কমলালেবু, মোয়া আগেই ছিল। এ বার সোয়েটার-মাফলার জড়িয়ে ভরপুর শীতের মেজাজে শহর! গত কয়েক বছরে অবশ্য মাঝ ডিসেম্বরে এমন ঠান্ডার দেখা মেলেনি। কিন্তু পরিমণ্ডলের কিছু বিশেষ পরিস্থিতির জন্য এ বছর এমন শীত আরও দিন কয়েক মিলবে বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা।
আবহবিদেরা বলছেন, গত কয়েক দিন ধরেই উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় তীব্র ঠান্ডা পড়েছে। হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের বহু জায়গাতেই রাতের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছে স্বাভাবিকের থেকে ৪-৫ ডিগ্রি নীচে। উত্তুরে হাওয়া সেই ঠান্ডাই এ রাজ্যে বয়ে আনছে। কমছে শহরের তাপমাত্রা। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, রবিবার কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি কম।
একে রবিবার, তাতে ঠান্ডা। আমুদে বাঙালিকে আর পায় কে! ছুটির মেজাজে তাই সকাল সকাল বেরিয়ে চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া-ময়দানে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকে। সুতনু বসু যেমন স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন চিড়িয়াখানায়। বললেন, “সামনের সপ্তাহ থেকেই তো ঠাসাঠাসি ভিড় শুরু হবে। তাই আগেই চলে এলাম।” বিকেলে যাঁরা গঙ্গার ধারের পার্কগুলিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সৌজন্যে ছুটির দিনেও যাত্রী পেয়েছে প্রিন্সেপ ঘাট-বিবাদী বাগ রেল স্টেশন।
কলেজ-পড়ুয়াদের ভিড়টা অবশ্য পাক খেয়েছে গঙ্গার পাড় থেকে পার্ক স্ট্রিট-নিউ মার্কেটে। বড়দিনের আগে সেজে ওঠা পার্ক স্ট্রিটে বন্ধুর সঙ্গে নিখাদ বেড়ানোয় মেতে থেকেছেন তরুণী। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া অমিত-নীলাদ্রি-অঙ্কিতাদের দলটা তখন নিউ মার্কেটে। টুকটাক শীত-পোশাক আর বড়দিনে ঘর সাজানোর সরঞ্জাম কেনা নিয়ে খুনসুটিতে ব্যস্ত। এত তাড়াতাড়ি বড়দিনের জোগাড়! অঙ্কিতা-নীলাদ্রিরা বললেন, “শীত না পড়লে কি আর বড়দিনের আমেজ আসে! গত কয়েক বছর বড়দিনের দু’-এক দিন আগে ছাড়া এমন পরিবেশ তৈরিই হয়নি। এ বার কিন্তু ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতেই আজ বেশ ঠান্ডা।” গত কয়েক বছরে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পারদ কিছুটা চড়ে থাকত বলে মেনে নিয়েছেন আবহবিদেরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত বছর ১৫ ডিসেম্বর কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরাও বলছেন, ডিসেম্বরে একটানা শীত থাকে না। পারদের ওঠানামা চলে। কয়েক বছর ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই ঠান্ডা পড়েছিল। ফলে মাসের মাঝামাঝি গরম ছিল। “এ বার তেমনটা হয়নি,”মন্তব্য হাওয়া অফিসের এক কর্তার। তাঁর ব্যাখ্যা, ডিসেম্বরের গোড়াতে রাজ্যে শীত হাজির হওয়ার ঘোষণা হয়। কিন্তু তার পরই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘মাদি’ হাজির হওয়ায় উত্তুরে হাওয়া বাধা পায়। তাপমাত্রাও নামতে পারেনি। গত সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে মাদি-র প্রভাব কাটতে শুরু করে। তার পর থেকেই ঠান্ডা পড়ছে দক্ষিণবঙ্গে। আবহবিদদের পূর্বাভাস, আজ, সোমবারও তাপমাত্রা একই রকম থাকবে। আগামিকাল, মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রা আরও কিছুটা নামতে পারে। |