গত বছর বইমেলা না হওয়ার আক্ষেপ এ বার প্রাণভরে মিটিয়ে নিচ্ছেন কাটোয়াবাসী। মেলা শুরুর চার দিন পরে বই বিক্রির হার বা মেলার মাঠে ভিড় দেখে অন্তত সে কথাই বলছে। বিকেল হলেই আট থেকে আশির ঢল নামছে মেলায়।
কাটোয়ার কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের মাঠে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ২২তম কাটোয়া বইমেলা। মেলার আসা বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা ও কাটোয়া বইমেলা কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, মেলায় মোগলাই, পেস্ট্রি খেয়ে আড্ডা দিতে নয়, বাড়ি ফেরার সময় নতুন বই হাতেই ফিরছেন বেশিরভাগ মানুষ। |
কাটোয়া বইমেলা কমিটি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে শেষ বইমেলায় সাত দিনে ২০ লক্ষ টাকার উপর বই বিক্রি হয়েছিল। এ বার প্রথম তিন দিনেই মেলায় বইপ্রেমীদের সংখ্যা দেখে উদ্যোক্তাদের আশা বিক্রি আরও বাড়বে। কমিটির অন্যতম সম্পাদক তুষার পণ্ডিত বলেন, “অন্যান্যবার মেলার দ্বিতীয় দিন থেকে বই বিক্রি শুরু হয়। এ বার প্রথম দিন থেকেই বিক্রি হচ্ছে। আশা করি, এ বার সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে।” প্রকাশনী সংস্থাও এ বছর অনেক বেশি। আনন্দ-সহ কলকাতার একাধিক নামী প্রকাশনী সংস্থা স্টল দিয়েছে মেলায়। রয়েছে একাধিক লিটল ম্যাগাজিনের স্টলও। এমনকী কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগারও বইমেলার মাঠে আলাদা স্টল করেছে। গ্রন্থাগারিক রামকৃষ্ণ সিংহ বলেন, “আরও পাঠক টানতে এবং পাঠকদের সুবিধার জন্য চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে এসেছি আমরা। পাঠক যাতে বইমেলার মাঠ থেকেই মহকুমা গ্রন্থাগারের সদস্য হতে পারেন সে ব্যবস্থাও রয়েছে।” এর ফলে সাধারণ পাঠককে বইমুখী করে তোলা যাবে বলে তাঁর আশা।
কাটোয়ার ইতিহাস চর্চার দুই পথিকৃৎ নিবারণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও হরিপদ চক্রবর্তীর নামে এ বছর বইমেলার প্রবেশদ্বার নামাঙ্কিত করা হয়েছে। বইমেলা কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া শহর থেকে প্রকাশিত প্রসূন পত্রিকায় নিরাবণবাবু ১৯০৩ সালে ধারাবাহিক ভাবে কাটোয়ার ইতিহাস নিয়ে লিখতেন। পরবর্তীতে অর্থাৎ ষাটের দশকে কাটোয়া মহকুমার ইতিহাস সামনে নিয়ে আসেন কাশীরাম দাস বিদ্যায়তনের তৎকালীন সহকারী প্রধান শিক্ষক হরিপদ চক্রবর্তী। কাটোয়া বইমেলা কমিটির এক প্রবীণ সদস্য, কাটোয়া কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক দিলীপ সাহা বলেন, “এ রকম দু’জন আঞ্চলিক ইতিহাসবিদকে সম্মান জানাতে পেরে আমরা গর্বিত।”
মেলার মাঠে এক স্টল থেকে আরেক স্টলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অঙ্গীতা রায়বর্মন। ঘুরছিলেন সত্তোরোর্ধ্ব শিখারানি দাসও। তিনি বলেন, “গত বছর বইমেলা না হওয়ায় শীতকালটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা কেটেছিল। এ বার বইয়ের সম্ভার অনেক বেশি। ছোটদের জন্যও অনেক মজাদার বই রয়েছে।” বড় প্রকাশনী সংস্থার পাশাপাশি লিটল ম্যাগাজিনের বিক্রিও ভালই হচ্ছে। কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই কাটোয়া বইমেলায় আসি। বিক্রি সেভাবে হয় না বললেই চলে। তবে এ বছর বিক্রির হার বেশ ভাল।” বইয়ের স্টল ছাড়া মাঠের একাংশ জুড়ে রয়েছে ফুচকা থেকে পেস্ট্রির নানারকম মুখরোচক খাবারের দোকান। একটি দোকানের মালিক নিতাই সাহা জানান, বিক্রিবাটা ভালই চলছে। অর্থাৎ শীতের সন্ধ্যায় বই, আড্ডা, খাওয়াদাওয়ায় জমে উঠেছে কাটোয়া বইমেলা। |