আগুনে পুড়ে ছাই হল বৌভাতের আয়োজন। ভস্মীভূত হল অনুষ্ঠান মঞ্চ, আসবাব পত্র ও রান্নার সামগ্রী বোঝাই চারটি টিনের ঘর। রবিবার দুপুর নাগাদ ঘটনাটি ঘটে ময়নাগুড়ির আনন্দনগর পাড়ায়। ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে জখম হয়েছেন অনুষ্ঠানের রান্নার ঠাকুর। তাঁকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জ্বলন্ত ঘর থেকে দুজন শিশুকে উদ্ধার করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে আরও একজন জখম হন। তাঁকে ময়নাগুড়ি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। জলপাইগুড়ি দমকলের দুটি ইঞ্জিন পৌঁছানোর আগে বিয়ে বাড়ির বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। পরে দমকল আগুন নিভিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনের কারণ জানা যায়নি।
বৌভাতের অনুষ্ঠান উপলক্ষে এদিন স্টেশন রোড সংলগ্ন ওই বাড়িতে প্রচুর লোকজন ছিলেন। বিকেলের পরে আমন্ত্রিত অতিথিরা আসবেন। তারই প্রস্তুতিতে প্রত্যেকে ব্যস্ত ছিলেন। রান্নাও বসেছিল। ঠাকুর নারায়ণ ঘোষ খড়ির বড় উনুন থেকে চাটনি নামিয়ে বাঁধাকপি ঘণ্ট তৈরির আয়োজন করেন। সেই সময় কেমন করে ঘরের চাল ছাপিয়ে আগুনের শিখা উঠল, বাড়ির কেউ তা বলতে পারেনি। এমনকি দমকল কর্মীরাও জানাতে পারেননি অগ্নিকাণ্ডের কারণ। জলপাইগুড়ির দমকল আধিকারিক রামেশ্বর পাণ্ডে বলেন, “আগুন লাগার কারণ স্পষ্ট নয়।” |
বিয়ে বাড়ির অভিভাবক তথা পাত্রের বড় ভাই পেশায় কাঠমিস্ত্রি অসিত মণ্ডল জানান, কল তলায় বসে মাছ মাংস ধোঁয়ার কাজ করছিলাম। চিৎকার শুনে সব ফেলে দৌঁড়ে এসে দেখি টিনের বেড়া দেওয়া দুটি ঘর জ্বলছে। মুহূর্তে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কাপড়ের প্যান্ডেল। তিনি বলেন, “বাড়ির লোকজন জল মাটি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। প্রতিবেশীরাও ছুটে আসেন। কিন্তু আগুনের তেজ এতটাই ছিল, যে কাছে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ওই সময় বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনে মারাত্মক জখম অবস্থায় রান্নার ঠাকুর নারায়ণবাবুকে উদ্ধার করা হয়।”
আগুন দেখে নববধূ জয়ন্তী দেবীকে পাশের বাড়িতে নিয়ে যান প্রতিবেশীরা। সেখানে ঘনঘন মূর্ছা যান। কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরিবারটির বড় বউ প্রণতিদেবী জানান, কয়েক মিনিটের মধ্যে দুটি ঘর, প্যান্ডেল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিয়ে বাড়ির আসবাবপত্র, আত্মীয়-স্বজনদের জামা কাপড় কিছুই রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বাড়ির আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের অসিতবাবুর কাকতো ভাই সজল মণ্ডলের বাড়িতেও। সেখানেও দুটি ঘর পুড়ে ছাই হয়। ওই বাড়িতে জ্বলন্ত ঘরের ভিতর থেকে দুটি শিশুকে উদ্ধার করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে জখম হন পেশায় গাড়ি চালক সজলবাবু। তিনি বলেন, “কিছু বুঝে ওঠার আগে সব শেষ হয়ে যায়। জামা কাপড়-সহ ঘরের কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি।”
চোখের সামনে ঘরদোর পুড়ে ছাই হতে দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েন নব বিবাহিত পাত্র বিশ্বজিৎ মণ্ডল। ভস্মীভূত ঘরের মাটির ভিটেতে দাঁড়িয়ে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “সব শেষ হয়ে গেল। ২০০ জন আমন্ত্রিত ছিলেন। রান্নার সমস্ত সামগ্রী এই ঘরে ছিল। একটি দানাও রক্ষা করতে পারিনি।” স্থানীয় সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য পরেশ রায় বলেন, “পরিবার দুটির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। প্রশাসনের কাছে ওদের সাহায্যের জন্য আবেদন করব।” |