সম্পাদকীয় ২...
প্রতিঘাত
ত্তর কোরিয়ার সরকার ও শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টির দুই নম্বর ব্যক্তি, প্রেসিডেন্ট কিম জং আন-এর পিতৃব্য এবং একদা অভিভাবক, পৃষ্ঠপোষক ও পথপ্রদর্শক জং সাং থায়েক মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ও নিহত। তিনি নাকি দেশদ্রোহ, রাষ্ট্রদ্রোহে জড়িত ছিলেন। নিজেই সে-কথা সর্বসমক্ষে কবুলও করিয়াছেন। এমন ‘স্বীকারোক্তি’, ‘বিচার’ ও বিচারান্তে মৃত্যুদণ্ড বুঝাইয়া দিবার ঘটনাক্রম কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত দেশগুলিতে বিরল নয়। বস্তুত, এই ঘটনা ১৯৩০-এর দশকে স্তালিন-জমানা মনে পড়াইতে বাধ্য। সে দিন বুখারিন, কামেনেভ, জিনোভিয়েভ, রাডেক-সহ লেনিনের পলিটব্যুরোর বহু সদস্যকেই রাষ্ট্রদ্রোহ, স্তালিনকে হত্যার ষড়যন্ত্র ইত্যাদি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করিয়া প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। পলাতক লিওন ট্রট্স্কিকেও ঘাতকরা সুদূর মেক্সিকোতে গিয়া হত্যা করিয়া আসে।
যে-কারণে স্তালিনের সর্বময় কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাইতে সক্ষম বলশেভিক নেতাদের সে দিন ভুয়া বিচারে প্রাণদণ্ড হইয়াছিল, সেই একই কারণে আজ কিম জং আন-এর পিতৃব্যও নিহত হইয়াছেন। তিনি সম্ভবত কিম জং আন-এর পারিবারিক স্বৈরাচারের পথের কাঁটা হইয়া উঠিতেছিলেন। অন্তত কিম জং আন নিশ্চয় তেমনটাই আশঙ্কা করিতেছিলেন। সরকারি প্রশাসন হইতে সেনাবাহিনী, সর্বত্রই জং সাং থায়েক ছিলেন প্রেসিডেন্ট কিম-এর পরেই দ্বিতীয় কর্তৃত্ব। হয়তো তাঁহার উচ্চাকাঙ্ক্ষা কিম-এর পক্ষে বিপজ্জনক ছিল। প্রকৃতপক্ষে বিপজ্জনক নহেন, এমন নেতাদের সম্পর্কেও একচ্ছত্রবাদীরা অস্বস্তি বোধ করিয়া থাকেন। গণপ্রজাতন্ত্রী চিনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের উতরোল সময়ে মাও জে দং অনুগামী ‘রেড গার্ড’রা প্রবীণ নেতা লিউ শাও চি ও তাঁহার স্ত্রীকে যে ভাবে প্রকাশ্যে অপদস্থ করিয়া, জেলবন্দি করিয়া চিকিত্‌সার সুযোগ হইতে বঞ্চিত করিয়া মৃত্যু অনিবার্য করিয়া তোলে, তাহার পিছনেও ‘মহান কান্ডারি’ মাওয়ের অনুমোদন ছিল। লিউয়ের কাছ হইতে সে সময় কোনও বিপদাশঙ্কাই ছিল না। তথাপি মাও নিশ্চিন্ত হইতে পারিতেছিলেন না। কিম জং আনও সম্ভবত একই রকম অনিশ্চয়তায় ভুগিতেছিলেন। উত্তর কোরিয়ায় বর্তমানে যেমন আর্থিক দুরবস্থা, দারিদ্র, অনাহার, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির যে ক্রমাবনতি, তাহাতে জন-অসন্তোষ তীব্র হওয়াই স্বাভাবিক। দেশের সর্বাধিক সংগঠিত ও সুশৃঙ্খল সংগঠন সেনাবাহিনী যদি সেই অসন্তোষে শামিল হয়, তবে সামরিক অভ্যুত্থান মারফত ক্ষমতাবদলের সম্ভাবনাও থাকিয়া যায়। অঙ্কুরেই তাহাকে বিনাশ করিতেই এই পদক্ষেপ।
ইহা উত্তর কোরিয়ার রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়াইয়া তুলিতে পারে। আবার বিপরীতটিও ঘটা সম্ভব। পশ্চিমী দুনিয়ার শঙ্কা, অভ্যন্তরীণ স্থিতিরক্ষায় সক্ষম দুই নম্বর ব্যক্তিটির অপসারণ পরমাণু মারণাস্ত্রসজ্জিত উত্তর কোরিয়াকে আরও আগ্রাসী ও বিপজ্জনক করিয়া তুলিবে। ইতিপূর্বে প্রেসিডেন্ট কিম-এর প্রাক্তন প্রেমিকাকেও একই ধরনের অভিযোগে কোতল করা হইয়াছে। প্রশ্নহীন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সামরিক কর্তৃত্বের চূড়ায় বসিয়া থাকা স্বৈরাচারী কখনওই নির্ভরযোগ্য হইতে পারেন না। উপরন্তু তাঁহার তূণীরে যদি পরমাণু বোমার প্রযুক্তি থাকে, তবে তো কথাই নাই। পশ্চিমী দুনিয়া তাই অস্বস্তিতে। ভরসা কেবল চিন, যাহার সহিত পিয়ংইয়ংয়ের সুসম্পর্ক আছে। তবে স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হইলে কিম পরীক্ষিত মিত্রকেও লহমায় বিসর্জন দিতে পারেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.