|
|
|
|
পাকা বাড়ি-রাস্তা-নলকূপ, অনেক পাল্টেছে আমলাশোল
সুমন ঘোষ • মেদিনীপুর |
এক সময় ছিল অনাহারের গ্রাম। সেই আমলাশোলকে এ বার ‘মডেল গ্রাম’ বানানোর তোড়জোর শুরু করেছে রাজ্য সরকার। শনিবার বেলপাহাড়ির এই এলাকায় গিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ। সঙ্গে প্রশাসনিক কর্তারা। প্রশাসন সূত্রের খবর, রাজ্যের মুখ্যসচিব আমলাশোল নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছেন।
বেলপাহাড়ি ব্লকের পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা গ্রাম আমলাশোলে অনাহার-অপুষ্টিতে ৫ আদিবাসীর মৃত্যু হয়েছিল ২০০৪ সালে। রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে দেওয়া সেই ঘটনার পরে ন’টা বছর কেটে গিয়েছে। পাল্টে গিয়েছে আমলাশোলও। সম্প্রতি প্রকাশিত পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন জেলাশাসক চন্দন সিংহের বই ‘কিন্ডলিং ইনসাকেরশন ইন জঙ্গলমহল’-এও রয়েছে আমলাশোলের কথা। প্রাক্তন জেলাশাসকের বই থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালে আমলাশোলে ৪১টি পরিবারের বসবাস ছিল। তার মধ্যে ১৬টি পরিবার শবর ও বাকি মুড়া সম্প্রদায়ের। গোটা গ্রামে কুয়ো ছিল চারটি, প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি ও একটি অঙ্গনওয়াড়ি। শবর পরিবারগুলি ছিল ভূমিহীন। অনাহারে মৃত্যুর খবর ছড়ানোর পরে রাতারাতি একাধিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ৩টি ডিপ টিউবওয়েল ও একটি রিভার লিফট ইরিগেশন, একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দু’টি কালভার্ট তৈরি করা হয়। চার গ্রামবাসীকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়। আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ছাগল পালন, বাবুই ঘাস থেকে দড়ি তৈরির প্রকল্পও নেওয়া হয়েছিল। |
গ্রামেই মেলে পরিস্রুত জল। শনিবার সেই জলে তেষ্টা মেটালেন জেলা সভাধিপতি।—নিজস্ব চিত্র। |
বর্তমানে আমলাশোলে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। রাস্তা পাকা হয়েছে, পানীয় জলের ৮টি নলকূপ বসেছে, রয়েছে একটি সাব-মার্সিবল পাম্প। ৮০ একর চাষ যোগ্য জমির মধ্যে ২৫ একর জমি এখন সেচ সেবিত। ২ জন কিষান ক্রেডিট কার্ড পেয়েছেন, ৩ জন কৃষি পেনশন পান। ২৭ জন বার্ধক্য ভাতা পান, ১ জন বিধবা ভাতা পান, ১৫ জন উপজাতি বার্ধক্য ভাতা পান। ২টি ধান ঝাড়াই যন্ত্র ও ১টি কীটনাশক স্প্রে করার যন্ত্রও রয়েছে গ্রামে।
আমলাশোল গ্রামে এখন ৮৮টি পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে ৩১টি পরিবারের পাকা বাড়ি রয়েছে। লোধা হাউসিং থেকে ২৭টি ও ইন্দিরা আবাস যোজনায় ৪টি বাড়ি করে দেওয়া হয়েছে। গ্রামে স্ব-সহায়ক দল রয়েছে ৬টি। সকলেরই প্রথম গ্রেডিং হয়েছে। ৭৬ জনের জব-কার্ড রয়েছে। পরিবার পিছু ৫৩ দিন করে কাজও পেয়েছে। আরও সাতটি প্রকল্প চলছে। শীঘ্রই উমাপদ মানকির সেচ ডোবা সংস্কার, কমল মানকির জমি সমতলীকরণ-সহ আরও ৬টি কাজ করা হবে। ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যানে একটি অঙ্গনওয়াড়ি তৈরি হয়েছে, রেশন দেওয়ার জন্য একটি অতিরিক্ত কাউন্টার হয়েছে। গ্রামে ৩৬২ জনের মধ্যে ৩৬১ জনেরই রেশন কার্ড রয়েছে। এর মধ্যে ১২৮ জনের অন্ত্যোদয় কার্ড, ৭৩ জনের বিপিএল কার্ড ও ৩০ জনের বিশেষ বিপিএল কার্ড রয়েছে।
২০০১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, আমলাশোলের জনসংখ্যা ছিল ৩৭৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ৪৬ শতাংশ, ৫৪ শতাংশ মহিলা। যার মধ্যে ৭১ শতাংশ উপজাতি সম্প্রদায়ের। যাঁদের মধ্যে শিক্ষার হার ছিল ৩৬ শতাংশ। আর ২০১১ সালে জনগণনা অনুযায়ী, জনসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬২ জন। ৪ শতাংশ পুরুষ বেড়ে হয়েছে ৫০ শতাংশ। উপজাতি ৭১ শতাংশ। ২ শতাংশ বেড়ে শিক্ষার হার হয়েছে ৩৮ শতাংশ।
আমলাশোলে উন্নয়নের আরও একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বিআরজিএফ থেকে আরও এটি টিউবওয়েল এবং তৃতীয় অর্থ কমিশনের বরাদ্দ টাকায় একটি কালভার্ট তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। এছাড়াও লোধা হাউসিং প্রকল্পে ১১টি বাড়ি তৈরি হবে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের অর্থে ২৪টি বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দরপত্র আহ্বানের জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও রাস্তা, কিচেন গার্ডেন, প্রাণিপালন, শৌচাগার নির্মাণ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন মনে করছে, এই সব পরিকল্পনা রূপায়িত হলে উন্নয়নের দিকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে আমলাশোল। |
পুরনো খবর: মোবাইল টাওয়ার, আইটিআই চায় আজকের আমলাশোল |
|
|
|
|
|