করিম বেঞ্চারিফার চাকরি বাঁচাতে এ বার মাঠে নামলেন ওকোলি ওডাফারা।
মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্রর কাছে ফুটবল বিভাগের এক কর্তার মাধ্যমে যে চিঠি সোমবার বিকেলে পৌঁছেছে, তাতে ওডাফা, সন্দীপ নন্দী, কাতসুমি, রাম মালিক-সহ সব ফুটবলারের সই আছে। লেখা হয়েছে, “দলের ব্যর্থতার জন্য কোচ একা দায়ী নন। এই ব্যর্থতা সবার। কোচকে যেন ছাঁটাই করা না হয়।” চিঠি পেয়ে মোহন-সচিব হেসে বললেন, “চিঠি যেখানে দেওয়ার দিয়ে দেব।”
চিঠিতে অবশ্য বাগান কর্তারা একটুও নরম হননি। এক শীর্ষ কর্তা বললেন, “চিঠি-ফিটি দিয়ে কিছু হবে না। ম্যাচ না জিতলে করিমের চাকরি যাবেই। ওডাফার পরিবর্ত পেলেও ওকে রাখা হবে না।” বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, করিমের কাজে কর্তারা এতই তিতিবিরক্ত যে, তাঁরা চাইছেন কোচ নিজেই সরে দাঁড়ান। ফুটবলারদের চিঠিতে সেই বিরক্তি আরও বেড়েছে। কর্তাদের ধারণা, ফুটবলারদের নিয়ে কোচ রাজনীতি করছেন। এর আগে একবার বকেয়া মেটানোর জন্য ক্লাবের ফুটবলারদের হয়ে সরব হয়েছিলেন তৎকালীন কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য। শেষ পর্যন্ত ফুটবলাররাই অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ক্লাব-কর্তাদের চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, “কোচই তাতিয়েছেন।’’ সে বার সুব্রতর চাকরি গিয়েছিল। করিমের পক্ষে লেখা ফুটবলারদের সোমবারের চিঠিও যে কোচের বিপক্ষে যাচ্ছে সেটা বাগান কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেই বোঝা যাচ্ছে। |
মাথায় ঝুলছে খাঁড়া
বাগানে একাকী করিম। সোমবার দলের অনুশীলন চলাকালীন। ছবি: উৎপল সরকার।
|
রবিবার কর্মসিমিতির সভার পর ক্লাবের সিদ্ধান্ত জেনে একাধিক শীর্ষ-কর্তাকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেন করিম। কেউই ফোন ধরেননি। কারণ, করিমের সঙ্গে তাঁকে ছাঁটাই করা নিয়ে কে কথা বলবেন, তা নিয়ে রবিবারের সভায় তীব্র বিতণ্ডা হয় কর্তাদের মধ্যে। অর্থসচিব দেবাশিস দত্তকেই দায়িত্ব নিতে বলেন অনেকে। কিন্তু দেবাশিস জানিয়ে দেন, “কর্মসমিতির যে সব সদস্য ফুটবল নিয়ে এত কথা বলছেন, তাঁরাই কথা বলুক করিম এবং ওডাফার সঙ্গে।” শেষে ঠিক হয়, ১৯ ডিসেম্বরের সভায় কোচ এবং ওডাফার সঙ্গে কথা বলা হবে।
করিমও সম্ভবত বুঝেছেন, বাগানে তাঁর টিকে থাকা কঠিন। এ দিন তাঁকে একই সঙ্গে উদাস এবং জেদি মনে হচ্ছিল। “দলের পারফরম্যান্স খারাপ হলে সব কোচকেই সরতে হয়,” অনুশীলনের পর উদাস ভাবে এই কথা বলেও বেরিয়ে আসে মরক্কান জেদ। “স্ট্র্যাটেজি ঠিক করার দায় আমার, প্রথম একাদশ বেছে নেওয়ার দায় আমার, রোজকার অনুশীলনের দায় আমার। এর বাইরে কোনও দায় কিন্তু আমার নেই।” দল কি আপনি বাছেননি? করিমের উত্তর, “আমি কী বলেছি দল গঠনের দায় আমার? বলিনি তো।”
করিমের জন্য দু’টি ম্যাচ ডেড-লাইন ঠিক করে দিয়েছেন কর্তারা। তার একটি আজ কলকাতা লিগে এরিয়ানের বিরুদ্ধে। মোহন-কোচের কপাল এতটাই খারাপ যে, এ দিনই অনুশীলনে হাঁটুতে চোট পেলেন দলের এক নম্বর স্ট্রাইকার ওডাফা। রোউইলসনের সঙ্গে সংঘর্ষে। ফলে রঘু নন্দীর টিমের বিরুদ্ধে মাত্র দু’জন বিদেশি করিমের হাতে-- ইচে এবং কাতসুমি। ক্রিস্টোফার কলকাতা লিগে খেলতে পারবেন না। সাবিথ অফিস খেলতে গেছেন। ফলে ওডাফাকে জোর করে না নামালে করিমের হাতে স্ট্রাইকারই নেই। করিম যে বেকায়দায় বোঝা গেল অনুশীলন চলাকালীন মাঠের ওপর সেনা হেলিকপ্টার চক্কর দেওয়ার সময়। “ওটা আমাকেই নিতে এসেছে মনে হচ্ছে। তবে আমি ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছি,” নিজের চারপাশের গুমোট ভাব কাটাতে বলছিলেন করিম।
শুধু করিম নন, কর্তাদের তোপের মুখে ওডাফার গলাতেও করুণ সুর। যা একেবারেই ওডাফাচিত নয়। “গোল করার মরিয়া চেষ্টা করছি। কেন যে হচ্ছে না বুঝতে পারছি না। ঈশ্বরই জানেন,” বলছিলেন এ বছর চূড়ান্ত ফ্লপ বাগান অধিনায়ক। করিমের জায়গায় ট্রেভর মর্গ্যান সহ কয়েক জনের নাম যেমন আলোচনায় আছে, তেমনই ওডাফার জায়গায় র্যান্টির নাম হঠাৎ ভেসে উঠেছে বাগানে। মর্গ্যান বা র্যান্টিকে নেওয়া নিয়েই অবশ্য অনেক যদি-কিন্তু আছে। |
মঙ্গলবারে কলকাতা লিগ
মোহনবাগান : এরিয়ান (বারাসত, ৪-০০) |