আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাবে ড্রাগন, ডলফিন, বাঘ, তিমির মতো হরেক রকম প্রাণী। এখানেই শেষ নয়, কোথাও আকাশের গায়েই জ্বলবে লন্ঠন, কোথাও আবার দেখা মিলবে লাফিং বুদ্ধর। আসলে এগুলি নানা আকৃতির ঘুড়ি, যা দেখা যাবে নিউ টাউনের আকাশে।
‘কলকাতা আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব’-এর জোর প্রস্তুতি চলছে শহরে। হিডকো এবং একটি বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ৫ জানুয়ারি আয়োজন করা হয়েছে এই উৎসবের। ঘুড়ির লড়াইয়ের পাশাপাশি এখানে থাকবে হরেক রকম ঘুড়ির মজাও। হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “এটা অনেকের কাছেই একটা অভাবনীয় আস্বাদন।”
উৎসবে কাটাকুটি অর্থাৎ ভোকাট্টা-র খেলা হবে আইন মেনে। উদ্যোক্তা-সংস্থার অধিকর্তা সন্তোষ জায়সবাল বলেন, “ফ্যান্সি আর ফাইটার আয়োজন করা হবে দু’টি বিভাগের।” এই ঘুড়ি উৎসবের স্লোগান: ‘দ্য স্কাই ইজ নট দ্য লিমিট’। ঘুড়ি উড়বে ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার উপরে। কত লোক ঘুড়ি ওড়াবেন? সন্তোষবাবু বলেন, “গতবার প্রায় ৫৫ জন অংশ নিয়েছিলেন। ছিলেন দু’জন বিদেশিও। গুজরাতের ঘুড়ি-তারকা ভাবনা মেহতাও ছিলেন। |
এশিয়ার অধিকাংশ দেশেই জনপ্রিয় এই ঘুড়ি উৎসব। ষোড়শ শতক থেকে জাপানের হামামাৎসু ঘুড়ি উৎসব খ্যাত। কিয়োটোর দক্ষিণ পশ্চিমে নাকাটাজিমা, জাপানের উচিন্তা সি বিচ, চিনের উইফাং, ইন্দোনেশিয়ার বালিতেও ঘুড়ি নিয়ে রয়েছে ব্যাপক উদ্দীপনা। ১৯৭৮ থেকে শুরু হয় ইন্দোনেশিয়ার সানুর ঘুড়ি উৎসব। উৎসবে পিছিয়ে নেই মালয়েশিয়াও। এখানে কোথাও কোথাও প্রায় ৪০ বর্গমিটার মাপের ঘুড়িও ওড়ে। কেপ টাউনে হয় আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ঘুড়ি উৎসব। ইউরোপেও ব্রিস্টল-সহ বিভিন্ন শহরে পালন করা হয় এই উৎসব। আর এ দেশে ঘুড়ি উৎসবে সবচেয়ে এগিয়ে গুজরাত। সেখানে অন্তত পাঁচটি শহরে বড় মাপের এই উৎসব হয়। ১৯৮৯ থেকে এই আসর বসছে আমদাবাদে। প্রতি বছর ১৪ জানুয়ারি মকর সংক্রান্তির এই অনুষ্ঠানে শরিক হয় রাজ্য পর্যটন বিভাগ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হিসেবে এ বার থেকে জানুয়ারির গোড়াতেই তারা আসর বসিয়েছে দিল্লি ও মুম্বইয়ে। জয়পুরেও যথেষ্ট জনপ্রিয় ঘুড়ি উৎসব। এ বার এই বিশ্ব-মানচিত্রে নিউ টাউনকে যুক্ত করতে এই উৎসবের আকর্ষণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এ শহরেও ঘুড়ি উৎসব পার করে ফেলেছে পাঁচ দশক। তা হলে নিউ টাউনের প্রতিযোগিতার বিশেষত্বটা কোথায়? হিডকো-র এক পদস্থ অফিসার বলেন, “কলকাতার এ রকম উৎসব হয় ময়দানে। নিউ টাউনে শুরু হয়েছে গতবার। এ বার চেষ্টা করা হচ্ছে উৎসবটিকে আন্তর্জাতিক আদল দিতে। থাকবে ঘুড়ি নিয়ে প্রদর্শনীও। এ বার অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও বাড়বে বলে আমরা নিশ্চিত।”
কলকাতার ‘কাইট ফ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর হিসেবে এ শহরে ১৯৫২-তে ১২ জনকে নিয়ে প্রথম ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা হয়। ’৯৭-এ ছিলেন ১০৮ জন। এ শহরে ঘুড়ি-পাগলদের সংগঠন রয়েছে ৫২টি। ফেসবুকে এই সংগঠনগুলির তরফেও নিউ টাউনের এই ঘুড়ি উৎসবের সাফল্য কামনা করা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে নিউ টাউনের প্রকৃতি উদ্যানেও বসেছিল ঘুড়ি উৎসব। লক্ষ্য ছিল ‘ভোটদানের প্রচার’। যৌথ উদ্যোক্তা ছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন এবং হিডকো। দেবাশিসবাবু বলেন, “জনপ্রিয় শিল্পী-অভিনেতা-অভিনেত্রী, ব্যান্ডের দল সব মিলিয়ে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছিল সেটি।” |