আগেও প্রচার হয়েছে। খরচ হয়েছে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু, সুফল মেলেনি ততটা। দিন দিন বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর তাই নতুন কৌশলে ফের ঝাঁপাতে চাইছে সর্বাত্মক প্রচারে।
কেননা, প্রচারই এইচআইভি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায়। তা মানছে স্বাস্থ্য দফতরও। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “এ বার আমরা প্রচারের জায়গা হিসাবে কলেজ থেকে মেলা সব ক্ষেত্রকেই বেছে নিয়েছি। মেলায় স্টল দেওয়া থেকে ক্যুইজ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২৩ ডিসেম্বর থেকে ধারাবাহিক, সর্বাত্মক প্রচার চলবে।”
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্যই বলছে দিন দিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচে প্রচার সত্বেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য আসেনি। উদ্বিগ্ন জেলা স্বাস্থ্য দফতর তাই এ বার গ্রামগঞ্জে, কলেজে কলেজে ধারাবাহিক প্রচার শুরু করতে চলেছে। সাধারণের কাছে পৌঁছতে ক্যুইজ-সহ একাধিক জনপ্রিয় কর্মসূচিও নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “এ বার শুধু গ্রাম বা শহর এলাকা নয়, বাড়ি থেকে যৌনপল্লি সর্বত্র প্রচার চালানো হবে। সচেতনতাই একমাত্র এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।” |
জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে প্রায় পাঁচ থেকে সাতটি ব্লককে ‘হাই রিস্ক জোন’ চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সামাজিক কারণে দফতর ওই ব্লকগুলির নাম প্রকাশ না করলেও প্রচারে ওই ব্লকগুলিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে খবর। কোনও আক্রান্তের পরিবার যাতে সামাজিক বয়কটের মুখে না পড়ে সে ব্যাপারেও বাড়তি নজরদারি রাখতে চাইছে দফতর। গোটা ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে জোর দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু, এত দিনও তো প্রচার করা হত? তা হলে কেন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দফতরের এক কর্তা স্বীকার করেন, “আগে নাম কা ওয়াস্তে প্রচার হত। কেউই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। এখন আক্রান্তের সংখ্যা দেখে সবারই চক্ষু চড়ক গাছ! তাই এ বার সবাই চাইছে প্রচারে জোর দিতে।”
এ বার কী ভাবে প্রচার হবে? দফতর সূত্রের খবর, ট্যাবলো-সহ গাড়ি করে মাইকিং করা হবে। ওই গাড়ির পিছনে থাকবে একটি ছোট গাড়ি। তাতে স্বাস্থ্য দফতরের মনোনীত শিল্পীরা থাকবেন। তাঁরা বাউল, ম্যাজিক, পথনাটিকা, লোকসঙ্গীত-সহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এইচআইভি কেন হয়, কী ভাবে এর প্রতিকার সম্ভব তা বিস্তারিত বুঝিয়ে প্রচার করবেন। আশাকর্মী, পঞ্চায়েত কর্মীরা তাঁদের সহযোগিতা করবেন। জেলায় মোট চারটি প্রচার গাড়ি বার হবে। মোট ১১০টি গ্রামে শিল্পীরা দেড়-দু’ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠান করবেন। জেলার ২৯টি ব্লকেই প্রচার করা হবে। পুর শহরগুলিতে ২৩ ডিসেম্বর থেকে প্রচার শুরু হবে।
রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “কলেজে কলেজে সচেতনতা মূলক প্রচার হলে হাজার হাজার পড়ুয়া বিষয়টি জানতে পারবেন। পরে তাঁরাই প্রচার করতে পারবেন।” তিনি জানান, “যৌনপল্লি এলাকায় প্রচারে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া এইচআইভি বাহক গর্ভাবতী মহিলারাও যাতে হাসপাতালে প্রসব করাতে পারেন সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।” |