মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে সোমবার দুপুরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ অবরোধ করলেন অভিভাবক এবং ছাত্রেরা।
গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্টে পাশ করানোর দাবিতে প্রধান শিক্ষিকা-সহ অন্য শিক্ষিকাদের রাতভর ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন সন্তোষপুরের ঋষি অরবিন্দ বালিকা বিদ্যাপীঠের একদল ছাত্রী। ওই ঘটনার পরে রাজ্যের বহু স্কুলে টেস্টে ফেল করা ছাত্রছাত্রীরা পাশ করানোর দাবিতে ঘেরাও-আন্দোলন শুরু করে। এ বছরও টেস্টের ফল বেরোনোর পরে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। এ ভি স্কুলের পাশাপাশি এ দিনই মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ গার্লস হাইস্কুলেও একই দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘেরাও করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য এমন আন্দোলনের কড়া বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, “টেস্টে কে পাশ করল, কে করতে পারল না, সেটা স্কুলই ঠিক করবে। এটা স্কুলের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। সংশ্লিষ্ট বোর্ডও এতে ঢুকবে না। আর পাশ করানোর দাবিতে চরম পন্থা নেওয়া, ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো মোটেই অনুমোদনযোগ্য নয়।”
কী ঘটেছে এ দিন? পুলিশ জানায়, দুপুর দেড়টা নাগাদ শ্যামবাজার এ ভি স্কুলের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শ’খানেক ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকেরা চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ অবরোধ করেন। এর ফলে উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় যানজট তৈরি হয়। পরে অন্য রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। অবরোধ তুলতে ঘটনাস্থলে আসেন কলকাতা পুলিশের পদস্থ আধিকারিকেরা। বিক্ষোভকারী ছাত্র ও অভিভাবকেরা অবশ্য কোনও মতেই অবরোধ তুলতে রাজি হননি। এর পরে পুলিশকর্তারা কথা বলেন স্কুল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও। স্কুল-কর্তৃপক্ষ ফেল করা ছাত্রদের পাশ না করানোর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। |
প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে স্কুল-কর্তৃপক্ষ ফেল করা ছাত্রদের খাতা মঙ্গলবার তাদের অভিভাবকদের দেখাতে রাজি হন। ঠিক হয়, আজ, মঙ্গলবার অভিভাবকদের একটি প্রতিনিধি দল স্কুল-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। এর পরে অবরোধ তোলা হয়। কিন্তু রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়।
ওই স্কুল-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার ফল বেরিয়েছে গত শুক্রবার। এই স্কুলে এ বছর মাধ্যমিকে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৪৩ জন। তার মধ্যে ৩৯ জন অকৃতকার্য হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ২৫৭ জন ছাত্রের মধ্যে ৪৭ জন অকৃতকার্য হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছাত্র এবং তাদের অভিভাবকরা এ দিন স্কুলে এসে পাশ করানোর দাবিতে গোলমাল শুরু করেন। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ কয়েক জন অভিভাবক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জনকুমার রপ্তানকে ঘেরাও করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় ছাত্র এবং অভিভাবকেরা চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ অবরোধ করেন। এর মধ্যে স্কুলের গেট বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। তখন বিক্ষোভকারীরা পাঁচিল টপকে স্কুলে ঢুকতে থাকে। তাদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তিও হয়। কলকাতা পুরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর, তৃণমূলের পার্থ মিত্র স্কুলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্কুল-কর্তৃপক্ষ এবং বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার মেটাতে দু’পক্ষকেই অনুরোধ জানান।
কিন্তু ফেল করা ছাত্রদের কেন পাশ করাতে হবে? এ ব্যাপারে সুশান্ত চৌধুরী নামে এক অভিভাবক বলেন, “প্রি-টেস্টে বিজ্ঞান শাখায় আমার ছেলে ভালই ফল করেছিল। কিন্তু টেস্ট পরীক্ষার ফল বার হওয়ার পরে দেখা গেল, ওর নাম অকৃতকার্যদের তালিকায়। আমরা ওর খাতা দেখতে চাই। কিন্তু রাজি হননি স্কুল কর্তৃপক্ষ।” ছাত্রদেরও অভিযোগ, প্রধান শিক্ষককে বারংবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাদের খাতা দেখানো হয়নি। ছাত্রদের অভিযোগ, টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নও সিলেবাসের বাইরে থেকে হয়েছে।
এ ব্যাপারে কী বলছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ? স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “যারা ফেল করেছে, তাদের কোনও ভাবেই পাশ করানো যাবে না। প্রশ্ন পর্ষদের নিয়মনীতি মেনেই তৈরি হয়েছে। পাঠ্যক্রমের বাইরে কোনও প্রশ্ন করা হয়নি। যে সব অভিভাবক খাতা দেখতে চান, তাঁরা আগামী ১৮ তারিখ এসে তা দেখতে পারেন বলে আগেই ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু অভিভাবকেরা তা মানতে চাননি।”
ফেল করা ছাত্রদের পাশ করানোর দাবিতে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রবীণ শিক্ষকেরা। অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন, “এই ঘটনাকে নতুন করে ধিক্কার জানানোর কিছু নেই। মানুষই একে ধিক্কার জানাবেন। গত বছরও এ রকম কিছু ঘটনা ঘটেছিল। আমার মনে হয় না, ছাত্র-অভিভাবকেরা অংসগঠিত ভাবে এটা করছেন। বাইরের মদত ছাড়া এটা সম্ভব নয়। যাঁরাই এই ধরনের ঘটনাকে সংগঠিত করুন না কেন, তাঁরা যেন এ সব থেকে বিরত হন। এর প্রভাব ভাল হবে না।” প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, “রায়গঞ্জ কলেজে অধ্যক্ষকে মারধরের মধ্য দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত হয়েছিল, স্কুলস্তরে এ ধরনের বিক্ষোভ তাতে নতুন সংযোজন।”
|