাঙতে গিয়ে প্রতিপদে বাধা আসছে। তাই যেটুকু সাফল্য বলে দাবি করা হচ্ছে, তা আসলে সিন্ধুতে বিন্দুবৎ। সোমবার ঝাড়গ্রামের মহিলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সুচেতনা’র উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় এমনই উদ্বেগের কথা শোনা গেল। এ দিন ঝাড়গ্রামের অরণ্যসুন্দরী মহাসঙ্ঘ সভাঘরে ‘বাল্যবিবাহ ও নারী পাচার প্রতিরোধ’ শীর্ষক জেলাস্তরের ওই সভায় ঝাড়গ্রামের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন, “কয়েক দিন আগে এক শিক্ষিকা ফোন করে জানালেন তাঁর স্কুলের পড়ুয়া এক নাবালিকার বিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা। ওই শিক্ষিকাকে আমাদের সঙ্গে মেয়েটির বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে মেয়েটির বাড়িতে গেলেন না। কেবলমাত্র প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক ব্যধি নির্মূল করা সম্ভব নয়। এর জন্য সমাজের সর্বস্তরের সহযোগিতা প্রয়োজন।” |
অরণ্যসুন্দরী মহাসঙ্ঘে আলোচনাসভা। —নিজস্ব চিত্র। |
সভায় শ্রোতার আসনে ছিলেন জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকার হাজার খানেক মহিলা। তাঁদের মধ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, আশা কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের পাশাপাশি, বেশ কিছু অভিভাবকও ছিলেন। সকলের উদ্দেশে ঝাড়গ্রাম ব্লক সমাজ কল্যাণ আধিকারিক দীপ্তেন্দুপ্রসাদ সরদার বলেন, “আপনারা মায়েরা চারপাশের জগৎটাকে দেখুন। এত কিছুর পরেও আপনারা আন্তরিক না-হলে এ ধরনের সভা, সচেতনতামূলক নাটক কিংবা কর্মসূচি সবই তো অর্থহীন।”
তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে গত তিন মাস ধরে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন স্কুলে, মেলায় ও গ্রামে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে নাটক দেখানো হচ্ছে। এ দিন সভায় ঝাড়গ্রাম মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কুশল চক্রবর্তী বলেন, “নাটক দেখে পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠছে। অথচ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের অভিভাবক ও গ্রামবাসীর একাংশ ওই কর্মসূচির বিরুদ্ধে পাল্টা কুৎসা প্রচার করে বলছেন, নাটকের লোভ দেখিয়ে অভিভাবকদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। কয়েক জায়গায় রীতিমতো প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের নাটক প্রদর্শন করতে হয়েছে।”
‘সুচেতনা’র সম্পাদিকা স্বাতী দত্ত সভায় তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে জানালেন, গত এক বছরে তাঁরা জঙ্গলমহলের চারটি ব্লকের মাত্র ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে ৩৮৬টি বাল্যবিবাহের ঘটনা পেয়েছেন। এর মধ্যে কেবলমাত্র গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২৭টি বাল্যবিবাহের ঘটনা পাওয়া গিয়েছে। সেখানে চাইল্ড লাইন ও পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতায় মাত্র ৪৭টি বাল্যবিবাহের ঘটনা প্রতিরোধ করা গিয়েছে। স্বাতীদেবীর কথায়, “এই সাফল্য সিন্ধুতে বিন্দুবৎ। তবুও আমরা লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছি।”
সভায় বিশিষ্ট লোকশিল্প ও সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার স্ত্রীর পর পর দু’টি মেয়ে হওয়ার পরে পরিজন-পড়শিদের কেউ কেউ বলেছিলেন একটি পুত্রসন্তান হলে ভাল হত। আমরা শুনিনি। এখন আমার দুই মেয়েই এমএ পাস করে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত।”
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাঁওতালি সাহিত্যিক শৈলজানন্দ হাঁসদা, ঝাড়গ্রামের পুরপিতা ঘনশ্যাম সিংহ, মেদিনীপুর জেলা আদালতের প্রবীণ আইনজীবী শান্তিকুমার দত্ত।
|
পুরনো খবর: নাবালিকার বিয়ে রুখল প্রশাসন |
|
|
|
|
|