যেখানে গড়ে ওঠার কথা বাস টার্মিনাস, সেখানে জমছে আবর্জনার স্তূপ। এলাকার মানুষ সেখানেই ধান শুকোচ্ছেন, পাশে আবার চরছে গরু-ছাগলও। উল্টো দিকে বাস টার্মিনাস না থাকায় সঙ্কীর্ণ রাস্তার উপরেই যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকছে বাস। পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তাতেই রাখতে বাধ্য হচ্ছেন পর্যটকেরাও। সব মিলিয়ে তীব্র যানজটে জেরবার হচ্ছেন মানুষ।
এই চিত্র রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র তারাপীঠের। অভিযোগ, শিলান্যাসের পরে চার বছর কেটে গেলেও তারপীঠে নির্ধারিত বাস টার্মিনাস গড়ার কাজ শেষ হয়নি। মাঝপথেই তার কাজ থমকে গিয়েছে। আর তারই জেরে এমনিতেই পুণ্যার্থীদের গাড়ির কারণে ভিড়ে ঠাসা তারাপীঠে যান নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সমস্যায় পড়ছেন রামপুরহাট-সাঁইথিয়া রাস্তার নিত্যযাত্রী থেকে এলাকার মানুষ, এমনকী দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা মায়ের দর্শনে আসা অগুনতি মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বাস টার্মিনাসের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। তা না হলে তারাপীঠ ঘুরতে এসে পুণ্যার্থীরা বেকায়দায় পড়বেন। এলাকাবাসীরও সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না। অন্য দিকে, তারাপীঠে গাড়ি নিয়ে আসা পুণ্যার্থীরা দাবি করছেন একটি পার্কিং লটের। জেলা পরিষদের বিরোধী সদস্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের মান্নান শা-র অভিযোগ, “আগের সরকার প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ করেছিল। কিন্তু দু’বছর হয়ে গেলেও নতুন সরকার এখনও বাস টার্মিনাসের কাজ শেষ করতে পারেনি।” এই পরিস্থিতিতে বীরভূমের পর্যটন ব্যবসার দিক থেকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্রের প্রতি অবহেলার অভিযোগ উঠছে জেলা ও রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধেই। |
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রামপুরহাট-সাঁইথিয়া সড়কের পাশে মাড়গ্রাম থানার তারাপুর মৌজায় ফুলিডাঙা লাগোয়া ০.৯ একর জায়গায় তারাপীঠ বাস টার্মিনাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তৎকালীন পরিবহন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তার শিলান্যাসও করেছিলেন। ২০১০-১১ আর্থিক বছরে প্রকল্পটির জন্য ৫৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দও করা হয়। একই বছরে রাজ্য পরিবহন দফতর বাস টার্মিনাস গড়ার কাজ শুরু করতে রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতিকে ৩২ লক্ষ টাকা দেয়। “ওই টাকায় বাস টার্মিনাসের জমিতে মাটি মাটি ভরাট করে ঢালাই করার কাজটি শেষ করা হয়। পাশাপাশি শেষ হয়েছে একটি নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজও,” বলছেন রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও অণির্বাণ সাহু। কিন্তু তার পরে আর কিছুই হয়নি। এখনও বাকি রয়েছে শৌচাগার, বিদ্যুদয়ন, প্যাসেঞ্জার শেড, ফুটপাথ তৈরির মতো কাজ। অসম্পূর্ণ বাস টার্মিনাস এলাকাবাসী নানা কাজে ব্যবহার করছেন। এমনকী, সেখানে ইট বালিও, মজুদ রাখা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, নতুন সরকার আসার পরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য পরিবহন দফতর রামপুরহাট ২ ব্লককে ওই কাজের জন্য ১৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু ব্লক প্রশাসনের দাবি, পদ্ধতিগত ত্রুটির জন্য ওই টাকা এখনও মেলেনি। যার ফল, বাস টার্মিনাসটি এখনও গড়ে ওঠেনি।
এ দিকে, গোটা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে তারাপীঠে। সামনে পৌষ মাস। সাধারণত ওই সময় তারা মায়ের দর্শনের জন্য তীর্থযাত্রীদের ভিড় বাড়ে। এ ছাড়া শান্তিনিকেতনে পৌষ মেলা উপলক্ষে আগত পর্যটকেরাও এক বার তারাপীঠে ঘুরতে আসেন। ফলে ওই সময় তারাপীঠে নিত্যযানের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট বাসের সংখ্যাও বহু গুন বেড়ে যায়। তার জেরে প্রবল যানজটের আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা গুরুশরণ বন্দোপাধ্যায়, তারাময় মুখোপাধ্যায় বলছেন, “জায়গা না পেয়ে তারাপীঠের প্রবেশ পথ আটলা মোড়ে, পুলিশ ফাঁড়ি, শিবসাগর পাড়, পাল পাড়া এই সমস্ত জায়গাগুলিতে নানা জায়গায় সারা দিন ধরে বাস দাঁড়িয়ে থাকে। তার উপরে রয়েছে অটো ও অন্য যানবাহনের দৌরাত্ম্য। অবিলম্বে বাস টার্মিনাসের কাজ শেষ না হলে যানজটের ভোগান্তি আরও বাড়বে।” এলাকার আর এক বাসিন্দা পুলক চট্টোপাধ্যায়ের আবার দাবি, বাস টার্মিনাস না থাকার জন্যই তারাপীঠ-কলকাতা রুটের সরকারি বাস চলাচল বহু দিন ধরে বন্ধ। ওই রাস্তা দিয়েই রামপুরহাট-সাঁইথিয়া, রামপুরহাট-কান্দি, রামপুরহাট-বুধিগ্রাম, রামপুরহাট-রামনগর প্রভৃতি রুটের বাস যাতায়াত করে। বীরভূম জেলা বাসমালিক সমিতির রামপুরহাট শাখার সহ-সম্পাদক মহম্মদ ইয়ার সেলিমের দাবি, “তারাপীঠে ঘুরতে আসা ট্যুরিস্ট বাস আর ব্যক্তিগত গাড়িগুলি সারা দিন রাস্তার নানা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে ওই সঙ্কীর্ণ রাস্তায় যানযট লেগেই থাকে।”
দীর্ঘ দিন ধরে পরিবার নিয়ে কখনও নিজের গাড়িতে কখনও বা ট্যুরিস্ট বাসে তারাপীঠে আসেন কলকাতার মহেশতলার বাসিন্দা গৌরচন্দ্র ঘোষ। তিনি বলছেন, “তারাপীঠে গাড়ি রাখার জন্য পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। বাধ্য হয়েই আমাদের মতো বহু দূর থেকে আসা পর্যটকদের রাস্তার ধারেই বাস বা গাড়ি পার্ক করতে হয়।” কলকাতার শোভাবাজার থেকে আসা অলোক ভৌমিক আবার বলেন, “তারাপীঠে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় লজে গাড়ি রাখি। কিন্তু সব লজে তো গাড়ি রাখার ব্যবস্থা নেই। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গাড়ি রাস্তাতেই রাখতে হয়।
রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “শুধু মাত্র তারাপীঠই নয়য়, পাহাড়, সমুদ্র, সুন্দরবন, বেলুড় মঠ, দক্ষিণেশ্বর রাজ্যের সমস্ত পর্যটনকেন্দ্র ঘিরেই আমাদের দফতর নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সমস্ত কাজই রূপায়িত হবে।” |