দাঁড়িয়ে থাকা বড় লরির পিছনে গাড়ি ধাক্কা মারায় মৃত্যু হল একই পরিবারের চার জনের। গুরুতর জখম আরও এক জন। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে বুদবুদের কোটা মোড়ের কাছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে।
পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় কাঁকসার গোপালপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ শ্যাম (৪২), তাঁর স্ত্রী তন্দ্রা শ্যাম (৩২), খুড়তুতো ভাই সৌম্যজিৎ (১৮) এবং ছেলে শিবমের (৭)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিশ্বজিৎবাবুর মেয়ে স্নেহাকে ভর্তি করা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রাতে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে কলকাতায় পাঠানো হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডিএসপি-র কর্মী বিশ্বজিৎবাবু দু’দিন আগে নিজের গাড়ি নিয়ে সপরিবারে গলসির ভুড়িগ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলেন। এ দিন বিকেলে তিনি নিজেই গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পুলিশ জানায়, গাড়ির সামনের আসনে তাঁর পাশে ছিলেন স্ত্রী তন্দ্রাদেবী। পিছনের আসনে ছিলেন সদ্য এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়া খুড়তুতো ভাই সৌম্যজিৎ ও বিশ্বজিৎবাবু-তন্দ্রাদেবীর ছেলে শিবম ও মেয়ে স্নেহা। কোটা মোড়ের কাছে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। নিয়ম ভেঙে জাতীয় সড়কের পাশে দাঁড়িয়েছিল একটি দশ চাকার লরি। বিশ্বজিৎবাবুর গাড়ি তার পিছনে ধাক্কা মারে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে গেলেও বিশ্বজিৎবাবুরা গাড়িতে এমন ভাবে আটকে ছিলেন যে তাঁদের বের করতে পারেননি। কোনও রকমে রক্তাক্ত স্নেহাকে বের করে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ পৌঁছতে দেরি করে। যদিও বুদবুদ থানা তা মানেনি। পুলিশ পৌঁছে বাকি গাড়িটিকে ক্রেন দিয়ে টেনে বুদবুদ থানায় নিয়ে গিয়ে যন্ত্র দিয়ে গাড়ি কেটে দেহগুলি বের করে।
ফাঁকা রাস্তায় কী ভাবে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারাল, সে নিয়ে ধন্দে পুলিশ। গাড়ির যন্ত্রাংশে কোনও ত্রুটি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ঠিক কি হয়েছিল, এখনই বলা মুসকিল। বিশ্বজিৎবাবুর মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠলে হয়তো বিষয়টি কিছুটা পরিষ্কার হবে।” তবে জাতীয় সড়কের ধারে বাস, লরি বা অন্য যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা থাকা সত্ত্বেও জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষে লরি দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চালকদের অভিযোগ, এ জন্য গাড়ি চালাতে গিয়ে ঝুঁকি থেকে যায়। পুলিশ জানায়, জাতীয় সড়কের ধারে বেআইনি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা লরিগুলির বিরুদ্ধে টহল শুরু হয়েছে।
গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, কর্মসূত্রে এবং ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার জন্য বিশ্বজিৎবাবুরা ইদানীং দুর্গাপুরে থাকতেন। তবে নিয়মিত গ্রামে আসা-যাওয়া ছিল। এ দিন দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামে। |