সব তদন্তেই নুর কেন, প্রশ্ন প্রাক্তন ওসিকে
ত দেড় বছরে শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমি-বাড়ি নিয়ে ২০টি অভিযোগ পেয়েছে শেক্সপিয়র সরণি থানা। তার সব ক’টিতেই ওই থানার সাব-ইনস্পেক্টর নুর আলিকে তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন গোয়েন্দারা। নুরকে তদন্তভার দেওয়ার পিছনে কোনও চাপ ছিল কি না, তা জানতে গোয়েন্দারা এ বার ওই থানার তৎকালীন ওসি-কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
পুলিশ জানাচ্ছে, ওই ২০টি অভিযোগের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিছক জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করে হাত ধুয়ে ফেলা হয়েছিল। এফআইআর করা হয়েছিল মাত্র তিনটি ঘটনায়। তিনটিতেই তদন্তকারী ছিলেন নুর। বাকি ১৭টি ক্ষেত্রে জিডি নেওয়া হয়। সেগুলিতেও অভিযোগকারীরা প্রথমে গিয়েছিলেন নুরের কাছেই। কেন?
উত্তর খুঁজতে নেমে নুরের কর্মকাণ্ড যাচাই করছেন গোয়েন্দারা। ২০১২-র জুন থেকে গত ১১ নভেম্বর শর্ট স্ট্রিটে হামলার সময় পর্যন্ত শেক্সপিয়র থানায় ছিলেন নুর। এই দেড় বছরে তিনি কোন কোন ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন, তা খতিয়ে দেখেছে লালবাজার। তাতেই জানা যায়, ৯এ শর্ট স্ট্রিটের বাড়ি-জমি ঘিরে যত ঘটনা ঘটেছে, সব ক’টিরই তদন্তে জড়িত ছিলেন তিনি। পুলিশের খবর, বাড়ি দখল সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় নুরের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। তার মধ্যে ছিল রাসেল স্ট্রিট ও শেক্সপিয়র সরণিতে দু’টি জমি বেআইনি ভাবে খালি করানোর অভিযোগও। তা সত্ত্বেও শর্ট স্ট্রিটের বিতর্কিত জমি-বাড়ি দখলে বারবার হামলার তদন্তভার নুরকে দেওয়ার ব্যাপারে ওসি কেন লিখিত অনুমোদন দিলেন, প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারীরা।
লালবাজারের এক কর্তার কথায়, “নুরের অতীত জেনেও শেক্সপিয়র সরণি থানার তৎকালীন ওসি পীযূষ কুণ্ডু শর্ট স্ট্রিটে ১১ নভেম্বরের ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব তাঁকেই দিয়েছিলেন। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনার দায়িত্ব তিনি কেন ওই অফিসারকেই দিলেন, তা জানার জন্যই আমরা পীযূষবাবুকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই। এর জন্য ওঁর উপরে কোনও চাপ ছিল কি না, সেটা জানা জরুরি।”
১১ নভেম্বর বাড়ি-জমি দখলের হামলায় গুলি চলে। নিহত হন দখল করতে আসা বহিরাগত দুই বাউন্সার। গুলি চালানোয় মূল অভিযুক্ত, ওই বাড়িতে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মমতা অগ্রবাল-সহ ১৩ জন গ্রেফতার হন। পরে জমি দখলের মূল চক্রী হিসেবে গ্রেফতার করা হয় সম্পত্তির কারবারি পরাগ মজমুদার ও পিনাকেশ দত্তকে। ওই ঘটনার পরেই নানা অভিযোগে নুরকে ‘ক্লোজ’ করা (দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া) হয়েছিল। গত শুক্রবার গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। বদলি করা হয়েছিল থানার তৎকালীন ওসি পীযূষবাবুকে। থানার কাজ দেখভাল করার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার তাপস বসুকেও।
পরাগ-সহ ওই হামলার অভিযুক্ত চক্রীরা ২০১১ থেকেই শেক্সপিয়র সরণি থানার অফিসারদের একাংশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন বলে জানাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু তাঁরা খুব একটা সফল হননি। চলতি বছরের এপ্রিলে নুর ওই থানার তৃতীয় ক্ষমতাশালী অফিসার হয়ে ওঠার পর থেকেই জমি দখলে সুবিধা পান পরাগেরা। তদন্তকারীরা জানান, সেপ্টেম্বরের পর থেকে দু’দফায় টাকা নিয়েছিলেন নুর। এক বার শেক্সপিয়র সরণির একটি রেস্তোরাঁয় বসে, আর এক বার থানার পাশেই একটি চায়ের দোকানে। সেই টাকার ভাগ থানার কোন কোন কর্মী-অফিসার পেয়েছেন, তদন্তকারীরা তা-ও খতিয়ে দেখছেন।
পুলিশের একটি সূত্রের অভিযোগ, শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে শুধু নুর নন, আরও কয়েক জন পুলিশ অফিসারও জড়িত। জমি দখলে পরাগকে ‘পুলিশি সাহায্য’ দেওয়ার জন্য বারবার বৈঠকও করেছেন তাঁরা। এই অভিযোগ যে সত্যি, তা মেনে নিয়েছেন তদন্তকারীদের একাংশও। তাঁরা বলছেন, শর্ট স্ট্রিটের ওই বাড়ি-জমি নিয়ে বারবার অভিযোগ আসা সত্ত্বেও মামলা দায়ের করেননি নুর। প্রধান শিক্ষিকা মমতা জানান, থানায় অভিযোগ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি পুলিশের উঁচু মহলেও সব জানাতেন। সেই মহলের চাপ এড়িয়ে কী ভাবে নুর মামলা করার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই বাড়ি-জমিতে ১৫ সেপ্টেম্বর যে-হামলা হয়, সেই ব্যাপারেও প্রথমে মামলা দায়ের করতে চাননি নুর। পরে ডিসি (সাউথ)-র চাপে মামলা করা হয়।
শর্ট স্ট্রিটের ঘটনায় অন্য কয়েক জন পুলিশ অফিসারও যে জড়িত, গ্রেফতারের আগে ঘনিষ্ঠ মহলে তেমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নুর। তাঁর নাম জড়ালে তিনি যে অন্যদের জড়াতেও কসুর করবেন না, নুর তাঁর ঘনিষ্ঠদের তা জানিয়ে গিয়েছিলেন বলেই খবর। লালবাজার সূত্র জানাচ্ছে, জেরায় উপরমহলের কয়েক জন অফিসারের নাম বলেছেন নুর। জানিয়েছেন, শর্ট স্ট্রিটের ব্যাপারে একা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। তিনি যা করেছেন, উপরওয়ালাদের নির্দেশ মেনেই। সেই উপরওয়ালারা কারা, তা খোলসা করতে চাইছেন না তদন্তকারীরা। লালবাজারের কর্তারা বলছেন, অন্য পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধেও প্রমাণ জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। তা মিললে তাঁদের গ্রেফতার করা হতে পারে। গোয়েন্দা-প্রধান পল্লবকান্তি ঘোষও বলেন, “যাঁদের নামে অভিযোগের প্রমাণ মিলবে, তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তদন্তে পরাগের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশি সূত্রের খবর, জমি কেনার আট কোটি টাকা নানা ভাবে ঘুরেফিরে পরাগেরই কয়েকটি অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছিল। সেগুলি নিয়ে বেশ কিছু তথ্যও জোগাড় করেছেন গোয়েন্দারা।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.