গুপ্তযুগের স্বর্ণমুদ্রা হাতে পেল প্রত্ন দফতর
কেটে গিয়েছে সাত মাস। অবশেষে শনিবার সুতি থানার মালখানায় পড়ে থাকা ১১টি স্বর্ণমুদ্রা হাতে পেল রাজ্য প্রত্ন দফতর। দফতরের উপ-অধিকর্তা অমল রায় জানান, “স্বর্ণমুদ্রাগুলি যে গুপ্তযুগের তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু স্বর্ণমুদ্রাগুলি আরও ভাল ভাবে পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। মুর্শিদাবাদে গুপ্তযুগের আরও তথ্য এ থেকে জানা যাবে। স্বর্ণমুদ্রাগুলি থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী আমরা।”
এ বছর ৩১ মে সুতির আহিরণে নির্মীয়মান সড়ক পথে গুপ্তযুগের স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধার হয়। তারপরেই রাজ্য প্রত্ন দফতরের কর্তারা ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরে তা নিয়ে অনুসন্ধান এগোয়নি। অমলবাবু বলেন, “আহিরণে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সংস্কার করতে ঠিক কোন এলাকার মাটি কেটে এনে ফেলা হয়েছিল তা এখনও পরিষ্কার নয়।” জাতীয় সড়ক নির্মাণ সংস্থা ও জেলা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মির্জাপুর থেকে মনিগ্রাম এলাকার মধ্যে ৪টি উঁচু ঢিপিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অমলবাবু বলেন, “ওই এলাকায় পরীক্ষামূলক উৎখনন করা হবে। সেক্ষেত্রে জানা যাবে, গুপ্তযুগে এই এলাকায় কোনও জনবসতি ছিল কি না।”
এর মধ্যে থেকে একটি ঢিপিতে আগামী বছর অক্টোবরে খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে স্বর্ণমুদ্রা ছাড়াও আরও নতুন বহু তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রমান্বয়ে অন্য ঢিপিগুলিও খনন করা হবে। কারণ পাশেই সাগরদিঘির হাটপাড়ায় ২০০৮ সালে খনন কার্য চালিয়ে সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া ২৪০টি প্রস্তর আয়ুধ পাওয়া যায়। তা পরীক্ষার পরে পুনের ডেকান কলেজের দুই প্রত্ন বিশেষজ্ঞ শরদ রাজগুরু ও ভাস্কর দেওতার জানিয়েছিলেন, প্রায় ১৮ হাজার বছর আগে ওই এলাকায় জনবসতি ছিল।
সুতির আহিরণ থেকে উদ্ধার করা মুদ্রা।—ফাইল চিত্র।
রাজ্য প্রত্ন দফতর ওই স্বর্ণমুদ্রাগুলিকে কলকাতার বেহালায় রাজ্য সংগ্রহালয়ে রেখে দর্শনার্থীদের দেখানোর ব্যবস্থা করবে। বড়ঞায় নদীতে পাওয়া তামা ও রুপোর মুদ্রাগুলিও রাখা হবে সেখানে। বড়ঞায় নদীতে পাওয়া তামা ও রুপোর মুদ্রাগুলিও প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। শুক্রবার বড়ঞার ঝিলেরা গ্রামের ময়ুরাক্ষী নদী থেকে সিন্দুক ভর্তি তামা ও রুপোর ওই ৬২৮৩ টি মুদ্রা উদ্ধার হয়েছে। মুদ্রাগুলির অনেকগুলিই ১৮৩৫ থেকে ১৮৫৩ সালের। তবে তার চেয়ে প্রাচীন মুদ্রাও রয়েছে। বড়ঞার মুদ্রা প্রাপ্তির পরই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। আহিরণে উদ্ধার হওয়া ১১টি স্বর্ণমুদ্রা শনিবার সুতি থানায় গিয়ে পুলিশের হেফাজত থেকে নিয়ে আসেন প্রত্ন দফতরের রাজ্য সংগ্রহালয়ের ‘কিপার’ তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
জেলার পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “মুর্শিদাবাদের গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছে বহু ইতিহাস। স্বর্ণমুদ্রা, তাম্র ও রৌপ্য মুদ্রা ছাড়াও জেলা জুড়ে বহু প্রাচীন বিগ্রহ, মন্দির ও মসজিদ রয়েছে। পুরাকীর্তির এই সব নিদর্শনগুলি উদ্ধারের ব্যাপারে জেলা পুলিশ রাজ্য প্রত্ন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। পুরাকীর্তি সংরক্ষণে কী ভাবে কী করা যায়, তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্বর্ণমুদ্রাগুলি উদ্ধারের পর বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন মুদ্রাগুলি গুপ্ত যুগের। এভাবে একসঙ্গে এতগুলি মুদ্রা উদ্ধার হওয়ার বিশেষ ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। অনেক দিন ধরেই বাঙালি ঐতিহাসিকদের একটা অংশ অনুমান করেছেন এই অঞ্চলটি গুপ্ত বংশের রাজাদের আদি ভূমি। তাঁদের এই অনুমানের ভিত্তি হল চৈনিক পরিব্রাজকদের বিবরণ। সেই কারণেই নতুন করে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
অন্য এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “ভারতীয় ইতিহাসে গুপ্তযুগ সার্বিকভাবেই সমৃদ্ধ যুগ ছিল। কেউ কেউ এই যুগকে স্বর্ণযুগও বলেন। সেই গুপ্ত যুগের বিস্তারের প্রমাণ বাংলার মাটিতে মেলা অত্যন্ত গৌরবের কথা। কুমারগুপ্ত, বুধগুপ্ত, বৈন্যগুপ্ত, দামোদর গুপ্তের মতো রাজাদের প্রভাব এই অঞ্চলে ছিল। সমুদ্রগুপ্তের সভাকবি হরিষেনের ‘ইলাহাবাদ প্রশস্তি’-র শিলালিপি থেকেও জানা যায়, এই অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ওই মুদ্রাগুলির একটিতে লেখা রয়েছে ‘কাচ’ বলে গুপ্ত রাজার নাম। ‘কাচ’ কে কেউ কেউ সমুদ্রগুপ্তের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন। এই ধরণের রাজা-রানি উৎকীর্ণ করা মুদ্রা প্রখম চন্দ্রগুপ্তের আমলেই হওয়া সম্ভব। এখানে চন্দ্র কথাটিও রয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে ‘শ্রীবিক্রমঃ’ কথাটিও উৎকীর্ণ রয়েছে। তা থেকে ধারণা করা হয় এই মুদ্রা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের। গুপ্ত যুগের মুদ্রা সম্ভারের এটি একটি নতুন সংযোজন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.