|
|
|
|
মোবাইল টাওয়ার, আইটিআই চায় আজকের আমলাশোল
কিংশুক গুপ্ত • বেলপাহাড়ি |
নিত্য দিন গাছের নরম শিকড় ফুটিয়ে খাওয়ার বদলে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত ছিল চাহিদা। দিনভর জঙ্গলের কাঠ কুড়িয়ে ২০-৩০ টাকার বদলে দাবি ছিল রোজগারের স্থায়ী বন্দোবস্তের। সেটা ২০০৪।
শনিবার গ্রামে আসা জেলা সভাধিপতিকে গ্রামবাসী জানালেন, মোবাইলের টাওয়ার, বিদ্যুৎ বিল জমা দেওয়ার জন্য কেন্দ্র, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল ও আইটিআই এবং স্থায়ী হাসপাতাল চাই তাঁদের।
এটা ২০১৩-র আমলাশোল।
২০০৪ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি ব্লকের পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা এই গ্রামেই অনাহার-অপুষ্টিতে ৫ আদিবাসীর মৃত্যু হয়। এ বার সেই আমলাশোলকেই ‘মডেল গ্রাম’ হিসেবে গড়তে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য।
আমলাশোলে ন্যূনতম পরিষেবা দিতে ব্যর্থতার জন্য তৎকালীন শাসক বামেদের কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১-য় তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকাতে উন্নয়নমুখী একাধিক প্রকল্প চালু করেন তিনি। তবে আমলাশোল গ্রাম যে বাঁশপাহাড়ি পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে, গত পঞ্চায়েত ভোট পর্যন্ত তাতে ক্ষমতায় ছিল ঝাড়খণ্ড পার্টি। বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতিও ছিল বামেদের দখলে। এ বার দু’টোতেই ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। এলাকায় মাওবাদী তৎপরতা অল্পস্বল্প হলেও ফের শুরু হয়েছে বলে খবর রয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে। জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “এই প্রেক্ষিতে আমলাশোলকে মডেল গ্রাম করার জন্য বাছা হয়েছে।” |
পড়ুয়াদের সঙ্গে উত্তরা সিংহ। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি। |
আগামী মঙ্গলবার থেকে ‘নির্মল ভারত অভিযানের’ আওতায় গ্রামে বাড়ি-বাড়ি শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হতে চলেছে। প্রকল্প রূপায়ণের আগে বাসিন্দাদের বক্তব্য জানতে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে শনিবার আমলাশোলে যান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ।
গত ন’বছরে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে আমলাশোল। গ্রামেই হয়েছে রেশন দোকান। সেখানে রেশন মেলে সপ্তাহে তিন দিন। ভিতরে ঢালাই রাস্তা হয়েছে। তার ধারে বিদ্যাধর মুড়ার বাড়িতে সপ্তাহে ৬ দিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকেও রোগীরা সেখানে পরিষেবা নিতে আসেন। জেলা সভাধিপতি গিয়ে দেখলেন, এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ারা মিড ডে মিলে রীতিমতো চামচ দিয়ে ভাত, ডাল, আলুর তরকারি খাচ্ছে।
আমলাশোলের কিশোরী যমুনা মুড়া বেলপাহাড়ি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন অসুস্থ হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে পরীক্ষা দিতে যেতে পারেনি সে। যমুনার দিদি কৌশল্যা মুড়া উত্তরাদেবীকে অনুরোধ করেন, “আমাদের গ্রামে মোবাইলের টাওয়ার পাওয়া যায় না। বোনের অসুস্থতার খবর তাই স্কুল কর্তৃপক্ষকে দিতে পারছি না। দেখুন না, গ্রামে টাওয়ার বসানো যায় কি না।”
আমলাশোল গ্রাম শিক্ষা কমিটির সম্পাদক হাঁদু সিং মুড়ার আক্ষেপ, “সবচেয়ে কাছের হাইস্কুল ১৬ কিলোমিটার দূরে ওদলচুয়ায়। সরকার গ্রামেই হাইস্কুল স্কুল করে দিলে আশেপাশের দশ-বারোটি গ্রামের পড়ুয়ারা উপকৃত হবে। স্কুলছুটের হার কমবে।” গ্রামবাসী মথুর মাহাতো বিদ্যুতের বিল হাতে উত্তরাদেবীকে বলেন, “৫০ কিলোমিটার দূরে বিনপুরে গিয়ে বিল জমা দিতে হয়। কাছেপিঠে ব্যবস্থা করে দিন।” সভাধিপতির কাছে এল হাতেকলমে কাজ শিখে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য আইটিআই-এর আর্জি, গ্রামেই দশ শয্যার হাসপাতাল গড়ার আবেদনও।
উত্তরাদেবীর আশ্বাস, “আপাতত গ্রামের স্বাস্থ্য শিবিরটিতে শৌচাগার-সহ শয্যা চালু করা হচ্ছে। বাড়ি-বাড়ি শৌচাগার হবে। গ্রামে ২৭টি শবর পরিবার বাড়ি পেয়েছেন। তাঁদের জন্য আরও ৩০টি এবং অন্য সম্প্রদায়ের ২৪ জন গরিবকে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হবে।” তিনি বলেন, “এক সময় অনাহার আর আমলাশোল ছিল কার্যত সমার্থক। সেই তকমা ঘোচাতেই আমলাশোলকে মডেল গ্রাম করতে চাই। সে জন্য যা খরচ করার জেলা পরিষদ করবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেব।” |
|
|
|
|
|