ডিভিসি-র ছাড়া জলে তিন মাস আগে প্লাবিত হয়েছিল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন অনেকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, যাঁদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে তাঁদের ১৫ হাজার টাকা করে এককালীন অনুদান দেওয়া হবে। কিন্তু অনুদান কারা পাবেন, তা নিয়ে একটি সরকারি নির্দেশিকায় জটিলতা দেখা দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই ব্লকে। দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্তেরা।
রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে ওই ব্লকে বাড়ির অনুদান দেওয়া সংক্রান্ত নির্দেশিকায় জানানো হয় যাঁদের বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙেছে, তাঁদের ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। যাঁদের বাড়ি আংশিক ভেঙেছে তাঁদের ১০ হাজার টাকা করে। অনুদান তাঁরাই পাবেন, যাঁদের বিপিএল তালিকায় নাম আছে এবং মাসিক আয় আড়াই হাজার টাকার বেশি নয়।
বন্যা বা প্লাবনে যাঁদের বাড়ি ভেঙে যায়, তাঁদের অনুদান দেওয়ার প্রথা আগেও ছিল। গত বার পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেওয়া হত চার হাজার টাকা। আংশিক ভাঙলে দু’হাজার টাকা। এ বারে সরকার অনুদানের হার বাড়িয়েছে। গত সেপ্টেম্বরের ওই প্লাবনে উদয়নারায়ণপুরের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ন’টিই পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বিভিন্ন প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বর্ধিত অনুদানের কথা জানান। তার মধ্যে ছিল উদয়নারায়ণপুরও।
প্লাবনের পরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য ব্লকের ন’টি পঞ্চায়েতেই চার সদস্যের কমিটি গড়া হয়। কিন্তু নির্দেশিকাটি আসার পরে প্রায় প্রতিটি কমিটিই তালিকা তৈরির কাজ বন্ধ করে দেয়। একটি কমিটির কর্তা জানান, নিয়ম হল যাঁর বাড়ি ভেঙেছে, তিনি ভাঙা বাড়ির সামনে সচিত্র পরিচয়পত্র নিয়ে দাঁড়াবেন। তাঁর ছবি তুলে তা ব্লক প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয় অনুদানের জন্য। এ ভাবেই তৈরি হয় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা। কিন্তু তা পুরোপুরি করা যায়নি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই এমন অনেকের নামের তালিকা তৈরি করেছি যাঁদের নাম বিপিএল তালিকায় নেই। এই অবস্থায় অনুদান না-পেলে তিনি তো আমাদের উপরে চড়াও হবেন। ফলে, তালিকা তৈরির কাজ স্থগিত রেখেছি।”
আর এক কমিটির কর্তা জানান, আগে এই ব্লকে বহুবার বন্যায় বাড়ি ভেঙেছে। তখন এমন অনেকেই অনুদান পেয়েছেন, যাঁরা গরিব হলেও বিপিএল তালিকায় তাঁদের নাম নেই। তাঁর কথায়, “বিপিএল তালিকাভুক্তদের জন্য বরং ইন্দিরা আবাস যোজনা আছে। কিন্তু যাঁরা গরিব অথচ বিপিএল তালিকায় নাম নেই তাঁরা কোথায় যাবেন?” জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “বিপিএল তালিকাভূক্তরাই বাড়ি ভাঙার অনুদান পাবেন, এই নিয়ম বহুদিন ধরেই রয়েছে।”
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, আগে কখনও এমন নিয়ম মানা হয়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের সকলকেই অনুদান দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগের জবাব অবশ্য জেলা প্রশাসনের কাছে মেলেনি। জেলা তৃণমূলের একাংশও দাবি করছেন, প্রয়োজন হলে নিয়ম ভেঙে সকলকেই টাকা দিতে হবে। তবে, বিপিএল তালিকায় নাম থাকবে, আবার মাসিক আয় হতে হবে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে নির্দেশিকার এই অংশটুকু ঘিরে তাঁরা যে বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন তা কিন্তু মেনে নিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “কোনও পরিবারের বিপিএল তালিকায় নাম থাকার পরেও সেই পরিবারের মাসিক আয় নির্ধারণ করে দেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়?”
এই পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে করণীয় জানতে চেয়েছে উলুবেড়িয়া মহকুমা প্রশাসন। মহকুমাশাসক সুজয় আচার্য বলেন, “বাড়ি ভাঙার অনুদান পেতে হলে ঠিক কী কী শর্ত পূরণ করতে হবে সেটি ফের একবার স্পষ্ট করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছি।” সমস্যার কথা মেনে নিয়ে উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, “আশা করছি জট কেটে যাবে।” প্লাবনের পরে ইতিমধ্যে ওই ব্লকে চাষিদের মিনিকিট, সার ও চাষের সরঞ্জাম বিলি করা, রাস্তাঘাট তৈরি, নলকূপ বসানোর মতো কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণ কবে মিলবে তার অপেক্ষাতেই দিন গুনছেন ক্ষতিগ্রস্তেরা। |