জেলা জুড়েই বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবা, ক্ষোভ কোচবিহারে
জেলার সার্বিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বেহাল বলে অভিযোগ উঠেছে কোচবিহারে। অধিকাংশ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী গেলেই জেলা হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এ ছাড়া, কোথাও মহকুমা হাসপাতালে আট মাস খারাপ আলট্রাসোনোগ্রাফি ব্যবস্থা। কোথাও চিকিৎসকের অভাবে বন্ধই হয়ে গিয়েছে একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলায় ২৮২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ১৭২ জন। ১১০ টি চিকিসকের পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বেহাল গোপালপুর এবং খেতি ফুলবাড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গোপালপুরের একজন চিকিৎসককে বছর দেড়েক আগেই কোচবিহার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সম্প্রতি আরেকজন চিকিৎসক তপন দাসকে নাটাবাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বদলি করে দেওয়া হয়। এর পর তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। মাথাভাঙার খেতি ফুলবাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির দু’জন চিকিৎসকের কেউ নেই। ২৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৯টিতে কোনও মেডিক্যাল অফিসার নেই। ৭টি চ্যারিটেবল ডিসপেনসরির পাঁচটিতে নেই কোনও মেডিক্যাল অফিসার। জেলার ১২টি ব্লকের সবক’টি হাসপাতালে মোট ৪৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ২৭ জন। তাই সেগুলি ‘রেফার হাসপাতালে’ পরিণত হয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। কোচবিহার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য শুভাশিস সাহা বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “গত দু’বছরে উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক চিকিৎসক বাইরে চলে গিয়েছেন। অনেকে অবসরও নিয়েছেন। কিন্তু নতুন করে কোনও নিয়োগ না হওয়ায় ওই সমস্যা তৈরি হয়েছে।”
শুধু স্বাস্থ্যকেন্দ্রই নয়, বাদ নেই মহকুমা হাসপাতালও। প্রায় আট মাস ধরে আলট্রাসোনোগ্রাফি বিভাগ বন্ধ হয়ে রয়েছে মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কয়েক লক্ষ মানুষ মাথাভাঙ্গা মহকুমা হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন কয়েকশো রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যান। আট মাস আগে ওই পরিষেবা চালু ছিল। উচ্চশিক্ষার জন্য ওই চিকিৎসক চলে যাওয়ার পর নতুন কেউ আসেননি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গর্ভবতীদের জন্য আলট্রাসোনোগ্রাফি পরিষেবা বিনামূল্যে করা হয়। অন্যদের ক্ষেত্রে ১৫০ টাকা লাগে। সেখানে বাইরে থেকে তা করতে হলে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হয়। হাসপাতালের সুপার গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “হাসপাতালে রেডিওলজিস্ট নেই। সে কারণে আলট্রাসোনোগ্রাফি পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” এ বিষয়েও কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভাশিসবাবু।
জেলার স্বাস্থ্য পরিষেবা এই হাল প্রসঙ্গে কোচবিহার হাসপাতাল রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অভিযোগ, “বাম আমলে যথেষ্ট মেডিক্যাল কলেজ তৈরি না করার জন্য ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। চিকিৎসকেরা অবসর নিচ্ছেন। কিন্তু নতুন চিকিৎসক নিয়োগ করা যাচ্ছে না।” বাম আমলেও যে চিকিৎসকের সংখ্যা জেলায় কম ছিল সে কথা স্বীকার করলেও কোচবিহার জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএম নেতা দিলীপ বিশ্বাস দাবি করেন, “আমার মনে আছে বাম আমলে শেষবার স্বাস্থ্য দফতরের যে বৈঠকে ছিলাম তাতে জেলায় ২৫ জন চিকিসক কম রয়েছে বলে জেনেছিলাম। এখন তো যা শুনছি তাতে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর।”
পরিষেবার হাল ফেরানোর দাবিতে আন্দোলনেও নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলি। সম্প্রতি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল শ্রমিক কংগ্রেস। তৃণমূল শ্রমিক কংগ্রেসের মাথাভাঙা মহকুমার নেতা আলিজার রহমান বলেন, “এলাকার অধিকাংশ মানুষ ওই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভিন্ন মহলে দরবার করছি। এভাবে পরিষেবা বন্ধ করে রাখা মানা যায় না।” সিপিএমের যুব সংগঠনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের নেতা কাজল রায় বলেন, “দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন না হলে আন্দোলনে নামা হবে।”
রবীন্দ্রনাথবাবুর আশ্বাস, “আমাদের সরকার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার আসন বাড়িয়েছে নতুন মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে দ্রুত ওই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.