ঝুপড়ি ঘরে বাঁশ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মিলল এক মহিলা ও তাঁর দুই শিশু সন্তানের দেহ। বর্ধমানের কাঞ্চননগরে ওই তিন জনকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। তবে কে বা কারা এর সঙ্গে জড়িত, সে ব্যাপারে অন্ধকারে পুলিশ।
বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগরে দামোদরের বাঁধে একটি টালির চাল দেওয়া মাটির ঘরে ছেলে আশিস (৩) ও মেয়ে ঝুমাকে (৫) নিয়ে থাকতেন কবিতা রঙ (৩০) নামে ওই মহিলা। ঘরের দরজায় কোনও পাল্লা নেই। বাঁধের দিকে দেওয়ালও নেই। পুলিশ জানায়, বছর সতেরো আগে রামচন্দ্র রঙ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় কবিতাদেবীর। তাঁদের তিন ছেলেমেয়ে। কিন্তু বছরখানেক আগে পেশায় খেতমজুর রামচন্দ্র এলাকারই অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে আলাদা থাকতে শুরু করেন।
কবিতাদেবীর বড় ছেলে, বছর চোদ্দোর কৌশিক এলাকার এক জনের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ওই মহিলা আর্থিক সঙ্কটে ছিলেন। রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে আমাদের সন্দেহ, তিন জনকে খুন করা হয়েছে। তাই একটি খুনের মামলাও হয়েছে।” সন্তানদের খুনের পরে ওই মহিলা আত্মঘাতী হয়েছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শিশু দু’টির দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকলেও কবিতাদেবীর পা মাটিতে ঠেকে রয়েছে। ঘরের জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড। কবিতাদেবীর আত্মীয় হরেন্দ্রনাথ মাল, সুমিতা মালেদের অভিযোগ, “আমাদেরও সন্দেহ, তিন জনকে খুন করা হয়েছে।” এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর সুমল মিস্ত্রির দাবি, “কবিতাদেবী খানিকটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে জেনেছি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে তাঁর স্বামী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তবে ওই মহিলা আর্থিক সঙ্কটে ছিলেন বলে শুনিনি। তিনি সেলাইয়ের কাজ করতেন। আমরাও মাঝে-মধ্যে তাঁকে সাহায্য করতাম।” স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ মিস্ত্রি বলেন, “রাতে আমরা কোনও আওয়াজ শুনিনি। সকালে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে অনেকে দেখতে পান, ঘরে তিন জনের দেহ ঝুলছে।” এ দিন খবর পেয়ে এসে ভাইবোন ও মায়ের ঝুলন্ত দেহ দেখে বাকরুদ্ধ কৌশিক। কোনও মতে বলে, “মা আমাদের খুব ভালবাসত। কী ভাবে এমন হল বুঝতে পারছি না।” পুলিশ জানায়, রামচন্দ্রের খোঁজ চলছে। |