আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল
সুপারকে কড়া ধমক পরিদর্শকের
চিকিত্‌সকের সংখ্যা ৩৫ জন। হাসপাতালে উপস্থিত আছেন ৬ জন। নার্সের সংখ্যা ১০৭ জনের মধ্যে উপস্থিতি অর্ধেক। নভেম্বর মাসে চিকিত্‌সকদের হাজিরা-খাতার অনেকগুলি পাতা ছেঁড়া।
শনিবার দুপুরে আচমকাই আরামাবাগ হাসপাতালে ঢুকে এ রকম নানা অসঙ্গতি দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন রাজ্য বিধানসভার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মাজি। হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায়কে ধমক দিয়ে বললেন, “হাসপাতালটাকে এ রকম পচা-গলা কঙ্কালসার বানিয়ে রেখেছেন? কোন আহাম্মক চিকিত্‌সক হাজিরা খাতার পাতা ছিঁড়েছে? দু’দিন ডিউটি করে ৬ দিন সই করে দেওয়ার এ সব কারসাজি চলতে দেওয়া যাবে না। আপনি ক্লিনচিট দিচ্ছেন বলেই এ সব চলছে। গৃহকর্তা নড়বড়ে হলে যা হয়, তা-ই এখানে চলছে। জনতা উত্তেজিত হবেই।” সুপার শুনলেন মাথা নিচু করে।
হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তণিমা মণ্ডল ছিলেন নির্মলবাবুর সঙ্গে। তাঁর দিকে তাকিয়ে নির্মলবাবুর নির্দেশ, “চন্দননগর হাসপাতাল, শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল খারাপ ছিল। সেখানে যাঁরা কাজ করছিলেন না, তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার পরে এখন কাজ হচ্ছে। এখানেও সেই প্রক্রিয়া নেওয়া হোক।”

হাসপাতালে খোঁজ-খবর করছেন আধিকারিকেরা।—নিজস্ব চিত্র।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আবার সুপার নির্মাল্য রায়কে পরামর্শ দিলেন, যাঁরা যথাযথ ডিউটি করছেন না, তাঁদের অবিলম্বে শো-কজ করতে। নির্মলবাবু বললেন, “মনে রাখবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে আরামবাগ হাসপাতালের উপরে নজর দিয়েছেন। তিনি এই হাসপাতালটাকে পাখির চোখের মতো করতে চান। মুখ্যমন্ত্রী যখন সুস্থ কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে চাইছেন, তখন হাসপাতালের এই পরিবেশ বরদাস্ত করা হবে না।”
এ দিন আচমকা আরামবাগ হাসপাতালে আসা নিয়ে নির্মলবাবুর ব্যাখ্যা, “এই হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে নবান্নে তো বটেই, সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ যাচ্ছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই কাউকে কিছু না জানিয়ে আসা। এমনকী, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকেও কোথায় যাচ্ছি না জানিয়ে সঙ্গে নিয়ে এসেছি। তিনি প্রসূতি ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড এবং সার্জিক্যাল ওয়ার্ডেও ঘোরেন।” তণিমাদেবী আবার কয়েক জন চিকিত্‌সককে ডাক পাঠিয়ে তাঁদের দ্রুত শুধরে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। ওয়ার্ডগুলির বাথরুম-টয়লেট নোংরা হয়ে থাকতে দেখে ভর্ত্‌সনা করেছেন। কয়েক জন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, তাঁদের ওষুধ কিনতে হয়েছে বাইরে থেকে। হাসপাতালে সেই ওষুধ থাকা সত্ত্বেও কেন এবং কে তা বাইরে থেকে কিনতে বলেছেন, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছেন সুপারকে। নির্দেশ দিয়েছেন, ওই সব কেনা ওষুধের দাম যেন হাসপাতাল থেকে রোগীদের মিটিয়ে দেওয়া হয়।
খাবার নিয়েও কিছু অভিযোগ উঠেছে। খাবারের মান, পরিমাণ এবং পদ নিয়ে নিয়মিত তদারকি যাতে হয়, সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। ফিরে যাবার আগে তিনি বলেন, “সমস্ত বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। চিকিত্‌কদের নিয়মিত ডিউটি করার কথা। তা যাঁরা করছেন না, সে বিষয়ে তদন্ত করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে আরও কিছু ঘটনার তদন্ত চলছে। সেগুলির ক্ষেত্রেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বেশ কিছু প্রতিশ্রুতিও দিয়ে গিয়েছেন নির্মলবাবু। যেমন, আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে জানুয়ারি মাস নাগাদ বেশ কিছু চিকিত্‌সক দেওয়া হবে। ১০টি ডায়ালিসিস যন্ত্র-সহ বেশ কিছু আধুনিক চিকিত্‌সা সরঞ্জাম দেওয়া হবে। মর্গ সংস্কার হবে। রোগী সহায়তা কেন্দ্র তৈরি, রাতে রোগীর পরিজনদের থাকার জায়গা করা হবে বলেও আশ্বাস মিলেছে।
সুপার নির্মাল্যবাবু পরে বলেন, “পরিবেশ ফেরানোর চেষ্টার কসুর করছি না। এ রকম পরিদর্শন একটু ঘন ঘন হলে সেই কাজ ত্বরান্বিত হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.