দেশের স্বাস্থ্য মানচিত্রে অসমের ধুবুরির করুণ দশা দেখে শেষ পর্যন্ত নড়ে বসেছে কেন্দ্র। যোজনা কমিশনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ এবং নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রককে ধুবুরি-সহ অসমের চরভাসি এলাকা, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলির জন্য সার্বিক পরিকল্পনা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বন্যা লেগেই রয়েছে। যাতায়াতের পথ দুর্গম। তার সঙ্গে জুড়েছে অপুষ্টি, স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাব। মাঝের চরের বাসিন্দা মণিরুল প্রশ্ন তুললেন, “পরিকল্পনা হয়েও লাভটা কী?” কাজের খোঁজে বছর পাঁচেক হিল্লি-দিল্লি ঘুরে শেষ পর্যন্ত থিতু হয়েছেন ধুবুরিতেই। ধুবুরি টাউনে মোবাইল রিচার্জের দোকান রয়েছে তাঁর। বললেন, “ঘোষণার তো কোনও কমতি নেই। কিন্তু রূপায়ণ কে করবে? একটি সরকারি কর্মচারীও থাকতে চায় না চরে।”
পাকা রাস্তা তো অনেক দূর, মাঝেমধ্যেই নদীর ভাঙন মুছে দেয় সরু পায়ে-চলা পথকেও। ভরসা কেবল সাইকেল। ফলে রাতবিরেতে কারও শরীর খারাপ হলে উপরওয়ালাই ভরসা। মণিরুল বললেন, “সন্ধ্যা নামলেই সাধারণ মানুষের জন্য ফেরি পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। একা গোটা বোট ভাড়া করে যাওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য খুব কম চরবাসীর রয়েছে। ফলে সকাল না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।” |
ধুবুরি টাউনে এলেও যে সুচিকিৎসা হবেই, এমন ভরসা নেই। অভিযোগ, সাধারণ মানুষের জন্য ধুবুরিতে যে টাউন হাসপাতালটি রয়েছে, তাতে অধিকাংশ সময়েই চিকিৎসক অমিল। ধুবুরি সিভিল হাসপাতালে ৪৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা। রয়েছেন এই সংখ্যার অর্ধেকের কিছু বেশি। শুধু চিকিৎসকই নয়, রয়েছে চিকিৎসাকর্মীরও অভাব। ফলে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার অবস্থাও তথৈবচ।
এর সঙ্গেই যোগ হয়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব। যেমন আমিনার চরের বাসিন্দা মদিনা। হাড় জিরজিরে চেহারায় এ নিয়ে পঞ্চম বার মা হয়েছেন। প্রতি বার ঘরেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। এ যাবৎ গর্ভাবস্থায় কোনও দিনই টিটেনাস ইঞ্জেকশন নেননি তিনি। পঞ্চম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে টিটেনাস সংক্রমণের শিকার হন। সেই প্রথম হাসপাতালে যান। কিন্তু মা বেঁচে গেলেও মারা গিয়েছে বাচ্চাটি। মদিনা বলেন, “কী করতে হয় কিছুই জানতাম না। ‘আশা’ কর্মীরাও কিছু জানাননি।”
এই পরিস্থিতিতে ধুবুরি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসেছে কেন্দ্র। বর্তমানে গর্ভবতী মা এবং সদ্যোজাত শিশুদের মৃত্যু-হারের সূচকে শীর্ষে রয়েছে অসম। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা দেশে যখন প্রতি এক হাজারে শিশু-মৃত্যুর হার ৪৭, তখন অসমে সেই গড় ৫৮। শুধু ধুবুরি ধরলে হিসেবটা ৭২-এর কাছাকাছি! আর গর্ভবতী মায়েদের মৃত্যুর হার দেশে যখন প্রতি লাখে ২১২ জন, তখন অসমে তা প্রায় ৩৮০-র কাছাকাছি। যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার দাবি, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন চালু হওয়ার আগে এই হার ছিল ৪৮০। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু হওয়ার পর পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। |