কোনও হোটেলে খাবার ভাল, কোনও হোটেলে ঘর। কোনও হোটেলে শৌচাগার চলনসই, কোথাও শৌচাগার দেখেই বিরক্ত হন অতিথি। কিন্তু সব মিলিয়ে কৃষ্ণনগরকে কেন্দ্র করে বেথুয়াডহরি থেকে শান্তিপুর পর্যন্ত বিরাট একটি এলাকার হোটেল-লজগুলির পরিকাঠামো এবং পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলা সদর ছাড়া এই এলাকার মধ্যে বড় কোনও হোটেলও নেই বলে তাঁদের ক্ষোভ। নদিয়ার ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন চেম্বার অ্যান্ড কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট এফটিও ওয়েস্টবেঙ্গলের যুগ্ম সম্পাদক তারক দাস বলেন, “জেলার এই এলাকাটি জুড়ে প্রতি মাসে বেশ কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হয়। সে কারণে অনেক ব্যবসায়ী ও তাঁদের প্রতিনিধিরা নিয়মিত এই এলাকায় যাতায়াত করেন। কিন্তু তাঁদের থাকার জন্য উপযুক্ত হোটেল নেই। কোনও হোটেলের পরিকাঠামো খারাপ। কোনও হোটেলের পরিবেশ ভাল নয়।” যেমন, শান্তিপুরে প্রতি সপ্তাহে দু’দিন করে দু’টি তাঁত কাপড়ের হাট বসে। সেখানে সারা রাজ্য থেকে তো বটেই ভিন রাজ্য থেকেও অনেক ব্যবসায়ী আসেন। প্রতিষ্ঠিত তাঁত ব্যবসায়ী তারকবাবুর কথায়, “ওই হাটগুলিতে প্রতি সপ্তাহে কম করে দেড় কোটি টাকার ব্যবসা হয়। উৎসবের মরসুমে সেই ব্যবসা দু’কোটি ছাড়িয়ে যায়। তাই ওই এলাকায় ভাল হোটেল-লজের অভাব ব্যবসায়ীদের কাছে খুবই বিরক্তিকর।”
ওই সংগঠনের আর এক যুগ্ম সম্পাদক গোকুল দাসের কথায়, “শান্তিপুরে যেমন তাঁত, তেমনই বেথুয়াডহরি, চাপড়া এলাকায় পাট, সব্জি, ভুসিমালের রমরমা ব্যবসা রয়েছে। মাজদিয়ায় যেমন গরম কালে আম আর এখন শীতকালে গুড়ের ব্যবসা জমে উঠেছে। কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতিদিন। কিন্তু সেখানে তেমন ভাল হোটেল-লজ নেই।” তাঁর কথায়, “যখন কোনও বড় সংস্থার প্রতিনিধিরা আসেন, তখন তাঁদের যে কারণে থাকতে হয় জেলা সদরে গিয়ে। কিন্তু সেখানেও উপযুক্ত হোটেলের সংখ্যা কম। তাই কেউ যদি সেখানে গিয়ে থাকেনও, তাঁকে যাতায়াত করতেই অনেক সময় ব্যয় করতে হয়।”
মাজদিয়ায় সম্প্রতি পুলিশ আচমকা হানা দিয়ে একটি লজ থেকে গ্রেফতার করেছে ৮ জন মহিলা ও ৬ জন পুরুষকে। ব্যবসায়ী রতন সাধুখাঁ বলেন, “লজগুলির এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বলেই আমরা কেউই সে সব জায়গায় থাকতে চাই না। আমরা সরাসরি কৃষ্ণনগরেই চলে আসি।” কিন্তু কৃষ্ণনগর স্টেশন সংলগ্ন একটি হোটেলে হানা দিয়ে পুলিশ ৬ জোড়া নারী-পুরুষকে গ্রেফতার করেছিল। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “ওই হোটেল-লজগুলিতে এমন কিছু ঘটে যাতে পরিবেশ নষ্ট হয়। আমাদের নজরদারি রয়েছে। কিন্তু আসলে সজাগ হতে হবে ওই হোটেল-লজ কর্তাদেরই।”
ব্যবসায়ীরা জানান, বেশিরভাগ হোটেল-লজে শৌচাগার নোংরা। জল নেই। বিছানা অপরিষ্কার। ভাল চাদর পর্যন্ত মেলে না। অনেক জায়গাতে ঘর আবার খুবই ছোট। ফেডারেশন অফ বেঙ্গল হোটেলিয়ার্সের সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, “আমরা চাই অতিথিরা উপযুক্ত পরিষো পান। আমাদের সদস্যদের সে কথা আমরা বারবার বলেওছি। আমরাও চাই হোটেল ব্যবসার প্রসার হোক। ইতিমধ্যে সে ব্যাপারে বেশ কিছু পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।”
পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, “জেলা সদর হওয়াতে প্রতিদিন প্রচুর লোক আসেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সম্প্রতি দু’টি বড় হোটেল হলেও তা যথেষ্ট নয়। শহরে আরও কিছু উন্নত মানের হোটেল থাকাটা খুব জরুরি। পরিষেবা না থাকলে লোকে কেন এই শহরে থাকবেন? তাই অনেকে এমনকী কাজ সেরে কলকাতা চলে যাওয়ার কথাও ভাবেন।” |