বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোঁয়া প্রত্যন্ত গ্রামটির এক পাশে হরিঠাকুরের আশ্রম। গ্রামের অন্য প্রান্তে ভীমপুরের আসাননগরেই রয়েছে লালন সাঁইজীর মাজার। অথচ, দেশভাগের পর এমন গ্রামেই লেগে ছিল হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিদ্বেষ, হানাহানি। এরপর হরিনাম, লালন গান আর গানমেলার মতো ‘সহজ’ কর্মযজ্ঞ করেই গ্রামে এখন কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে চলছেন দু’সম্প্রদায়ের মানুষ।
নদিয়া সীমান্তের একবারে শেষে কৃষ্ণগঞ্জ থানার এই গ্রামের নাম খালবোয়ালিয়া-বিষ্ণুপুর। মাঝদিয়ার কাছে এখানেই মাথাভাঙা ও চূর্ণি নদীর সঙ্গমস্থল। সেখান থেকেই উৎস ইছামতী নদীরও। ওপারেই বাংলাদেশ। এই গ্রামেই মঙ্গলবার বিকাল থেকে সারা রাত লালল-ফকির উৎসবে মাতলেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। কেউ রান্নাবান্না করে পাত পেড়ে খাওয়ালেন। কেউ মাতলেন গানে। ‘সহজ মেলা’ নামে ওই অনুষ্ঠানে নানা ধরনের গানে যোগ দিলেন রাজ্য ছাড়াও ও পার বাংলার বিভিন্ন শিল্পীরা। |
ছিল শিল্পীদের আখড়াও। সেখানে রবীন্দ্রসংগীতে লালন গানের প্রভাব নিয়ে এ দিন আলোচনা করেন করিমপুরের বাউল অর্জুন খ্যাপা। মঞ্চে তাঁর গলায় ‘যদি মানুষ হতে চাও, জাতি ধর্ম ছেড়ে দিয়ে সরল সহজ পথে যাও,’ গানটি সব ধর্মের মানুষের বাহবা কুড়ায়। বহরমপুরের শিল্পী গৌতম ভট্টাচার্য ওরফে বুলা মস্তানের কাওয়ালি মাতিয়ে দেয় শ্রোতাদের। বাংলাদেশ থেকে আসা শিল্পী সুবর্ণশোভার পল্লিগীতির সারমর্মও ছিল, একমাত্র সুর-সংগীতই সব বাধা-বিভেদ দূর করে দিতে পারে।
সহজ মেলার মঞ্চে সনাতন দাশের ঢোল এবং নীলাংশুকের তালবাদ্য নজর কাড়ে। এ ছাড়া কলকাতার শিল্পী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের আঞ্চলিক গান, লালনগীতিতে পরেশ সরকার, নবকুমার দাস বাউল, নিখিল বিশ্বাস এবং বিপদভঞ্জন দাস বাউলের ভজন গানও শ্রোতাদের মাতিয়ে দেয়।
তবে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা শ্যামসুন্দর দাস বাউল বলেন, “আমাদের গ্রাম অবহেলিত। এখানে উন্নয়ন বলতে তেমন কিছু নেই। এ গ্রামের খোঁজ শহরের লোকেরা রাখেন না। শিল্পীরাও অবহেলিত। শুধু এই গানের মাধ্যমেই সব দুঃখ ভুলে আমরা একে অন্যের সঙ্গে কুটুমের মতো জড়িয়ে রয়েছি।” |