পানাগড় থেকে প্রতি দিন মোটরবাইকে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে দুর্গাপুর আসেন এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। আশপাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়া বড় গাড়ি, বাস, লরি কাটিয়ে জাতীয় সড়ক ধরে মোটরবাইকে নিত্য যাতায়াত কতটা বিপজ্জনক, বিলক্ষণ জানেন তিনি। অথচ উপায় নেই। অন্য ভাবে দুর্গাপুরে পৌঁছতে হলে ঘুরপথে যেতে হবে। সেই রাস্তা আবার খারাপ, মোটরবাইকের গতিও বাড়ে না।
চিন্ময়বাবুর মতোই জাতীয় সড়ক ধরে নিয়মিত যাতায়াত করেন কয়েক হাজার মোটরবাইক আরোহী। আইন অনুযায়ী, চার লেনের জাতীয় সড়ক ধরে মোটরবাইকে যাতায়াত বেআইনি। কিন্তু বিকল্প কোনও উপায় না থাকায় তাঁদের জাতীয় সড়ক ধরেই যাতায়াত করতে হয় বলে জানান আরোহীরা। শুধু মোটরবাইক নয়, দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গেই জাতীয় সড়ক ধরে দৈনিক যাতায়াত করে শত শত রিকশা, ভ্যান, এমনকী সাইকেলও। ফলে, বিপদের ঝুঁকি থেকে সব সময়েই। |
নিয়ম নেই। তবু মোটরবাইক থেকে ভ্যান, চলছে সবই।—নিজস্ব চিত্র। |
২ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ করে চার লেন করার কাজ শেষ হয় প্রায় বছর দশেক আগে। ঝকঝকে রাস্তা পাওয়ায় যানবাহনের গতি এক ধাক্কায় বেড়ে যায় বহুগুণ। বাড়ে যানবাহনের সংখ্যাও। কিন্তু এই জাতীয় সড়কে কোনও ‘সার্ভিস রোড’ (পাশে ছোট রাস্তা) না থাকায় ঘণ্টায় প্রায় একশো কিলোমিটার বেগে চলা গাড়ির লেন দিয়েই যাতায়াত করে মোটরবাইক এবং সাইকেল ও রিকশা। ইদানীং অনুমোদনহীন মোটরভ্যানও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জাতীয় সড়কে। অথচ, নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সড়ক ধরে এ সব যানের চলাচল নিষিদ্ধ। ফলে, দুর্ঘটনার প্রবণতাও উত্তরোত্তর বাড়ছে।
দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের প্রাক্তন সুপার মিহির নন্দী জানান, এই হাসপাতালে মাসে গড়ে ২০ জন সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ভর্তি হন। তার মধ্যে অর্ধেকই দু’চাকার যান নিয়ে দুর্ঘটনার শিকার। তিনি জানান, দুর্গাপুরের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ধরলে মাসে গড়ে ৫০ জন দু’চাকার যানের দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। অধিকাংশই দুর্ঘটনার শিকার হন সদাব্যস্ত জাতীয় সড়কে। ইস্টার্ন ইন্ডিয়া অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুর শাখার কর্মকর্তা সমীর বসু জানান, জাতীয় সড়কে কম গতির যান চলাচলের জন্য সার্ভিস রোড থাকা খুবই জরুরি। ছয় লেন হওয়ার পরে জাতীয় সড়কে গাড়ির গতি ও সংখ্যা আরও বাড়বে। তখন যদি সার্ভিস রোড না থাকে তাহলে মোটরবাইক বা রিকশা আরোহীদের পক্ষে জাতীয় সড়কে চলাচল আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, “সার্ভিস রোড না থাকলে আইন ভাঙার খেলা চলবেই। দুর্ঘটনা এড়ানো মুশকিল।”
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ঝাড়খণ্ডের বারোয়াড্ডা থেকে পানাগড় পর্যন্ত প্রায় ১২৩ কিলোমিটার রাস্তা ছয় লেন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই প্রকল্পে সার্ভিস রোড রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সার্ভিস রোড থাকলেই সকলে যে তা ব্যবহার করেন, তা-ও ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন সমীরবাবু। তিনি বলেন, “বর্ধমানের পালশিট থেকে ডানকুনি পর্যন্ত টানা সার্ভিস রোড রয়েছে। অথচ সেখানেও জাতীয় সড়ক ধরে অনেককে মোটরবাইক নিয়ে যাতায়াত করতে দেখা যায়।” তাই সচেতনতা গড়ার উপরে জোর দেওয়া উচিত বলে তাঁর মত। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে এক আধিকারিক জানান, এই ধরনের সচেতনতা তৈরির শিবির মাঝে-মাঝে অনুষ্ঠিত হয়। তেমন শিবিরের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান তিনি। |