রেকর্ড উচ্চতার শৃঙ্গ জয় করে সেখানে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেনি সেনসেক্স ও নিফ্টি। ক্রমাগত নেমেছে পরের চার দিনে। শুক্রবার সেনসেক্স নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ২০,৭১৬ অঙ্কে। নিফ্টি এসে ঠেকেছে ৬,১৬৮ পয়েন্টে।
এতটা উত্থানের পর পতন স্বাভাবিক। দাম বাড়লে লাভ ঘরে তোলার তাগিদ থাকেই। তবে পতন হয়তো ততটা হত না, যদি অর্থনীতি সম্পর্কে একজোড়া খারাপ খবর একই সঙ্গে বাজার না-পেত। পতনে জোরালো শক্তি জুগিয়েছে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং শিল্পোৎপাদন হ্রাসের খবর। অক্টোবর উৎসবের মাস। এই মাসে শিল্পোৎপাদনে পতন বড় ধাক্কা দিয়েছে শেয়ার বাজারকে। অক্টোবরে শিল্পোৎপাদন কমেছে ১.৮ শতাংশ। অর্থনীতির পুনরুত্থানের যে-ফানুস উঠেছিল বাজারে, তা হঠাৎই চুপসে যায় এই খবরে। পাশাপাশি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ খারাপ খবর হল খুচরো বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। নভেম্বরে তা বেড়ে পৌঁছেছে ১১.২৪ শতাংশে, অক্টোবরে যা ছিল ১০.১৭ শতাংশ। কৃষি উৎপাদন বাড়া সত্ত্বেও শীতের মরসুমে এই ধরনের মূল্যবৃদ্ধি যথেষ্ট আশঙ্কার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এর ফলে আর এক দফা সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। সেই রকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন স্বয়ং। রেপো রেট ২৫ শতাংশ বেড়ে ৮ শতাংশে পৌঁছতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৮ ডিসেম্বর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণনীতির পর্যালোচনা করবে। এর আগেই অবশ্য হাতে এসে যাবে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান। ঋণের উপর সুদ বাড়ার প্রভাব আদৌ ভাল হবে না বেশ কিছু শিল্পের জন্য, বিশেষ করে বাড়ি, গাড়ি এবং অন্যান্য ঋণনির্ভর শিল্পের ক্ষেত্রে।
এই সব কারণে অনেকটাই ভাটা পড়েছে শেয়ার বাজারের উচ্ছ্বাসে। খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার এতটা উঁচু হওয়ায় তার প্রভাব থাকবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রস্তাবিত ইনফ্লেশন ইন্ডেক্স বন্ডের সুদের উপরও। এই বন্ড সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও ইস্যুর তারিখ এখনও ঘোষণা করা হয়নি। ডিসেম্বরে ইস্যু করা হলে সুদের হার আকর্ষণীয় হবে বলে আশা করা যায়।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটলে আবার তার ধাক্কা পৌঁছবে বন্ড বাজারে। এতে বাজারে নথিবদ্ধ বন্ডের দাম ফের নেমে আসার সম্ভাবনা থাকবে। ফলে আরও কমে আসতে পারে বিভিন্ন বন্ড ফান্ডের ন্যাভ্। অন্য দিকে সুদ বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে ব্যাঙ্ক আমানতে। এই পরিস্থিতিতে টাকা রাখার কথা ভাবা যেতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডের লিক্যুইড অথবা আল্ট্রা শর্ট টার্ম ফান্ডে। করদাতাদের কাছে জায়গাটি বিশেষ আকর্ষণীয়। এখান থেকে ৮.৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত আয় আসতে পারে বর্তমান পরিস্থিতিতে। আয় ডিভিডেন্ড হিসেবে নিয়ে নিলে তা থাকবে পুরোপুরি করমুক্ত। ইউনিট যদি এক বছরের বেশি সময় ধরে রাখা হয় এবং আয় জমে উঠতে দেওয়া হয়, তবে ভাঙিয়ে লাভ হলে তা দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভের মর্যাদা পাবে এবং তার উপর মূল্যবৃদ্ধি-সূচক (কস্ট ইনফ্লেশন ইন্ডেক্স) প্রয়োগ করে করের বোঝা অনেকটাই হালকা করা যায়। এই ধরনের ফান্ডের তহবিল লগ্নি করা হয় ছোট অথবা অতি ছোট মেয়াদের সরকারি ঋণপত্র, উচ্চ রেটিংযুক্ত বন্ড, সার্টিফিকেট অব ডিপোজিট এবং টাকার বাজারের অন্যান্য ছোট মেয়াদের লগ্নিপত্রে। সেই কারণে এই লগ্নিতে ঝুঁকিও অপেক্ষাকৃত কম থাকে। যে কোনও সময়ে বেরিয়ে আসা যায় লিক্যুইড ফান্ড থেকে। শেয়ার বাজার সম্পর্কে বিপরীতমুখী মতামত পাওয়া যাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। প্রথম দলের মতে, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দু’ধরনের অস্থিরতাই এখন প্রবল। কেন্দ্রে যতক্ষণ না একটি স্থিতিশীল সরকার গঠিত হচ্ছে এবং অর্থনীতিতে সত্যিকারের উন্নতির হাওয়া লাগছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এঁরা বড় কোনও আশার কথা শোনাতে চান না। অন্য দলটি মনে করে, সাময়িক ধাক্কা খেলেও আগামী দিনে অর্থনীতি এগোবে। দাম কমলে সুদও এক সময়ে কমবে। অব্যাহত থাকবে বিদেশি লগ্নি-প্রবাহ। এই সব সম্ভাবনায় ভর করে কোনও কোনও আশাবাদী মনে করেন, ২০১৪ সালের শেষের দিকে সেনসেক্স ২৪ হাজারে পৌঁছে গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
|